Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এনজিওর যাঁতাকলে পিষ্ট দুই প্রাণ

চাঁদপুরে ‘ইভটিজিং’ সইতে না পেরে এক স্কুলছাত্রীসহ আরো ৪

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

যশোরে এনজিওর চাপে দুই ব্যক্তি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুরে ‘ইভটিজিং’ সইতে না পেরে এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভয়নগরে বাবার ওপর রাগ করে অভয়নগরে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া রাণীনগরে গৃহবধূ ও পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে মায়ের ওপর রাগ করে এক স্কুলছাত্রী কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছে। এদিকে পিরোজপুরে মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে তার মা মনিরা বেগমও স্ট্রোক করে মারা গেছেন।

যশোর : এনজিওর পাওনা টাকা দিতে না পারায় যশোরে দুইজন আত্মহত্যা করেছে। নিহতরা হলো- যশোর শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়া নাথপাড়ার রনমী হালদারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রণজিত হালদার (৪৮), যশোর সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে দাউদ হোসেন (৬৫)।

নিহত রনজিতের ভাই বেল্টু হালদার জানান, রনজিত হালদার যশোর শহরের কাঁচামাল কেনাবেচা করে। কাঁচামাল কেনাবেচার ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করেছে। একই সঙ্গে কয়েকটি এনজিওর কাছ থেকে টাকা নেয় সে। পাওনাদাররা তার কাছে পাওনা টাকা ফেরত চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর এনজিওগুলো টাকা আদায় নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে। এ টাকা নিয়ে গত বুধবার সকালে তার স্ত্রী পুষ্পরানীর সঙ্গে ঝগড়া হয় রনজিতের। এরপর সে বাড়ি থেকে চলে যায়। আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। গত বৃহস্পতিবার ভোরে নদীর পাড়ে রনজিতকে ঝুলতে দেখে স্থানীয়রা তার বাড়িতে সংবাদ দেয়। কোতয়ালি থানার এসআই ফেরদৌস লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল প্রেরণ করে। অপরদিকে নিহত দাউদের ছেলে নাসির উদ্দিন জানান, দাউদ হোসেন রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঠিকমত সে এনজিওর টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না। এনজিওর টাকার চাপে মানসিক কষ্টে ভুগছিল দাউদ। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ঘরের মধ্যে কীটনাশক পান করে সে। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জরুরী বিভাগের ডাক্তার অমিয় দাশ জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় সহপাঠীদের ‘ইভটিজিং’ সইতে না পেরে রোকসানা আক্তার দৃষ্টি (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী ‘আত্মহত্যা’ করেছে। গত বুধবার নিজ ঘরের আড়ায় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। এ ঘটনায় সহপাঠী আকাশ ও সাব্বির নামে দুই কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত দৃষ্টি উপজেলার বহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার বাবার নাম আব্দুর রশিদ বেপারী। আটক আকাশ এবং সাব্বিরও উপজেলার বহরী এলাকার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে মতলব দক্ষিণ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

দৃষ্টির পরিবারের অভিযোগ- আকাশ ও সাব্বির দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাতায়াতের সময় দৃষ্টিকে অশ্লীল কথাবার্তা বলে উত্যক্ত করতো। গত মঙ্গলবারও তারা দৃষ্টিকে বিভিন্ন রকম বাজে কথা ও ইঙ্গিত করে। বিষয়টি বাড়ি এসে মাকে জানায় সে। পরে দৃষ্টির বাবা-মা আকাশ ও সাব্বিরের পরিবারের কাছে নালিশ করে বিচারের দাবি করেন। কিন্তু তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে ছেলেদের পক্ষে দাঁড়ান।

গত বুধবারও একই ঘটনা ঘটায় আকাশ ও সাব্বির। এ সময় তারা দৃষ্টিকে ফাঁসি দিয়ে মরে যেতে বলে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের ঘরে এসে আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

দৃষ্টির মা আমাদের সময়কে জানান, তিনি ছাগল চরাতে বাইরে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে মেয়েকে তার ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পান তিনি। এ সময় তিনি চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন ঘরে এসে দৃষ্টিকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার আইচ জানান, আটক আকাশ ও সাব্বিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় রাখা হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

অভয়নগর (যশোর) : পিতার ওপর রাগ করে অভয়নগর উপজেলার আলহেলাল ইসলামী একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার (১৪) গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে নওয়াপাড়ার পালপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাথী আক্তারের পিতা বজলুর রহমান বলেন, সে বিনা কারণেই আত্মহত্যা করেছে। তবে তার মানসিক সমস্যা ছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগরে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে মুনিরা বিবি (৪০) নামের এক গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। এঘটনায় পুলিশ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত অনুমান সাড়ে ১১টায় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। গৃহবধূ রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম সরদার পাড়া গ্রামের আজিজার রহমান সরদারের স্ত্রী ।

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) : পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে মায়ের ওপর রাগ করে রেশমা আক্তার নামে এক স্কুলছাত্রী কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছে। এদিকে মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে তার মা মনিরা বেগমও স্ট্রোক করে মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার উত্তর বালিপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। রেশমার ভাবী শিল্পী আক্তার জানান, এক মাস আগে রেশমার সঙ্গে একই গ্রামের মোতালেব চৌকিদারের ছেলে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। ছেলের মা রেশমাকে আংটিও পরিয়েছে। কিন্তু সে এ বিয়েতে রাজি ছিল না। এনিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিশেষ করে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই তার ঝগড়া হতো। এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে মিনারা বেগম রেশমাকে মাঠ থেকে হাঁস আনতে বলে, কিন্তু সে তা করেনি। তখন মিনারা বেগম রাগ করে রেশমাকে জুতাপেটা করলে সে ক্ষোভে-দুঃখে কীটনাশক পান করে। পরে তাকে উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে রেশমার মৃত্যু হয়। এদিকে রেশমার মৃত্যুর খবর শুনেই তার মা মিনারা বেগম স্ট্রোক করেন, গতকাল সকালে তিনিও মারা যান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এনজিও

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ