Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

হাত ধুতে বলায়!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

উনিশ শতকের আগেও জীবাণু সম্পর্কে সামগ্রিক কোনও ধারণা ছিল না আর হাসপাতালগুলোকে মনে করা হতো ‘মৃত্যুর ঘর’। তেমনই সময়ে হাঙ্গেরির চিকিৎসক ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ প্রথম শনাক্ত করেন যে, পরিচ্ছন্নতা হলো জীবন বাঁচানোর উপায়। কিন্তু এই তথ্য প্রতিষ্ঠা করতে তাকে ব্যাপক মূল্য দিতে হয়েছিল।
উনিশ শতকের হাসপাতালগুলি ছিল সংক্রমণের কেন্দ্র এবং অসুস্থ ও মৃত্যুপথযাত্রীদের সেখানে কেবল সেকেলে চিকিৎসাই দেয়া হতো। চিকিৎসকদের তাদের হাত কিংবা চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ধোয়ার ঘটনা ছিল বিরল। এবং চিকিৎসকরা যেমন নোংরা-অপরিষ্কার থাকতেন, অস্ত্রোপচার কক্ষগুলোও তেমনই ছিল। ফলাফলস্বরূপ, হাসপাতালগুলোর পরিচিতি ছিল ‘মরণ ঘর বা মৃত্যুর ঘর’ হিসেবে। সেই বিশ্বে যখন জীবাণু কি সে সম্পর্কে ধারণা নেই, সেখানে ইগনাজ স্যামেলওয়াইজই প্রথম বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা শুরু করেন। হাঙ্গেরিয়ান এই চিকিৎসক ১৮৪০ সালে ভিয়েনাতে, মেটার্নিটি ওয়ার্ডগুলোতে মৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে হাত ধোয়ার প্রচলন করার উদ্যোগ নেন। এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ব্যর্থ একটি উদ্যোগ, কারণ যেহেতু তিনি সহকর্মীদের দ্বারা অসহযোগিতার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি মায়েদের ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান।

তিনিই প্রথম হাসপাতালে ক্লোরিনের সাহায্যে হাত ও উপকরণ জীবাণুমুক্ত করার জন্য বেসিন চালু করেন। যেসমস্ত ডাক্তারেরা ময়নাতদন্ত কক্ষ থেকে প্রসব কক্ষে যেত তাদের রোগীদের সেবা দেয়ার আগে অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেয়া হলো। এর ফলে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ডে মৃত্যুর হার কমে ১৮৪৮ সালের মধ্যে প্রসবের ক্ষেত্রে ১২.৭ শতাংশে নেমে আসে। যদিও তার সহকর্মীরা এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত হয়নি যে, পিউপেরাল জ্বরের ঘটনা মৃতদেহের সংস্পর্শ থেকে আসা সংক্রমণের কারণে ঘটছে। তারা এজন্য স্যামেলউইজের সমালোচনা করেন। এই বিষয়ে প্রকাশ করা একটি বইয়ের প্রচুর নেতিবাচক পর্যালোচনার পর, স্যামেলউইজ তার সমালোচকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং যেসমস্ত চিকিৎসক হাত পরিষ্কার করতেন না তাদেরকে ‘ঘাতক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

অস্ত্রোপচারের আগে ক্লোরিনযুক্ত পানিতে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিতেন স্যামেলইউজ। সহকর্মীদের অনীহা ও সমালোচনায় তার ক্রোধ বাড়তে থাকে। ১৮৬১ সাল নাগাদ তার আচরণে অসঙ্গতি দেখা দেয় এবং চার বছর পরে সেমেলউইজকে মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এবং এরপর তাকে অন্ধকার সেলের ভেতর আটকে রাখা হয়। সেখানে তার ডান হাতের ক্ষত থেকে সংক্রমণ হয়। এবং দুই সপ্তাহ পরেই মারা যান ৪৭ বছর বয়সী স্যামেলউইজ। সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ