পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উচ্ছেদের ভয়ে গত বুধবার রামপুরা বাজারের ফুটপাথ ছিল একেবারে পরিষ্কার। কোনো হকার ছিল না। ছিল না কোনো দোকান। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে অনেকটা নিশ্চিন্তেই রাস্তাসহ ফুটপাথ দখল করে নেয় হকাররা। রাস্তা দখল করে জমে ওঠে বাজার। ব্যস্ত রামপুরার রাস্তায় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল গত জুলাই মাসে। সেই নিষেধাজ্ঞাও কার্যকর করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। এতে যানজট আর ভোগান্তি লেগেই আছে। রাজধানীতে উচ্ছেদ মানেই কয়েক দিন পর আবার তা দখল হয়ে যাওয়া। লাখ লাখ টাকা খরচ করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হওয়ার দু-চারদিন পরই আবার তা দখল হয়ে যায়। নগরবাসী বহুদিন ধরেই এই ‘উচ্ছেদ উচ্ছেদ’ খেলা দেখে আসছে।
রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন তাদের নিজ এলাকার দখল হয়ে যাওয়া রাস্তা, ফুটপাথ ও সরকারি জায়গা উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব রাস্তায়, ফুটপাথ ও সরকারি জায়গা দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র ও সরকারদলীয় লোকজন ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে। আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগসহ সরকারদলীয় বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নামে অফিসের সাইনবোর্ড টানিয়ে দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে। সরকারদলীয় সংগঠনের সাইনবোর্ড থাকলে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। সাহস করে ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব উচ্ছেদ করলেও সাথে সাথেই আবার তা দখল হয়ে যায়। এমনও দেখা গেছে, উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে ফেরার আগেই আবার দখল হয়ে গেছে। গত কয়েক বছর ধরেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উচ্ছেদ অভিযানের পর এই পরিস্থিতি লক্ষ করা গেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এবারও উচ্ছেদের পর ফের দখল হবে না তো? ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার কাওরান বাজারের উচ্ছেদ অভিযানের পর সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করার ঘোষণা দিয়েছেন। উচ্ছেদকৃত অংশ আর যাতে কেউ দখল করতে না পারে সেজন্যই পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হবে। এ উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছে বলেছেন, ‘বেড়া’ যাতে ‘ক্ষেত’ না খায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে রাজধানীর কাওরান বাজার ও খিলক্ষেতে। এ অভিযানে কাওরান বাজারে দীর্ঘদিন দখলে থাকা ডিএনসিসির একটি তিনতলা ভবনসহ প্রায় এক হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম এবং সাজিদ আনোয়ারের নেতেৃত্বে কাওরান বাজারে ও মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া এবং জুলকার নায়েনের নেতৃত্বে খিলক্ষেতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কাওরান বাজারে অভিযানকালে প্রায় তিন শতাধিক অস্থায়ী দোকান, শেড, ফুটপাথের ওপর নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর খিলক্ষেতে প্রায় ছয় শতাধিক অস্থায়ী স্থাপনা ফুটপাথ ও সড়ক থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
কাওরান বাজারের অভিযানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অফিসের পশ্চিম দিকে তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের কাওরান বাজার শাখা, জনতা টাওয়ারের পশ্চিমে জাতীয় যুব সংহতি ও উত্তর দিকে জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নিচে কৃষক লীগের তেজগাঁও থানা কার্যালয় উচ্ছেদ করা হয়। এরপর কাওরান বাজারের কাঠপট্টি এলাকায় দোকান মালিকদের একটি তিন তলাবিশিষ্ট স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়াও এ অভিযানে জাতীয় শ্রমিক লীগ তেজগাঁও আঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঈসমাঈল মোল্লা বলেন, মেয়র হানিফ সাহেবের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে বসেছিলাম। প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। আমরা বারবার সিটি কর্পোরেশনকে রাজস্ব দিতে চেয়েছি, কিন্তু তারা নিতে রাজি হয়নি। তাহলে আমরা কিভাবে অবৈধ হলাম? অভিযানে ১০০ জন কাঠ ব্যবসায়ীর মোট ১০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
উচ্ছেদ অভিযানে ব্রিফিংকালে ডিএনসিসির মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম বলেন, কাওরান বাজার এলাকায় সড়ক ও ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন একটি জায়গা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করেছে।
মেয়র বলেন, জনগণের জন্য ফুটপাথ ও রাস্তা। কিন্তু একটি গোষ্ঠী ফুটপাথ দখল করতে করতে রাস্তাও দখল করে ফেলে। বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করছে। এই রাস্তা, ফুটপাথ জনগণের টাকায় হয়েছে। তারা এই দখল চায় না। দখল উচ্ছেদের পরও আবার দখল করা হয়। তাই আমরা এখানকার একটি জায়গা ফাঁড়ি স্থাপনের জন্য পুলিশকে দেবো। পুলিশ ফাঁড়ি থেকেই এ এলাকায় ফুটপাথ দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশও দীর্ঘদিন ধরে এখানে ফাঁড়ি স্থাপনের জন্য একটি জায়গা চাচ্ছিল। আমরা জায়গা চ‚ড়ান্ত করেছি, কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশকে জায়গাটি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, কাওরান বাজার থেকে বাংলামোটরের দিকে চলে যাওয়া রাস্তায় কাজ চলছে। এর মধ্যে ফার্মগেট থেকে হলিক্রসের সামনে দিয়ে এফডিসি হয়ে যাওয়ার একটি বাইপাস রাস্তা হবে। এছাড়া কাওরান বাজার প্রধান সড়ক থেকে বাজারের ভেতর দিয়ে সোনারগাঁওয়ের সামনে উঠে হাতিরঝিলের দিকে বের হওয়া যাবে। কাওরান বাজারের বদলে গাবতলী, যাত্রাবাড়ী এবং মহাখালীতে বাজার হবে। এখানকার বাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে। সেগুলো মিটে গেলেই এখান থেকে বাজার সরে যাবে।
এর আগে গত বুধবার কাওরান বাজার এলাকায় ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যেমে কাওরান বাজার এলাকায় অবৈধভাবে ফুটপাথ ও সড়ক দখল করার অপরাধে প্রায় ৮০টি অস্থায়ী দোকানসহ অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ওই সময় তিনি এসব অবৈধ স্থাপনা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেয়ার জন্য দুইদিন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন এবং গতকাল বৃহস্পতিবার আবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়ে আসেন।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযান এক একটি এলাকা ধরে পরিচালনা করা হবে। ওই এলাকার ফুটপাথ-সড়ক যতদিন পর্যন্ত দখলমুক্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত সেই এলাকায় অভিযান পরিচালিত হবে। সেক্ষেত্রে এক এলাকার উচ্ছেদ অভিযান শেষ করতে যদি ৫-১০ দিনও সময় লাগে তবুও তা করা হবে।
এদিকে, উত্তরে জোরালোভাবে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও দক্ষিণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। দক্ষিণের ব্যস্ততম মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, কাকরাইল, দিলকুশা, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, কমলাপুর, আরামবাগ, যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্জ, টিকাটুলি, ফরাশগঞ্জ, টিপু সুলতান রোড, নবাবপুর রোডসহ পুরান ঢাকার অলিগলির রাস্তা ও ফুটপাথ দীর্ঘদিন ধরেই দখল হয়ে আছে। এসব এলাকার যানজটের প্রধান কারণ ফুটপাথ ও রাস্তা দখল করে রাখা। এর আগে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বেশ কয়েকবার ফুটপাথ ও রাস্তা দখলদারমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু অভিযানও পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু রাস্তা ও ফুটপাথ দখলদারমুক্ত হয়নি, বরং দিন যত যাচ্ছে দখলদারদের সংখ্যা ততোই বাড়ছে। গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় হকারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু সেদিকে কারও নজর নেই। আবার শাহবাগ থেকে প্রেসক্লাব-পল্টন হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলছে। সে কারণে এ এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। তার উপর ফুটপাথ ও রাস্তা হকারদের দখলে থাকার কারণে পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটছে। এ জন্য ব্যস্ত এই এলাকাগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান জরুরি বলে ভুক্তভোগীরা মনে করেন। শুধু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ক্ষান্ত হলে চলবে না। উচ্ছেদকৃত জায়গা আর যেন কেউ দখল করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে বরাবরের মতো উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা চলতেই থাকবে, যা নগরবাসীর কাম্য নয়।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, কাওরান বাজারসহ আশপাশের যেসব এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফার্মগেট পুলিশ বক্স থেকে বিজয় সরণি, পান্থপথ সিগনাল থেকে সোনারগাঁও ফোয়ারা, জাহাঙ্গীর টাওয়ার থেকে এফডিসি রেলগেট, হলিক্রস কলেজ থেকে তেজগাঁও রেলগেট, তেজগাঁও রেলস্টেশন রাস্তার দুই পাশের ফুটপাথ, জনতা টাওয়ার থেকে পেট্রোবাংলা, ঢাকা ওয়াসার বাইলেন রাস্তার এক পাশের ফুটপাথ, প্রথম আলো ভবনের দক্ষিণ পাশের ফুটপাথ, ডিআইটি মার্কেট থেকে বিটিএমসি ভবন।
২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দিরা রোড থেকে টিএন্ডটি খেলার মাঠ, ইন্দিরা রোড বাইলেন রাস্তা এবং গ্রিন রোড সিগনাল থেকে ফার্মভিউ সুপার মার্কেট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।