বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হাশরের ময়দানে সকল মানুষ উত্থিত হবে। সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহপাকের অনুমতি ব্যতীত কেউ টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করতে পারবে না এবং আল্লাহ যা জিজ্ঞেস করবেন, তার সঠিক ও যথার্থ উত্তর দিতে হবে। সেখানে ছল-চাতুরী এবং ফাঁকি ও প্রতারণার কোনো সুযোগ থাকবে না।
মানুষ হাশরের ময়দানে বস্ত্রহীন অবস্থায় উত্থিত হবে। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, হাশরের দিন মানবজাতিকে খালি, উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এ অবস্থায় তো নারী-পুরুষ পরস্পরের দিকে তাকাবে। রাসূলুল্লাহ সা. উত্তর দিলেন, হে আয়েশা, সে দিনের অবস্থা এত ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর হবে যে, (নারী-পুরুষ) একে অপরের দিকে তাকাবার কোনো চিন্তাই করবে না। (সহীহ মুসলিম : ৪/২৮৫৯)।
আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদের ইচ্ছা করল তাদের ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। (সূরা যুমার : আয়াত ৬৮)। এই আয়াতে কারিমায় সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, ভয়ঙ্কর হাশরের দিনে মানুষেরা দাঁড়িয়ে থাকবে।
এদিক-সেদিক তাকানোর চিন্তা তাদের মনে উদয় হবে না। সকলেই ভীত, সন্ত্রস্ত ও বিহ্বল হয়ে পড়বে। আর কাফের-অবিশ্বাসীদের অধঃমুখে হাঁটিয়ে হাশরের ময়দানে হাজির করা হবে। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, একদা জনৈক ব্যক্তি আরজ করল ইয়া রাসূলুল্লাহ সা., কিয়ামতের দিন কাফেরদের কিভাবে মুখের ওপর করে হাঁটিয়ে একত্রিত করা হবে? উত্তরে তিনি বললেন, যিনি দুনিয়াতে মানুষকে দু’পায়ে চালিয়েছিলেন, তিনি কি হাশরের দিন তাকে মুখের ওপর ভর করে চালাবার ক্ষমতা রাখেন না? (সহীহ বুখারী ৮/৬৫৩২; সহীহ মুসলিম : ৪/২৮০৬)।
হাশরের ময়দানে মুমিনদের অবস্থা এবং কাফেরদের অবস্থার কথা অপর একটি হাদিসে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। হযরত সাফওয়ান ইবনে মুহারিজ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হযরত ইবনে উমার রা. তাওয়াফ করছিলেন, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি তার সম্মুখে এসে বলল, হে আবু আবদুর রহমান, অথবা বলল, হে ইবনে ওমর রা. আপনি কি রাসূলুল্লাহ সা. থেকে (হাশরের দিন আল্লাহ তায়ালা এবং মুমিনদের মধ্যকার) গোপন আলোচনা সম্পর্কে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি যে, (হাশরের দিন) মুমিনকে তার নৈকট্য দান করা হবে।
হিশাম বলেন, মুমিন নিকটবর্তী হবে, এমনকি আল্লাহ তায়ালা তাকে স্বীয় পর্দায় ঢেকে নেবেন এবং তার নিকট হতে তার গোনাহসমূহের স্বীকারোক্তি নেবেন। (আল্লাহপাক জিজ্ঞেস করবেন) অমুক গোনাহ সম্পর্কে তুমি জান কি? বান্দা বলবে, হে আমার পরওয়ারদেগার, আমি জানি। এভাবে দু’বার বলবে। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন রেখেছিলাম। আর আজ তোমার পাপ ক্ষমা করে দিচ্ছি। তারপর তার নেক আমালনামা গুটিয়ে নেয়া হবে। আর অন্য দলকে (কাফিরদের) সকলের সামনে ডেকে বলা হবে, এরাই সে লোক যারা আল্লাহপাক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল। (সহীহ বুখারী : ৬/৪৬৮৫)।
আর হাশরের ময়দানে বনি আদমকে পাঁচটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এই প্রশ্নগুলোর সদুত্তর যারা দিতে পারবে তারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যাবে। আর যারা এর যথাযথ উত্তর দিতে অক্ষম হবে, তারা অবিশ্বাসী কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। এতদ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে মাসউদ রা. রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, (হাশরের দিন) মানুষের পা একবিন্দু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিকট এই পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা না হবে। এক. নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে? দুই. যৌবনেরে শক্তি সামর্থ্য কোথায় ব্যয় করেছে? তিন. ধন সম্পদ কোথা হতে উপার্জন করেছে? চার. অর্জিত ধন সম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে? পাঁচ. এবং (দীনের) যতটুকু ইলম অর্জন করেছে সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে? (জামে তিরমিযী : ৪/২৪১৬)।
বস্তুত বনি আদমের জীবনকাল আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এ নেয়ামতের যথার্থ ব্যবহার করা মানুষ মাত্রেরই কর্তব্য। আর সার্বিক জীবনকালের মধ্যে যৌবনকাল মহামূল্যবান সময়। এ সময়ের সদ্ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। আর যৌবনকালই ধন সম্পদ অর্জনের মোক্ষম উপযোগী। তবে সম্পদ অর্জন ও ব্যয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন না করলে আফসোস করা ছাড়া কপালে কিছুই জোটে না। আর দীনি ইলম মোতাবেক আমল করা অবশ্য কর্তব্য। আমলের খাতা যাদের শূন্য, তাদের চেয়ে হতভাগ্য আর কেউ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।