পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফেনীতে কিশোর অপরাধ দিনদিন বাড়ছে। অল্প বয়সে এসব কিশোররা পড়ালেখার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধে। তাদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকেরা রয়েছেন চরম শঙ্কায়।
ফেনীতে গত কয়েক বছরে কিশোর অপরাধ তিনগুণ বেড়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ ফেনীর সর্বমহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। বহুদিন ধরে শহরের পাড়া মহল্লায় মার্কেট, শপিংমল ও গ্রামগঞ্জের দোকান পাট, রাস্তাঘাটের আনাচে কানাচে সর্বত্র সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাং চক্র। তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
তারা বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে প্রতিটা জায়গায় অবস্থান নেয়। তাদের কিছু সদস্য রয়েছে গ্যাং টিমকে আরোও শক্তিশালী করার জন্য স্কুলের ছাত্রদের প্রতি তাদের মূল টার্গেট। পরে এদেরকে চক্রের জালে বন্দি করে অপরাধ জগতের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলে। তারা যত বড় অপরাধ করুক জায়গামত শেল্টার দেওয়ার জন্য তাদের কিছু রাজনৈতিক বড়ভাই সক্রিয় থাকে। যে কারণে তারা সমাজের মধ্যে নানান অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যায়।
জানা যায়, ফেনীতে গত ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে কিশোর গ্যাং চক্রটি সীমাহীন অপরাধ কর্মকাÐ চালিয়ে যাচ্ছে। পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া যেমন শান্তি কোম্পানি রোড, নাজির রোড, মিজান রোড, পাশে ফেনী আলীয়া মাদরাসা মার্কেট, গ্রান্ড হক টাওয়ার, শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতান, ফেনী রেলওয়ে স্টেশন, কলেজ রোড, একাডেমী রোড, বিরিঞ্চী এলাকা, সদর হাসপাতালের পাশে একরাম চত্বর এলাকা, সালাহ উদ্দিন মোড়, শহরের মডেল হাই স্কুল, সেন্ট্রাল হাই স্কুল, দাউদপুর এলাকা, মাস্টার পাড়া এলাকা, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের পাশে পশ্চিম ডাক্তার পাড়া,পূর্ব ডাক্তার পাড়া, পাঠানবাড়ি এলাকা ও পুলিশ কোয়ার্টার এলাকা, রামপুর এলাকা, শাহীন একাডেমী স্কুল সংলগ্ন এলাকা, মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে, সক্রিয় থাকে কিশোর গ্যাং’র একাধিক দল।
এরা শহরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী বলে জানা যায়। এদের রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। এরা ফেনীতে বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে পরিচিত। এদের ব্যাগে থাকে চাপাতি, পকেটে থাকে ক্ষুর, বেøড। এরা বিভিন্ন জায়গায় টাকার বিনিময়ে ভাড়া হয়ে যে কোন বড় ধরনের কাজ যেমন খুনখারাপী, ধর্ষণ, ইভটিজিং , প্রেম সংক্রান্ত বিষয়সহ ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি হলেই মারামারিতে লিপ্ত হয়।
এক গ্রæপের লোককে মারধর করার অপরাধে অপর গ্রæপের লোকজন প্রতিশোধ নিতে কালক্ষেপন করে না। বড় ছোট কাউকে তোয়াক্কা করে না। আর এসব ঘটনায় কয়েকটি মামলা হলেও রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে মূলহোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অনেক সময় বড় ভাইদের তদবিরের কারণে এসব মামলার তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
গত ২ থেকে ৩ বছরে ফেনী শহরে অনেক হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে গুরতর আহত অনেকই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ছোটখাট বিষয় নিয়ে দ্ব›েদ্বর পর প্রকাশ্যে ও ফেসবুক, টুইটারে নানাভাবে হুমকি দেয়ার পরও প্রশাসনকে জানানোর পরও কোন এ্যাকশন না থাকায় বিষয়গুলো পরবর্তীতে সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাড়ায়।
চলতি বছরে কয়েকটি হত্যাকাÐের ঘটনা ঘটেছে যার সব অপরাধের আসামি ১২ থেকে ১৬ বছরের কিশোর তরুণ। সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি শহরের পাঠানবাড়ী এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া স্কুলছাত্র আরাফাত হোসেনের লাশ পরের দিন পাঠান বাড়ি এলাকার জেবি টাওয়ারের সামনে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন হত্যাকারী সাব্বিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাব্বির আদালতে স্বীকার করে তার সাথে আরো জড়িত ছিল মুন্না, তুহিন। তারা ৪ জন মিলে আরাফাতের পা ভেঙে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার লাশ মাটিতে পুতে ফেলে। আরফাত প্রবাসী মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে। সে পুলিশ লাইন্স স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।
এদিকে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর ৭ এপ্রিল ভোরে স্কুলছাত্র আরাফাত হোসেন শুভ (১৪) এর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আরাফাত পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী মাদার কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সহপাঠি ইসমাইল হোসেন ইমনকে (১৪) গ্রেফতার করে পুলিশ। সে আরাফাতকে চুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে বলে আদালতে দায় স্বীকার করে।
১৯ মে সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের উত্তর ছনুয়া গ্রামে নিখোঁজের দুইদিন পর বেলায়েত হোসেন (৪৫) নামের এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে ওই দিন ফার্মের কর্মচারী মো. ফুজায়েল আহম্মদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
একই মাসের ৩০ মে রাতে শহরের গাজীক্রস রোডের হাসান আলী ভূঁঞা বাড়ি সংলগ্ন হক ম্যানশন থেকে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পিয়ন সফি উল্যা (৬০) এর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ শহরের একাডেমী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত সোহেল (১৯),রনি (১৬),সাকিব (১৬) ও রাব্বি (১৬)। পরে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে। বয়সে এরা সবাই কিশোর।
এসব বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, কিশোর অপরাধ যেখানেই হচ্ছে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। পাশাপাশি এ জাতীয় অপরাধের সাথে কেউ যেন যুক্ত না হয় তাই বিভিন্ন স্কুল কলেজগুলোতে জনসচেতনতামূলক মিটিং করছি। পাড়া মহল্লায় গিয়ে অভিভাবকদেরকে ও এ ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সন্ধ্যার পরে কোন ছাত্র যেন আড্ডা না দেয় এ বিষয়ে বিশেষ টিম মাঠে কাজ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।