মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অভাব, কষ্ট, ক্যান্সার কোন কিছুই নড়াতে পারেনি তাকে। নিজের কথা না ভেবে বস্তির শিশুদের মুখে খাবার তুলে চলেছেন তিনি আঁচল শর্মা। প্রথমে ৫-৬ জন বাচ্চাকে খাওয়াতেন, এখন সেই সংখ্যাটা প্রায় ২০০। ওই শিশুগুলোর কছে তিনিই ‘সুপারহিরো’।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে আঁচল শর্মার জন্ম। বাবা-মা আর তিন ভাইবোন তারা। বাবা ছিলেন একজন অটোচালক। অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে উপার্জনের সমস্ত টাকা একটি গাড়ি কিনতে খরচ করে ফেলেন। কিন্তু গাড়ির ব্যবসায় লাভের মুখ দেখেননি তিনি। এ দিকে অটো চালানোর কাজটাও চলে যায়। হতাশ হয়ে মদের নেশায় বুঁদ হয়ে যান তিনি। রোজ মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে আঁচলের মাকে বেধড়ক মারধর করতেন তিনি।
দিনের পর দিন অনাহারেই কাটিয়েছেন আঁচলরা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বেতন দিতে না পেরে স্কুল ছাড়তে হয়। বাবা-মা একপ্রকার জোর করেই বিয়ে দিয়েছিলেন তার। কিন্তু মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তিন মাসের মধ্যে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। পরে তিনি একটি সংস্থার রিসেপশনিস্টের কাজ পান। প্রতি মাসে ৪০০০ টাকা বেতন পেতেন। পড়াশোনা না জানা তার কেরিয়ারে বাধা হতে পারেনি। দ্রুত সব কিছু শিখে নিয়েছিলেন তিনি। এমনকি ইংরাজি বলাটাও খুব সুন্দর রপ্ত করে নিয়েছিলেন। নিজের চেষ্টায় ক্রমে কেরিয়ারের গ্রাফ উপরে তুলেছেন। প্রমোশান পেয়েছেন, এমনকি একটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন নিজের উপার্জনে। অত্যন্ত লড়াকু এই মেয়েটা কখনও নিজের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বিলাপ করেননি।
এর পর যেমন তার জন্য তৈরি ছিল আরও দুটো খাঁড়া। প্রায় একই সঙ্গে বাবা-মা দু’জনেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাবার যক্ষা হল আর মা খুব বিরল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হলেন। আঁচল একাই দু’জনের চিকিৎসার ভার নিয়ে নিলেন। অর্থের জন্য কেরিয়ারে আরও বেশি নজর দিলেন। এ সব করতে গিয়ে যেটা হল, নিজের প্রতিই যত্ম নিতে ভুলে গেলেন। খেয়ালই করলেন না যে তার স্তনে একটি লাম্প হয়েছে। যন্ত্রণা, ব্যথায় যখন আর উপেক্ষা করা সম্ভব হল না, তত দিনে থার্ড স্টেজ ব্রেস্ট ক্যানসারে পরিণত হয়ে গিয়েছে সেই ছোট লাম্পটি। ২০১৭ সালে ক্যানসার চিকিৎসা শুরু হয় আঁচলের।
একদিন চিকিৎসকের কাছ থেকেই ফিরছিলেন আঁচল। ট্রাফিক সিগন্যালে কতগুলো শিশু তার কাছে টাকা চায়। আঁচল তাঁদের খাওয়ানোর জন্য পাশের একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে যান। দোকানদার তাদের খাবার দেবেন না, স্পষ্ট জানিয়ে দেন। পাশের অন্য একটি দোকানে যান তারা। ছেঁড়া, নোংরা জামা পরা বাচ্চাগুলোকে দেখে অন্যেরা দোকান ছেড়ে চলে যান। ক্রেতা চলে যাচ্ছে দেখে, সেই দোকানদারও তাদের খাবার দেননি আর। সে দিন থেকেই আঁচল স্থির করেন, তাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নেবেন। তাদের জন্য রান্না করে খাবার নিয়ে যেতে শুরু করেন তিনি। আশেপাশের লোকেদের থেকে কিছু সাহায্যও পান তিনি। ‘মিলস ফর হ্যাপিনেস’ নামে নিজের একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খুলেছেন। তার স্বপ্ন এমন ৫০০০ শিশুর মুখে রোজ খাবার পৌঁছে দেয়া।
ক্যানসার হয়েছে জানলেই মানুষ আর্থিক এবং মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। সেখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়েও যে ভাবে মনে জোরে বস্তির বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তিনি, সে জন্য কখনও হার না মানা আঁচলকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার চিকিৎসকেরাও। যে হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে, সেখান থেকে তাকে সম্মানিত করা হয়েছে। সূত্র : বেটার ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।