বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নম্রতা, ভদ্রতা, কোমলতা ও দয়ার্দ্র্যচিত্ততা প্রদর্শন ইসলামী জীবন ধারার অন্যতম শোভা। ইসলামে যে সকল বিষয়ের প্রতি তাকীদ করা হয়েছে, তন্মধ্যে নম্রতা প্রদর্শন একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কথায় বলে ‘নম্র যত ভদ্র তত’।
যে যতবেশী কোমল ও নমনীয়, সে ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের দিক হতে ততবেশী উন্নত মর্যাদার অধিকারী। বস্তুত: চলমান বিশ্বের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ অশান্তির মূলে তিনটি সম্প্রদায় একজোট হয়ে কাজ করছে। তারা হলো, (ক) অবিশ্বাসী কাফির শ্রেণী, (খ) তথাকথিত আহলে কিতাব বা কিতাবধারী এবং (গ) মুনাফিক শ্রেণী, যারা চলনে-বলনে ও মুখে দাবী করে সে মুসলমান। আসলে তারা ইসলামের দুশমন বৈ কিছুই নয়।
মহান রাব্বুল আলামীন রাসূলুল্লাহ সা. কে লক্ষ্য করে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না এবং নির্যাতন উপেক্ষা কর, আর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর, তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৪৮)। এই আয়তে ইসলাম বিদ্বেষী দু’টি শ্রেণীর কথা বলা হয়েছে, যারা কাফির ও মুনাফিক।
আল কোরআন আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘বল, হে কিতাবধারীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করব না এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করব না। তারপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসিলম।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৬৪)।
তথাকথিত আহলে কিতাব বলে পরিচয় দানকারীরা কোরআনুল কারীম নাযিল হওয়র শুরু হতে অদ্য পর্যন্ত ইসলামী জীবন যাত্রার বিভিন্ন দিক নিয়ে নানারূপ কুট প্রশ্নের অবতারণা করে চলেছে এব স্বত:সিদ্ধ বিষয়াবলীর মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে।
তাদের সাথে বিতর্কে অংশগ্রহণকারী মুমিনদের খেতাব করে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আহলে কিতাবদের সাথে উত্তম পন্থা ছাড়া বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওদের ছাড়া, যারা জুলুম করেছে। আর তোমরা বল, আমরা আমাদের প্রতি যা নাজিল হয়েছে তাতে ঈমান এনেছি, আর তোমাদের প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি। আর আমাদের উপাস্য এবং তোমাদের উপাস্য তো একই এবং আমরা তারই সমীপে আত্মসমর্পণকারী।’ (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৪৬)।
এই আয়অতে কারীমায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আহলে কিতাবদের সাথে আলাপ-আলোচনা এবং বিতর্কের প্রাক্কালে নমনীয়তা ও উত্তম পন্থা প্রদর্শন করা মুমিন মুসলমানদের একান্ত কর্তব্য। দৃশ্যত: আহলে কিতাবদের অধিকাংশই চায়, যেন মুমিন-মুসলমানদের কুফুরীতে লিপ্ত করতে পারে। এজন্য তারা নানারকম ছল-বল ও কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে।
মহান রাব্বুর আলামীন এই দুনিয়াতে বনী আদমের বিস্তার ও কল্যানের লক্ষ্যে সবকিছু তাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন। যাতে তারা শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে ও তার নির্দেশাবলী বাস্তবায়নে যত্মবান হয়। কিন্তু নিতান্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, উল্লিখিত তিনটি শ্রেণী ১৯৮০ সালের ১ মুহাররম হতে অদ্য পর্যন্ত মুসলিম নিধনে যারপরনাই তৎপর রয়েছে।
এই ৩৯টি বছরে তারা বিশ্বজুড়ে কত শত, কত হাজার, কত লক্ষ মুসলমান নিধন করেছে তার যথাযথ হিসাব নিরূপণ করা কঠিন ব্যাপার। তারপরও মুমিন মুসলমান ধৈর্য এবং সহনশীলতার রজ্জু ধারন করে আল্লাহর দিক হতে নির্দেশ আসার প্রহর গুণে চলেছে।
নবী পত্মি হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহপাক নিজে কোমল ও সহানুভূতিশীল। তিনি কোমলতা ও সহানুভূতিশীলতাকে ভালোবাসেন। তিনি কোমলতার দ্বারা ওই জিনিষ দান করেন, যা কঠোরতার দ্বারা দান করেন না। (সহীহ মুসলিম : ৪/২৫৯৩)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।