Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুৎ চোরেরা অধরা

২৭ কোটি টাকা চুরির বিচার হয়নি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বিদ্যুৎ বিলে জাল-জালিয়াতি এবং বিদুৎ চুরির ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট। দেড় বছর আগে ২৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি ধরা পড়লেও এখনো সেই ‘বিদুৎ চোরেরা’ বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। প্রশাসনের অভ্যন্তরের ওই চোরদের বিচার করার উদ্যোগ নেয়া হলেও দেড় বছর ধরে সেই প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারী যে-ই অপকর্ম করবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডেসকোর ৬ জনকে চাকরিচ্যুত করেছি। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে প্রতিবেদন বিস্তারিত দেখতে পারিনি। দেখে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিপিডিসির পরিচালক (পরিচালন) এ টি এম হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা চুরি যাওয়া বিল গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করেছি। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিষয়টি ডিপিডিসির মানবসম্পদ বিভাগ বলতে পারবে।

রাজধানীর বনশ্রীতে বিল কম দেখিয়ে ২৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ডিপিডিসি। দায়ীরা বহাল তবিয়তে থাকায় এ ধরনের দুর্নীতি আরো বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে দেরিতে হলেও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

গত বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর বনশ্রী ও বাসাবোতে ১০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা উদঘাটন হয়। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মিটার রিডিং কম দেখিয়ে এ জালিয়াতি করা হয়। ঘটনা তদন্তে দু’টি কমিটি করে ডিপিডিসি। এক মাসের মধ্যেই শেষ হয় তদন্ত। এতে বলা হয়, ১০ লাখ নয়, বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ ইউনিট। জালিয়াতির ঘটনায় বনশ্রী শাখার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন আবদুল্লাহসহ ১৪ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান দায়ী। সুপারিশ আসে চুরির অর্থ আদায় ও বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ডিপিডিসি।

ডিপিডিসির মানবসম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো তথ্য দেয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জালিয়াতির ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানাকে শিগিগিরই স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে দায় সারার প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিপিডিসি। তবে, সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

৩৬টি শাখার মাধ্যমে রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চল, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিক্রি করে ডিপিডিসি। বনশ্রীতে বিল জালিয়াতের সঙ্গে জড়িতদের বিচার না হওয়ায় অন্যান্য শাখাতেও এ ধরনের অনিয়মের আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প ও বন্দরনগরী খ্যাত নারায়ণগঞ্জ শহরের কিল্লারপুল এলাকায় ডিপিডিসির কার্যালয়ের মাত্র ৫০ গজ দূরেই রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজ। গ্যারেজের প্রধান (মাদার) মিটারের ডিসপ্লে চালু থাকলেও পালস (চলমান মিটারের বাতির ইঙ্গিত) নেই। এরই মধ্যে একটি গ্যারেজে দেখা গেল, সেখানে মোট ২২টি অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে। হঠাৎ প্রধান মিটারের পাশেই ঝোলানো বিদ্যুৎ বিলের কপির ওপর চোখ আটকে যায়। এতসংখ্যক ব্যাটারি চার্জ হওয়ার পরও মাসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল আসার কথা, তার ধারে-কাছেও নেই সেই বিল। ১ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ ১ ঘণ্টা ব্যবহার হলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। একটি অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হয় সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা। ১ হাজার ওয়াটের মেশিন (অটোরিকশার মোটর ও ব্যাটারি শক্তি) ৮ ঘণ্টা চার্জ হলে দৈনিক ৮ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হবে। সে হিসাবে মাসে কমপক্ষে ২৪০ ইউনিট খরচ হবে। বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ট্যারিফ অনুযায়ী, প্রতি ইউনিট ১২ টাকা হিসাবে ২৪০ ইউনিটের দাম ২৮৮০ টাকা। এভাবে ২২টি অটোরিকশার জন্য মাসে প্রায় ৬৫ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল আসার কথা। কিন্তু বিল আসছে মাত্র ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। উপরন্তু পিক আওয়ারে শূন্য ইউনিট দেখানো হচ্ছে। এ সময় কৌশলে ওই গ্যারেজ থেকে আবিষ্কার করা হয় সেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রিমোট কন্ট্রোলটি। মহসিন আব্দুল্লাহ ছাড়াও অন্যদের মধ্যে রয়েছেন বনশ্রী ডিভিশনের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহনূর রশীদ, মেসার্স মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন, বনশ্রী ডিভিশনের লাইনম্যান মেট (ডাটা এন্ট্রি অপারেটর) মীর কামাল হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা। এছাড়াও মেসার্স মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মোট দশজন মিটার রিডারকে উল্লিখিত কারচুপির জন্য দায়ী করা হয়েছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বনশ্রী ডিভিশনে পুকুরচুরির তদন্ত করতে গিয়ে সাগরচুরির প্রমাণ পেয়েছে গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বনশ্রী ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন আব্দুল্লাহসহ ১৪ জন প্রায় সাত কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরির সঙ্গে জড়িত। আর এই ঘটনার সূত্র ধরেই ডিপিডিসিতে আরও ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৮ ইউনিট কারচুপির প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ