Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অংশীজনদের উপেক্ষা এনজিও’র প্রাধান্য

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০৮ এএম

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদেরকে বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এনজিওদের মতামতকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বিষয়টি বিভিন্ন ব্যবসায়ী মহলে আলোচিত ও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের মতে, দীর্ঘদিন থেকে তামাক নিয়ে আন্দোলনকরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বলছে, নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে দীর্ঘদিন থেকে জনস্বার্থে তামাক বিরোধী অন্দোলন করছি। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, কিছু এনজিও তামাক বিরোধী আন্দোলনের নামে বিদেশ থেকে টাকা আনছে। বিদেশ ভ্রমণ করছে। স্বার্থ হাসিলে বা বিদেশীদের কাছে লোক দেখানো সেমিনার, ওয়ার্কশপ করে তা পাঠাচ্ছে। অবার বিদেশীদের দেয়া টাকা শেষ হলে এনজিওদের আন্দোলনও শেষ। এতে আসলে তামাক বিরোধী অন্দোলন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেনা।

সূত্রমতে, তামাক বিরোধী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দাবীর প্রেক্ষিতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ও সর্বশেষ ২০১৩ সালে সংশোধিত হয় এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এই আইনের বিধি চূড়ান্তকরণ করা হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই আইনের অধিকতর সংশোধন আনয়নের লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। যার মধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধকরণ, ধূমপান এলাকার ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য পৃথকভাবে লাইসেন্স গ্রহণ, তামাক কোম্পানিগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচী (সিএসআর) নিষিদ্ধকরণ, ফেরি করে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধকরণ, সিগারেটের শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণসহ বেশ কিছু বিদেশী মদদপুস্ট এনজিও’র স্বার্থ হাসিলের বিতর্কিত প্রস্তাবনাও রয়েছে। যা এই খাতের সঙ্গে জড়িত সকল অংশীজনদের বিপাকে ফেলবে এবং নতুন এই আইন দেশে আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
সর্বশেষ যখন এই আইনটি সংশোধিত হয় তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মতামত নিয়েই তা প্রণয়ন ও পরবর্তীতে বাস্তবায়ন করে। যা প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের দিকেই দেশ অগ্রসর হচ্ছিলো।
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার মোট ৪৪ শতাংশ ধূমপায়ী ছিলো। যা কিনা ২০২২ এ এসে ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিগত ৭-৮ বছরে এই আইন সংশোধন কার্যক্রমে এনজিওদের দৌরাত্ম এতটাই বেড়েগেছে যে, এখন আর তামাক সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন সভায় সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মতামত নেয়া হয় না। ফলে এই আইনের সংশোধনী খসড়াটি হয়েছে সম্পূর্ণ বাস্তবতাবর্জিত। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়িক সংগঠন ছাড়াও তামাক খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের উপেক্ষা করে শুধুমাত্র কয়েকটি বিদেশী মদদপুস্ট এনজিওগুকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এখানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এনজিও ও দাতাগোষ্ঠীর কর্মকর্তারা সরাসরি কমিটিতে যুক্ত হয়ে নীতিমালার খসড়া এবং তা চূড়ান্তকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন যা সরকারের আইন প্রণয়নের পরিপন্থী।
স্বার্থান্বেষী বিদেশি দাতা সংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের প্রদেয় শতকোটি টাকা অর্থায়নে পরিচালিত দেশীয় এনজিওগুলো জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে তাদের স্বীয় উদ্দেশ্যগুলি অর্জনের জন্যই এই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের (দ্বিতীয় সংশোধন) খসড়া তৈরি করেছে। যা দেশের স্বার্থের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, প্রচলিত রফতানি পণ্যসমূহের মধ্যে গত অর্থবছরে প্রায় ৮৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের তামাক রফতানি হয়েছে। এই আইন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথকেও উল্লেখযোগ্যভাবে বাঁধাগ্রস্থ করবে। গত অর্থবছরে সরকার তামাক খাত থেকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া তৈরিতে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া হলে বাস্তবসম্মত নীতি প্রণয়ন হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আহরণে কোনো বাধা থাকবে না।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের বোর্ড অব ট্রাস্টি এম রফিকুল ইসলাম মিলন বলেছেন, দীর্ঘদিন থেকেই তামাক নিয়ন্ত্রণে সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ভূমিকা রাখছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী কার্যক্রমেও তাদের মতামত নেয়া জরুরী। তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সাত শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। অথচ বৈদেশিক সহায়তা পাচ্ছে মাত্র কয়েকটি সংগঠন। যা ৭ থেকে ১০টি হবে। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্ত সংগঠনগুলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজকে আড়ালে রেখে নিজেরা ফায়দা লুটছে। এতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অংশীজনদের উপেক্ষা এনজিও’র প্রাধান্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ