মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রায় ১০০ ঘণ্টা ডিজি দেখার পর ‘শোজ’ই প্রথম যাতে আমি হিজাব পরা এক নারীকে দেখলাম। আধুনিক তুরস্কের জাতির পিতা মোস্তফা কামাল, পরে আতাতুর্ক নামে আখ্যায়িত, ঘোষণা করেন যে, তিনি সব ধর্মকে সাগরের তলায় নিমজ্জিত করতে ইচ্ছুক। তিনি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধান থেকে অপসারণ করেন। ফেজ (তুর্কি টুপি) পরা নিষিদ্ধ করেন এ বলে যে এটা হচ্ছে প্রগতি ও সভ্যতার প্রতি ঘৃণার প্রতীক। তিনি পর্দা প্রথা নিষিদ্ধ করেন। ১৯৮০-র দশকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীদের মাথা ঢাকা নিষিদ্ধ করা হয়।
ইস্তান্বুলের রাস্তায় পাঁচ মিনিট হাঁটলে মাথা হেডস্কার্ফে ঢাকা বহু নারীকে দেখা যাবে। কিন্তু তুরস্কে টেলিভিশনের পর্দায় তাদের দেখা যায় না। এসেত বলেন, তারা চেষ্টা করেছেন, কিন্ত সবচেয়ে রক্ষণশীল দর্শকও টিভিতে রক্ষণশীল কোনো নারীকে দেখতে চান না। মহিলা সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক এসি তেমেলকুরান বলেন, টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে আপনি হিজাব পরিহিতা কোনো নারীকে দেখতে পাবেন না। তিনি পরিষ্কার ভাবে বলেন যে এ দেশটি একটি কাপড়ের দুটি ছেঁড়া অংশের মত- পতাকা ও হেডস্কার্ফ। ‘সোজ’-এর সেটের কথায় ফিরে আসি। আমরা এক ব্যক্তিকে দেখার জন্য একটি ঠান্ডা অফিস ভবনের উপর তলায় উঠলাম। সে এক ঘণ্টা ধরে একটি টেলিফোন নিয়ে বসে আছে। এদিকে বারান্দায় বিস্ফোরণ ঘটানোর দৃশ্যে লোকজন কাঁচ ঢাকা জানালায় শুটিং করছে।
আমি টিমস-এর আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের পরিচালক এবং আমার সেদিনের গাইড সেলিম আরাতকে বললাম যে আমি আগের রাতে ‘সোজ’-এর একটি এপিসোড দেখেছি। প্রতিবারই আমার নোটবুকে তাকিয়ে আমি ব্যাখ্যা করি যে আমি যখন তা আবার দেখলাম, মনে হল ওই দৃশ্যের সব লোককে হত্যা করা হয়েছে। এই সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা কারা? সুদর্শনা, বিজনেস স্যুট পরিহিতা স্ট্রবেরি-ব্লন্ড নারী আরাত হাসলেন। তারপর রসিকতা করে বললেন, তারা কে জানলে তা জীবনের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
সন্ত্রাসীরা যারাই হোক না কেন, ‘সোজ’ হিট হয়েছে। আরাত গর্বের সাথে বললেন, এটি হচ্ছে প্রথম তুর্কি শো ইউটিউবে যার গ্রাহক সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছ। টিমস-এর প্রোডাকশন প্রতিষ্ঠাতা তিমুর সাভচি বলেন, ‘সোজ’ বাইরে বিক্রি করে তুরস্ক আরো কঠোর বলে প্রদর্শন করতে পারে। তিনি আবার বললেন, কিন্তু এখন বহু দেশই তুর্কি সৈনিকদের গর্বিত রূপটি দেখতে আগ্রহী নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও শো তৈরি করে এবং উপসংহারে বলে- ‘গড ব্লেস আমেরিকা।’ ভালো কথা। আমরাও বলি- ‘গড ব্লেস তুরস্ক।’
সাভসি ইস্তান্বুলের লেভেন্ট ডিস্ট্রিক্টে তার অফিসে বসে আছেন। বিভিন্ন চ্যানেলের পাঁচটি টিভি তার প্রশস্ত অফিসকে আলোকিত করে রেখেছে। তিনি প্রধানত ডিজি ইন্ডাস্ট্রির সাথেই সম্পৃক্ত। আজ তিনি ‘ম্যাগনিফিশান্ট সেঞ্চুরি’র ইংরেজি এডাপ্টেশন তৈরি করছিলেন। আমেরিকান শোগুলো গ্রহণ করা ও সেগুলো তুর্কিতে রিমেকিং-এর ব্যাপারে তার একদম আগ্রহ নেই। তিনি বললেন, আমরা অরিজিনালটা তৈরি করছি। এটাই ভালো।
ডিজি এখনো ইংরেজি ভাষী বিশ্বে প্রবেশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দর্শকরা সাবটাইটেল দেয়া শো পছন্দ করেন না। সাভসি বলেন, অথবা এটাও হতে পারে যে এটা একটি মুসলিম দেশের জিনিস বলে তাদের পছন্দ নয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘ম্যাগনিফিশান্ট সেঞ্চুরি’র ইংরেজি ভার্সনে টিমস কোনো কিছু চেপে যাচ্ছে কিনা। হাসিমুখ, রসিক সাভসি মাথা নেড়ে বললেন, এটা স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ যে সে সময় ওসমানীয় সাম্রাজ্য বিশে^র পরাশক্তি ছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্র যা তখন ওসমানীয় সাম্রাজ্য তা ছিল। যদি মানুষ সে প্রেক্ষিত থেকে বিষয়টি দেখে তারা আরো ভালোভাবে তা বুঝতে পারবে। কিন্তু তারা যদি সেভাবে তা না দেখে তাহলে তারা নিজেদের হুমকিগ্রস্ত বলে মনে করবে।
১৯৭০-এর দশক থেকে তুর্কিরা মানসম্মত টিভি দেখে আসছে। মার্ত ফিরাতের মত তুর্কি অভিনেতা আমাকে বলেন, তারা ডালাস ও ডাইন্যাস্টির মত সিরিয়াল থেকে তাদের সবকিছু শিখেছেন। তারা এগুলো থেকেই আবেগ প্রকাশ ও মেলোড্রামা করা শিখেছেন যা ডিজির প্রয়োজন ছিল। তবে কিছু ঘাটতিও ছিল। প্রাথমিক সময়ের এসব শো-তে মৌলিক কিছু জিনিস নেই- যেমন আধুনিক বিশে^ কেমন করে ধনী ও শক্তিশালী হতে হয়, তার নির্দেশনা।
অন্যদের মধ্যে হিট ডিজি গুমুসের তারকা কিভান্স তাতলিতুগ এটাকে মূল্যবোধ বা রক্ষণশীলতার প্রশ্ন বলে মনে করেন না। তার মতে, এটা সহানুভ‚তি। ই-মেইলে তিনি আমাকে জানান যে তিনি কেন মনে করেন পশ্চিমা নির্মাণ ছেড়ে কেন মানুষ ডিজির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। তাতলিতুগ জানান, এসব দর্শকের অধিকাংশই মনে করেন যে হলিউড বা ইউরোপ তাদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প তুলে ধরেনি। এটা আসলে গল্প বলার বৈচিত্র্যের ব্যাপার। আমি ‘ব্রেকিং ব্যাড’ বা ‘গেমস অব থ্রোনস’-এর গল্পের আবেদন বুঝি। এ দুটোই চমৎকার টিভি শো। যাহোক, কিছু লোক হলিউডের নির্মাণগুলো থেকে আনন্দজনক কিছু নাও পেতে পারে। তারা এমন একটি গল্প দেখতে চাইতে পারে যার সাথে তারা সহানুভ‚তি বোধ করে।
এসেত বলেন, পারিবারিক মূল্যবোধ বিলীন হওয়ার বিষয় পাশ্চাত্যে উদ্বেগের বিষয় নয়। গত চার বছর বা অনুরূপ সময় ধরে সর্বাপেক্ষা বেশি দেখা তুর্কি শোগুলো কোরিয়ান ড্রামার রিমেক। তিনি বলেন, ল্যাটিন আমেরিকার বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে তুর্কিদের চেয়ে কোরিয়ানরা অনেক দ্রুত এগোচ্ছে। কোরিয়া এমন একটি দেশ যেখানে পরিবারকে বিরাট গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু পাশ্চাত্যে পারিবারিক ঐতিহ্যের সুন্দর ও ভালো মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।