হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোহাম্মদ আবদুল গফুর
দেশে সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। প্রথম তিন দিনের অভিযানেই গ্রেফতারের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি ছাড়িয়ে যায় বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি করেছে। এখন নিশ্চয়ই গ্রেফতার সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। সম্প্রতি বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা বেড়ে যাওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা। এর পরপরই দেশে শুরু হয় এ জঙ্গিবিরোধী অভিযান।
জঙ্গিবিরোধী এ অভিযানে এ পর্যন্ত মোট কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। হয়নি কেন, তা সরকারই ভালো জানে। তবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে মনে হয় এ সংখ্যা দশ হাজারের কম তো নয়ই, আরও অনেক বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা। অল্প সময়ের মধ্যে এ অভিযান চলাতে কারাগারে আটক বন্দিদের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে কারা কর্তৃপক্ষকেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাব-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কারাগারে আটক বন্দিদের দুর্ভোগের যে বিবরণী উঠে এসেছে তা উদ্বেগজনক। এরই মধ্যে কাশিমপুরের কারাগারে এক বন্দির রক্তাক্ত জখম হওয়ার খবর জানা গেছে। জানা গেছে, যশোরে পুলিশ হেফাজতে থাকা এক যুবকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরও।
জঙ্গিবিরোধী আকস্মিক এ অভিযানে হাজার হাজার গ্রেফতার হলেও চলমান অভিযানে গ্রেফতার বাণিজ্য হচ্ছে না বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। দৈনিক ইনকিলাব-এর গত সোমবারের সংখ্যা থেকে আমরা এ আশ্বাস বাণী জানতে পেরেছি। গ্রেফতার-বাণিজ্য পুলিশদের এক প্রকার দুর্নীতি। তাতেসংশ্লিষ্টদের নিকট থেকে টাকা (ঘুষ) নিয়ে সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে গ্রেফতার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সাম্প্রতিক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এরকম কোনো দুর্নীতি ঘটছে না বলে যে আশ্বাস দিয়েছেন আইজিপি মহোদয়, তাতেও জনগণের উদ্বেগ প্রশমনের কোনো নিশ্চয়তা মিলছে না। কারণ জনগণ গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে, কী চলছে না, তা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছে না। তাদের চিন্তা এ আকস্মিক অভিযানে অপরাধের সাথে যুক্ত নয় এমনসব লোকদের হয়রানির শিকার হওয়া নিয়ে। কারণ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নামে সরকারি বাহিনী যদি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েই তাদের কর্তব্য সমাধা হচ্ছে বলে মনে করে, তা হলে দেশে জঙ্গি সমস্যার সমাধান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
একটি বাংলা দৈনিকে গত সোমবারের সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘২৪ ঘণ্টায় ৪৮ জঙ্গিসহ গ্রেফতার ২১৩২।’ এর অর্থ ৪৮ জন জঙ্গি ছাড়া অন্যদের গ্রেফতারের কারণ ছিল তারা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়া। এভাবে জঙ্গি না হয়েও শুধুমাত্র সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় তাদের গ্রেফতারের দ্বারা সরকারের জঙ্গিবিরোধী অভিযান সফল হওয়ার কথা নয়। বরং এর ফলে সরকারের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের আন্তরিকতা নিয়েই জনমনে সংশয় সৃষ্টি হতে বাধ্য। সরকার যদি জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে এভাবে সরকারের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান চালিয়েই যায়, তাহলে প্রকৃত জঙ্গিরা আড়ালে থেকে তাদের শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধিরই সুযোগ লাভ করবে। অন্যদিকে এর ফল হবে জঙ্গিবিরোধী এ অভিযান জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এতে প্রকৃত জঙ্গিদের বিরাট অংশ অধরা থেকে যাওয়ায় দেশে জঙ্গি সমস্যার উত্তরোত্তর অবনতিই ঘটবে।
এবার বর্তমান সরকারের আমলে আকস্মিকভাবে এই জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রয়োজন কেন বড় হয়ে দেখা দিল সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা যেতে পারে। আমাদের দেশে একশ্রেণির নেতানেত্রী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা যতটাই অপছন্দ করুন দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কিন্তুগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গভীরভাবে বিশ্বাসী। উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিন পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশ নামের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রটির অভ্যুদয়ের ইতিহাস পাঠ করলে জানা যায়, এদেশের অতীত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুটি পরিবর্তনের পেছনে ছিল দুটি সুদূরপ্রসারী গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন। এর একটি ছিল ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচন, যার মাধ্যমে জনগণ বৃটিশ আমলেরঅখ- ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের মর্মবাণী অনুসারে উপমহাদেশের মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র পরিণত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। পরে অবশ্য মুসলিম লীগের আইন সভার সদস্যদের দিল্লি সম্মেলনে আপাতত উভয় অঞ্চল মিলে একটি (পাকিস্তান) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা লাভ করি।
দ্বিতীয় যে সাধারণ নির্বাচন আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের সূচনা করে, সেটি ছিল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, যার মাধ্যমে আমরা ঐতিহাসিক ছয় দফার পক্ষে একচেটিয়া ভোট দিয়ে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিভূমি রচনা করি। ছয় দফার চেতনাকে পশু বলে ১৯৭১ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া-টিক্কা জুটি ধ্বংস করে দিতে উদ্যত হলে জনগণ বাধ্য হয়ে মরনপন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ৯ মাসের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলে। যে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক অবদান ছিল, সেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আমলেই গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরে দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটিমাত্র সরকারি দল রেখে দেশে একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থা কায়েম করা হলে জনগণ মনে মনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। জনগণের এই ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে একদল তরুণ সামরিক কর্মকর্তা সামরিক ক্যুর মাধ্যমে এককালের অসাধারণ জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করলেও জনগণ সেদিন এর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
আমাদের দুর্ভাগ্য, পরবর্তীকালে বহু ঘটনার মাধ্যমে এদেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও একপর্যায়ে একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে বসেন। সেদিন দেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা জেনারেল এরশাদের এই অসাংবিধানিক অপকর্মের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বসেন সম্ভবত এ বিবেচনায় যে, ওই উৎখাত হওয়া নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। বলাবাহুল্য, শেখ হাসিনার ঐ কাজ অর্থাৎ নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেলের প্রতি সমর্থন দান তাঁর গণতন্ত্র-প্রীতির প্রমাণ বহন করে না।
এখনও জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানোর নামে দু-চারটা জঙ্গি গ্রেফতারের পাশাপাশি আওয়ামী সরকার প্রধানত যেভাবে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার চালিয়ে যাচ্ছে তাতে জঙ্গি সমস্যার তো সমাধান হবেই না, দেশে জঙ্গি সমস্যার আরও অবনতি ঘটবে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। কারণ দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আদর্শ কার্যকর না থাকলে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ যে বৃদ্ধি পায়, তা ইতিহাসের সাক্ষ্য। আজও বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, যে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যত বেশি কার্যকর, সে দেশে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের উদ্ভবের ঘটনা তত বেশি কম। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
গণতন্ত্র শুধু সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ প্রভৃতি সমস্যার প্রতিষেধকই নয়, দেশকে সুসংহতভাবে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্যও গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের একশ্রেণির নেতানেত্রী ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতি অন্ধ সমর্থনদানে অতি উৎসাহী। অথচ অসংখ্য বর্ণ, ধর্ম, ভাষা ও গোত্রে বিভক্ত জনগোষ্ঠীর ভারত কীভাবে আজও সংহতি বজায় রেখে উত্তরোত্তর উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে শিক্ষা নিতে আগ্রহী নন। অসংখ্য সমস্যার মোকাবেলা ভারত যে ক্রমেই উন্নতি করে যাচ্ছে তার প্রধান কারণ ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগণ গণতন্ত্রে গভীরভাবে বিশ্বাসী।
বাংলাদেশের জনগণও গভীরভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কিন্তু দুঃখের বিষয় এদেশের একশ্রেণির নেতানেত্রী গণতন্ত্রকে যমের মতো ভয় করেন। প্রকৃত গণতন্ত্রে জনগণের স্বাধীন রায়ের মাধ্যমে দেশের নেতা নির্বাচিত হওয়ার কথা। গণতন্ত্রকে কার্যকর দেখতে চাইলে দেশে নিয়মিত ব্যবধানে নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে পাকিস্তান আমলে তো নয়ই, বাংলাদেশ আমলেও বারবার গণতন্ত্র তার অগ্রযাত্রার পথে হোঁচট খেয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে কীভাবে প্রথম সরকারের আমলেই গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে কিভাবে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করা হয় তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর বহু দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ কীভাবে একটি নির্বাচিত সরকারকে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে বসেন, সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতৈক্যের ভিত্তিতে একটি নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। আরো সিদ্ধান্ত হয় যে,ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ।
ওই নির্বাচনে নিজ ভোট কেন্দ্রে ভোটদানের পর আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতাকালে একপর্যায়ে বলেন, আমি সব জেলার খবর নিয়েছি। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হয়েছে। আপনারা লক্ষ্য রাখবেন, ভোটে হেরে গিয়ে কেউ যেন আবার ভোট কারচুপি আবিষ্কার না করে। পরে নির্বাচনের পূর্ন ফলাফল প্রকাশিত হলে যখন দেখা গেল, আওয়ামী লীগ নয়, নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি, তখন অবলীলাক্রমে তিনি বলে ফেললেন, নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু হলেও আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে ‘কারচুপি’ হতেই হবে এটাই সম্ভবত আওয়ামী নেত্রীর ধারণা। বলাবাহুল্য, এটাও তার গণতন্ত্রপ্রীতির প্রমাণ বহন করে না।
আওয়ামী নেত্রী আদৌ যে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়, তার আরো বহু প্রমাণ রয়েছে। এরশাদ-পরবর্তী প্রথম নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করেন এবং শেখ হাসিনা হন বিরোধীদলীয় নেত্রী। ওই খালেদা সরকারের আমলে প্রধানত তদানীন্তন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দাবির মুখেই সংবিধানে বাংলাদেশের বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিধান বিধিবদ্ধ করা হয়। এই নিয়মে দেশে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে পালাক্রমে উভয় প্রধান দল ক্ষমতাসীন হয়ে দেশ শাসনের সুযোগ লাভ করেন। পরে একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের উপযোগী এই সুন্দর ব্যবস্থা বদলিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনে সেই নির্বাচন বয়কট করে। একটি প্রধান দল বয়কট করায় জনগণ সে নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে ৫ জানুয়ারির একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হয়। তাই বর্তমান সরকারকে নিয়মতান্ত্রিক বিবেচনায় অবৈধ বলা না গেলেও নৈতিক বিবেচনায় অবশ্যই বলতে হয়, বর্তমান সরকার অবৈধ।
সরকার অতি সম্প্রতি যে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে, তাকে অভিনন্দন জানানো যেত, যদি প্রকৃত প্রস্তাবেই তা জঙ্গিবিরোধী অভিযান হতো। এখন দেখা যাচ্ছে, এ কথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দু-একটা জঙ্গি ধরার পাশাপাশি প্রধানত বিরোধীদের হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার করে ।একদলীয় স্বৈরতন্ত্রী শাসন প্রতিষ্ঠাকরতেই সরকার অধিক দেশে আগ্রহী। এ ধরনের পদক্ষেপে জঙ্গি সমস্যার অধিকতর অবনতি ঘটার পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র নিধনযজ্ঞ কার্যকর হওয়ারই অধিক আশঙ্কা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।