বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জীবন চলার পথে সকাল এবং বিকালের আবর্তনের মধ্য দিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে চলে। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়। মানবমন্ডলীর ক’জনই বা তা হিসাব রাখে। মহান রাব্বুল আলামীন মুমিন মুসলমান বান্দাহদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা একটি সকাল অথবা একটি বিকালকে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে। এই ব্যয় করার মূল্য অনেক বেশি। এর দ্বারা তোমাদের জন্য জাহান্নামের আযাব হারাম হয়ে যাবে এবং অবিনশ্বর সুখের জান্নাত তোমাদের নসীব হবে। এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে :
হে ঈমানদারগণ তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদের বলা হয় আল্লাহর রাস্তায় বের হও, তখন তোমরা পৃথিবীর প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়? তবে কি তোমরা আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী আখিরাতের তুলনায় নগণ্য। যদি তোমরা বের না হও, তাহলে তিনি তোমাদের বেদনাদায়ক আযাবে নিপতিত করবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক কওম বা সম্প্রদায়কে আনয়ন করবেন। আর তোমরা তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। আর আল্লাহপাক সকল বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৩৮-৩৯)।
এই আয়াতে কারীমার মর্মের গভীর দৃষ্টিতে তাকালে কয়েকটি দিকনির্দেশনাসমূহ লাভ করা যায়। যথা- (ক) মুমিন মুসলমানদের একটি সকাল অথবা একটি বিকালের জন্য হলেও আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া অপরিহার্য। এতে শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। (খ) পৃথিবীর লোভ, মায়া, মহব্বত ও আকর্ষণে প্রলুব্ধ হয়ে আখিরাতকে বিস্মৃত হওয়া চলবে না। বরং আখেরাতের সুখ-শান্তির জন্য দুনিয়ার সব কিছু উৎসর্গ করতে হয়। (গ) দুনিয়ার ভোগসামগ্রী, উপায়-উপকরণ সবই নগণ্য ও ক্ষণস্থায়ী। পক্ষান্তরে আখেরাতের সফলতা চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর। সুতরাং ক্ষণভঙ্গুর ও নগণ্য বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চিরস্থায়ী জীবনের সফলতাকে পরিহার করা মোটেই সমীচীন নয়। (ঘ) মুমিন মুসলমানগণ যদি আল্লাহর রাস্তায় বের না হয় তাহলে তাদের বেদনাদায়ক শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এর থেকে কোনোমতেই রেহাই পাওয়া যাবে না। (ঙ) আল্লাহর হুকুম লংঘনকারী মুমিনদের পরিবর্তে অন্য এক কওমকে তিনি মনোনীত করবেন, যারা তার নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করবে। হুকুম অমান্যকারীর তার অনু পরিমাণ ক্ষতি করতে পারবে না।
আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার বহুবিধ পন্থা ও কার্যক্রম রয়েছে। যথা- (১) ধর্মযুদ্ধ বা জিহাদে অংশগ্রহণ করা। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেভাবে জিহাদ করা উচিত। দীন ও ধর্মের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেন নি। এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীম আ. এর দীন। তিনিই তোমাদের নাম মুসলিম রেখেছেন। (সূরা হাজ্জ : আয়াত ৭৮)। (২) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারা হবে সফলকাম। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৪)। (৩) ঐক্য ও একতা বজায় রাখা। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা তাদের মত হইও না, যারা বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১০৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।