তথ্য অধিকার আইন সর্ম্পকে দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ জানে না বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। ২৫ শতাংশ মানুষ এ সর্ম্পকে জানলেও তাদের মধ্যে ২০ শতাংশের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই বলে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস- ২০১৯ উপলক্ষে ‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ : আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক সভায় এ প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবি। গবেষণাটি ১০০ মানুষের ওপর নমুনায়ন পদ্ধতিতে করা হয়।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে তথ্য অধিকার পাওয়ার জন্য ৯৯ হাজার ২৩৮টি আবেদন জমা হয়েছে। গড়ে প্রতিবছর ১১ হাজারের বেশি আবেদন এসেছে, যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় খুবই সামান্য। গ্লোবাল রাইট টু ইনফরমেশন রেটিংয়ে ১২৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ২৬ তম অবস্থানে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও বাংলাদেশে এর বেশকিছু সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ আইনের ৪ ধারায় আবেদন সাপেক্ষে তথ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়া হলেও ৭ নম্বর ধারায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি- এসব যুক্তিতে বৃহৎ ব্যতিক্রম তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে এর পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা না থাকায় অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া, মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উপস্থাপনীয় সারসংক্ষেপসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি এবং বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত তথ্যসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তথ্য না দেয়ার ক্ষমতা দিয়ে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ আইনকে তথ্য অধিকার আইনের ওপর স্থান দেয়া হয়েছে। এ কারণে জনমানুষ অবাধে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে ৩২ ধারা অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ বা প্রদান করা বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও, জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তথ্যের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না। তদন্ত হলেও তার ফলাফল গোপন রাখা হচ্ছে। দুর্নীতির তথ্যের ক্ষেত্রেও একই চিত্র বিদ্যমান।
উন্মুক্ত আলোচনায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তথ্য অধিকার আইনে বেসরকারি খাতে তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি এ আইনের একটি বড় দুর্বলতা। তার চেয়ে বড় দুর্বলতা রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা। কারণ দেশের কোনো মেগা দুর্নীতি রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়া ছাড়া সম্ভব নয়।