বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সন্ত্রাসবিরোধী সচেতনতার অংশ হিসেবে অসাবধানতাবশত: চলমান নেতিবাচক প্রচারণা ধীরে ধীরে ইসলামী জীবন ধারার ওপর মন্দ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করা যায়। সন্ত্রাস নির্মূল কাম্য হলেও এ সুযোগে ইসলাম অবমাননা কাম্য হতে পারে না।
কারণ, সামাজিক শান্তি, ধর্মীয় মূল্যবোধ বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। সন্ত্রাস মোকাবেলা যেমন বড় কাজ, বাংলাদেশের এসব অমূল্য সম্পদের হেফাজতও কম বড় কাজ নয়। গাছের আগা কেটে গোড়ায় পানি ঢালা কোনো দিনই যৌক্তিক কাজ ছিল না। এজন্য গুণী ব্যক্তিরা বলে গেছেন, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।’ নামায, পর্দা, টুপি, দাড়ি, টাখনুর ওপর কাপড় পরা এবং মাদক, অশ্লীলতা ও অবৈধ মেলামেশা থেকে কাউকে বারণ করা যদি এককথায় সন্ত্রাসের নির্দেশক সাব্যস্ত হয় তা হলে ধীরে ধীরে ইসলামের ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত বিধান, দ্বীনি রীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এবং ইসলামের নিদর্শনসমূহও একসময় নাউযুবিল্লাহ অসামাজিক, সন্দেহজনক, নেতিবাচক ও অপরাধ হিসাবে পরিচিত ও চিহ্নিত হতে সময় লাগবে না।
কোটি কোটি মুসলমান এদেশে আছেন যারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম মানার জন্যই টাখুনর ওপর লুঙ্গি, পাজামা বা প্যান্ট পরিধান করেন। যারা দুনিয়াদার বন্ধু-বান্ধব পছন্দ করেন না, এর চেয়ে বরং নির্জনতা পছন্দ করেন, তারা বাজে আড্ডা, বেহুদা কথাবার্তা, খেলাধুলা, গান-বাজনা থেকে দূরে সরে গিয়ে দ্বীনি পরিবেশে থাকতে পছন্দ করেন। দীনের কথা বলতে ও শুনতে পছন্দ করেন। আল্লাহর যিকির ও ইলমের মজলিসে জমা হতে ভালোবাসেন।
চিন্তা করলে দেখা যাবে, এদের সবাইকে এক হিসাবে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, এসব কাজ যারা করেন তারাই সন্ত্রাস বা উগ্রবাদের সাথে জড়িত। অথচ এদেশের কোটি কোটি মানুষ এমন জীবনধারা অবলম্বন করে আসছেন শত শত বছর ধরে। সন্ত্রাস নির্দেশনায় এসব দীনি আচরণ কেন অন্তর্ভুক্ত করা হলো তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা অবশ্যই ভেবে দেখবেন। সাধারণ মানুষ এবং ওলামায়ে-কেরাম বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করেন, এভাবে বলতে থাকলে একসময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে যে, টাখনুর ওপর কাপড় পরতে দেখলে মানুষ মনে করবে লোকটি সন্ত্রাসী।
অথচ এভাবে পোশাক পরা পুরুষের জন্য শরীয়তের বিধান। টুপি, দাড়ি শরীয়তের বিধান। নির্জনতা অবলম্বন, একাকী যিকির, তিলাওয়াত, মোরকাবা, মুহাসাবা মুমিনের জীবনের জরুরি অনুষঙ্গ। এসব যদি সন্ত্রাসের নিদর্শন হয় তা হলে দেশের মানুষ ইসলামের হুকম-আহকাম পালন করবে কিভাবে।
গত শতকে নাস্তিক্যবাদী সোভিয়েত বলশেভিক বিপ্লব ঈমান, ইসলাম, নামায, কোরআন, পর্দা, দাড়ি, টুপি ইত্যাদি কারণ দেখিয়েই কমবেশি ৬০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। সেকুলারিজমের দোহাই দিয়ে যেভাবে খেলাফত-পরবর্তী তুরস্কে ঈমান, নামায, মসজিদ, আযান, কোরআন, শরীয়ত, হিজাব, নিকাব, টুপি, দাড়ি ও পাগড়িকে কারণ দেখিয়ে লাখ লাখ ধার্মিক নারী-পুরুষকে হত্যা করেছে।
জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে আমাদের দেশের দায়িত্বশীল লোকজন কিংবা সাধারণ মানুষ যেন দ্বীনি বিষয়ে এ ধরনের নেতিবাচক বা ভুল ধারণার শিকার না হয় এ আশা ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা চোখ-কান খোলা রেখে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করবেন না। চারিদিকে বহু শত্রু মহান ইসলামের ক্ষতি করার জন্য সরকারসহ সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে সতর্কতার বিকল্প নেই।
সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে কোনো আলেম বা ঈমানদার মানুষ যেন ইসলামের জিহাদকে খাটো না করেন। শরীয়তের কোনো বিধানকে এমনকি অতিসাধারণ একটি সুন্নতকেও অবহেলার চোখে না দেখেন। দ্বীনি রীতি, ঐতিহ্য ও নিদর্শনকে হালকা না বানান।
ঈমানী দায়িত্ব মনে করে বর্তমান সময়ে খুবই সংবেদনশীল এ বিষয়ে দুটি কথা বললাম। আশা করি সবাই বোঝার চেষ্টা করবেন। সর্বোপরি আল্লাহর ভয়, আখেরাতে বিশ্বাস ও চিন্তা-বিবেচনায় নীতি-নিষ্ঠা আমাদের সকলের নসীব হোক- এ প্রত্যাশা রেখে বলতে চাই, সন্ত্রাস নির্মূলের নামে নিজের ধর্মকে অহেতুক খাটো করবেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।