নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশ কিংবা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে কোন মিলই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের আরেক দল আফগানিস্তানের। পাওয়ার কথাও নয় যদিও। ক্রিকেটের নবীন সদস্য হয়েও এই ফরম্যাটে র্যাঙ্কিংয়ে বেশ এগিয়ে রশিদ খানের দল। বাংলাদেশ দশ, জিম্বাবুয়ে চৌদ্দ আর আফগানিস্তানের অবস্থান সাতে। বর্তমান উন্নতির গ্রাফটাও ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ সফরে এসে এই দু’দলের বিপক্ষে আফগানদের জয়ের ধরণও যার প্রমাণ দিচ্ছে মোটা দাগে। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ত্রিদেশীয় সিরিজের চট্টগ্রাম পর্ব। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। তবে কেন আফগানিস্তানের গুণগান? এই পর্যন্ত সিরিজজুড়ে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত আফগানদেরই যে জয়জয়কার! কোন অঘটন না ঘটলে ফাইনালে এক পা দিয়েই রেখেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের শিরোপা স্বপ্ন জিইয়ে রাখতেও জয়ের বিকল্প নেই আজ। কোনঠাসা জিম্বাবুয়েও চাইছে লড়াইয়ে টিকে তাকতে। এই ম্যাচের আগেও তাই দু’দলের সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরেই এল আফগানদের প্রসঙ্গ। লিখেছেন ইমরান মাহমুদ
বছর খানেক আগের কথা। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় রশিদ খানের। সে ম্যাচে কি বেদম পিটুনিই না খেলেন তিনি। শেখর ধাওয়ান, মুরালি বিজয়, হার্দিক পান্ডিয়াদের তোপে ১৫০ রান খরচ করে উইকেট পেয়েছেন একটি। আর সংক্ষিপ্ত সংস্করণেই উদাহরণটা তো খুবই টাটকা। বিশ্বকাপে তাকে গলির বোলারের মতো পিটিয়েছেন ইংলিশরা। খরুচে বোলারের তালিকায় রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়ে দিয়েছেন। টি-টোয়েন্টিতে ২০১৬ বিশ্বকাপে তাকে বেড়ধক পিটিয়েছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। তাকে সাবলীলভাবে খেলেন বিশ্বমানের প্রায় সব ব্যাটসম্যানরা।
কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই প্রেক্ষাপটটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রশিদ খানের সামনে পড়লে যেন সাকিব-মুশফিকরা ক্রিকেটটাই ভুলে যান। তবে যে শুধু রশিদ খান তাও নয়, অফস্পিনার মুজিব উর রহমানও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন টাইগারদের বিপক্ষে। অখ্যাত জহির খানও ভুগিয়েছেন টেস্টে। মিরপুরে আফগানদের বিপক্ষে হারের পর অধিনায়ক সাকিব বলেছেন স্কিলের ঘাটতির কথা। এদিন অধিনায়কের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বললেন তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। গতকাল ম্যাচপূর্ব র্সবাদ সম্মেলনে এসে সেকথাই বললেন এই অলরাউন্ডার, ‘স্কিলের ব্যাপারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। ওদের বেশিরভাগ স্পিনার রিস্ট স্পিনার। ওদের সামনে চাইলেই সবসময় ছয়-চার মারতে পারবেন না। স্কিলেরও একটু ব্যাপার আছে। তো আমার মনে হয় আমরা যেভাবে বাস্তবায়ন করছি সবগুলোই মোটামুটি ঠিক আছে। কিছু কিছু জায়গায় হয়ত একটু ঘাটতি রয়ে গেছে। এ কারণে হয়তোবা ছোট ছোট দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, অল্প রানে আমরা ম্যাচ হেরে যাচ্ছি। আমি মনে করি এগুলো যত কমানো যায়, যত বেরিয়ে আশা যায় ততো আমাদের জন্য ভালো।’
তবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মোসাদ্দেকরা। আরেকটি হিসেবনিকেশ করে ক্রিকেট খেললে জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলে মনে করেন এ তরুণ, ‘আফগানিস্তানের সঙ্গে বিষয়টা হয় কি ওদের স্পিনার নিয়ে সবসময় কথাটা উঠে আসে বেশি। আমরা ম্যাচ হারছি ১৫/২০ রানে। ওদের যে স্পিনাররা আছে আমরা যদি আরেকটু হিসেব করে খেলি বা আরেকটু...যে ভুলগুলো করছি তা আরেকটু কমানো যায়। টি-টোয়েন্টিতে ১৬০ রান হবে এটাই স্বাভাবিক, সেখানে হয়তো আমরা ১৪৫ বা ১৫০ করতেছি। যে জায়গায় আমরা একটু বেশি তাড়াহুড়া করছি সে জায়গায় দ্রæত ভুল কমাতে পারলে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।’
মোসাদ্দেকের দৃষ্টিতে ২৫ রানের হারটাও ছোট। কিন্তু বাস্তবতা হলো টি-টোয়েন্টিতে এ হারকে বিশালই ধরা হয়। আফগানদের বিপক্ষে হারের পর এটা স্বীকার করে নিয়েছেন অধিনায়ক সাকিবও। সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসই তলানিতে। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে গেলে এটা আরও নিচে নেমে যায়। মানসিকভাবেই পিছিয়ে থাকে তারা। আর এ সুযোগটাই বারবার নিচ্ছেন রশিদ খানরা। আজ জিম্বাবুয়েকে গুড়িয়ে দিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিপক্ষ শিবিরেও কাঁপন তুলতে চায় বাংলাদেশ।
চাপে থাকা বাংলাদেশকে চেপে ধরতে চায় জিম্বাবুয়ে
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে বাগে পেয়েও হারাতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ৬০ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ জিতে গিয়েছিল তরুণ আফিফ হোসেনের দুর্দান্ত ইনিংসে। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ে হেরেছে আফগানদের কাছে। আর প্রথম ম্যাচে কোনোরকমে জয় পাওয়া বাংলাদেশ পরের ম্যাচে পাত্তাই পায়নি আফগানিস্তানের কাছে। গত কিছুদিন ধরে চলা দুঃসময় দীর্ঘায়িত হয়েছে আরও। আফগানদের কাছে হারার পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন ক্রিটেকীয় ও মানসিক স্কিলে দলের ঘাটতি থাকার কথা। ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকের কথাবার্তা অনেকটাই ছন্নছাড়া। চট্টগ্রাম পর্বের জন্য দলে পরিবর্তন আনা হয়েছে বেশ কিছু।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে চলছে অস্থিরতা। মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অবস্থাও জেরবার। সেই তারাও সুযোগ নিতে চাইছে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত অবস্থার। চাপে থাকা দলকে হারিয়ে তাই টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে চায় জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ে এটিকে সুযোগ হিসেবেই দেখছে। গতকাল সাগরিকায় অনুশীলন শেষে সিনিয়র ক্রিকেটার শন উইলিয়ামস অবশ্য বললেন, সুযোগ কাজে লাগাতে তাদেরও নিজেদের কাজটা করতে হবে ঠিকঠাক, ‘আমরা যদি নিজেদের কাজ মন দিয়ে করতে পারি, বাকি সব আপনাআপনি ঠিক হবে। আমরা জানি, ওরা চাপে আছে। কিন্তু আমাদের মৌলিক দিকগুলো ঠিকঠাক করতে হবে।’
এমনিতে অবশ্য বাংলাদেশ দলকে নিয়ে জিম্বাবুয়ের সমীহের শেষ নেই। সময় বিরুদ্ধ হলেও দলটার সামর্থ্য যে দারুণ, এটা জানেন উইলিয়ামস। তাই আগে নিজেরা খেলতে চান সামর্থ্য অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশ খুব ভালো অলরাউন্ড দল। তাদের অবকাঠামো খুব ভালো, যেটি ছড়িয়ে ক্লাব পর্যায় পর্যন্ত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনো কিছুই হতে পারে। আগেই বলেছি, সূ² ব্যাপারগুলো পার্থক্য গড়ে দেয়। ওদের দারুণ কিছু ক্রিকেটার আছে, অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশি... ওরা সবাই খুব ভালো ক্রিকেটার। সেটিকে আমরা সমীহ করি। আমরা নিজেদের কাজে মনোযোগ দিতে চাই, নিজেদের কাজগুলি করতে চাই নিজেদের জন্য।’
টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটেও আগ্রাসী ব্যাটিং করতে পছন্দ করে বাংলাদেশ দল। এ তথ্য ক্রিকেট বিশ্বে গোপন কোনো বিষয় নয়। জিম্বাবুয়ে দলও জানে ব্যাপারটা। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বাউন্ডারি মারা থেকে বিরত রেখে চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা। আর এমনটা হলেই সাফল্য পাবেন বলে মনে করেন জিম্বাবুয়ের অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ফাইনাল স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প নেই জিম্বাবুয়ের। আর তার জন্য নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলেই জানালেন উইলিয়ামস, ‘বাউন্ডারি না দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। ওদের মতো ক্রিকেটারদের বিপক্ষে ফিল্ডিং দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। ওদেরকে যদি বাউন্ডারি মারা থেকে বিরত রাখা যায়, তাহলে চাপ সৃষ্টি হয়। আমি জানি ওরা শট খেলতে পছন্দ করে, জানি ওরা আমাদের আগ্রাসী খেলতে চেষ্টা করবে। চ্যালেঞ্জটি তাই হবে দুর্দান্ত।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।