নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশের হয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে সাইফউদ্দিন নিলেন চার উইকেট। আফগানিস্তান দলের হয়েও এদিন চার উইকেট নিলেন মুজিব-উর-রহমান। বোলিংয়ে সমানে-সমান। ভঙ্গুর অবস্থা থেকে ব্যাট হাতে অপরাজিত ৮৪ রানের কাব্যিক ইনিংসে দলকে টানলেন মোহাম্মদ নবি, পাশে পেলেন আরেক অভিজ্ঞ আসগর আফগানকে। এখানেই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে ম্যাচের। বাংলাদেশ দলে আজ কেউই হয়ে উঠতে পারেননি নায়ক। আগের ম্যাচে অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চকর এক জয় এনে দেয়া আফিফ হোসেন ধ্রুবও পারলেন না পথ দেখাতে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর সাব্বির রহমান কিছুটা লড়াইয়ের আভাষ দিলেও জয়ের ব্যবধান ঘুঁচাতে পারেনি, হারটি মাত্র ২৫ রানের হলেও আফগানদের সামনে ‘অসহায় আত্মসমর্পণই’ যেন ফুটে উঠেছে সাকিব আল হাসানদের শরীরী ভাষায়। আগে ব্যাট করা আফগানদের ১৬৪ রানের জবাবে ১৩৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে ফাইনালে উঠার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল আফগানিস্তান।
লক্ষ্যটা খুব বড় ছির না। ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো উইকেটে ১৬৫ রান তো নাগালের মধ্যেই। এমন রান তাড়ায় মুজিবের জুজুই শুরুতে কাবু করে দেয় বাংলাদেশকে। তার অফ স্পিন সামলাতে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করতে নামেন মুশফিকুর রহিম। বাঁহাতিদের বিপক্ষে অফ স্পিন আরও ধারালো, সে চিন্তা থেকে ডানহাতি লিটন দাসের সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল তাকে। কিন্তু সে চিন্তা শুরুতেই বুমেরাং। বাজে এক শটে কোন রান করার আগেই বিদায় নেন লিটন।
পেসার ফরিদ মালিককে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে শুরুও করেছিলেন মুশফিক। কিন্তু কি মনে করে পরের বলেই খেলতে গেলেন স্কুপ শট। শরীর ঘোরানোর আগেই নিখুঁত নিশানার বল ছত্রখান করে দেয় তার স্টাম্প। ১১ রানেই নেই দুই ওপেনার। অধিনায়ক সাকিব তিনে নেমে ছিলেন ইতিবাচক। কিন্তু থিতু হওয়ার আগেই হয়ে যায় গড়বড়। মুজিব জুজুতে কাবু হয়ে তারও টপ এজ হয়ে ক্যাচ যায় মিড অনে রশি খানের হাতে। ওপেনিং থেকে পাঁচে ছিটকে সৌম্য সরকারের দিন ফেরাতে পারেননি অধিনায়ক। প্রথম বলেই মুজিবের স্পিনে কাবু হয়ে এলবিডবিøও হয়ে ফেরত যান তিনিও।
আরও একবার টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ৩২ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে দল তখন কাঁপছে। পঞ্চম উইকেটে সাব্বির রহমানকে পেয়ে চারে নামা মাহমুদউল্লাহ পরিস্থিতি সামলে দলকে টানছিলেন। চাপ সামলাতে দুজনেই শুরুতে খেলেন ধীরলয়ে। দাপট দেখিয়ে খেলতে না পারলেও জুটি জমছিল দুজনের। তবে পালটা আক্রমণ করতে না পারাতেই বেড়ে যায় আস্কিং রানরেটের চাপ। তা পুষিয়ে দিতে আগ্রাসী হতে শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মাঝে মাঝে পাচ্ছিলেন বাউন্ডারি। ওভারপ্রতি দশের উপর রান নেওয়ার চাহিদা দেখে ভুল হয়ে যায় তার। মিডিয়াম পেসার গুলবদিন নাইবকে উড়াতে গিয়ে থামান ৩৯ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। এতে ভাঙে ৫০ বলে ৫৮ রানের জুটিও। থিতু হওয়া সাব্বির খানিক পরই পথ ধরেন সঙ্গীর। মুজিবকে পেটাতে গিয়ে ২৭ বল খরচ করে ২৪ রানে ক্যাচ দিয়েছেন মিড উইকেটে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দারুণ জুটিতে দলকে জেতানো আফিফ হোসেন ব্যাটিং পান সাতে, আটে পান আগের ম্যাচে সাফল্যের সঙ্গী মোসাদ্দেক হোসেনকে। কিন্তু ততক্ষণে চ্যালেঞ্জটা হয়ে গেছে আরও অনেক কঠিন। এবার আর হয়নি তাদের। প্রায় অসম্ভব চেষ্টায় দুজনেই থামেন অল্প রানে। বাদ বাকি সময় ম্যাচে থাকেনি কোন উত্তাপ।
তবে গতকাল মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সন্ধ্যাটা কত সুন্দরভাবেই না শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তখনও আসন পেতে বসা হয়নি হোম অব ক্রিকেটে আসা বেশির ভাগ দর্শকেরই। এরই মধ্যে যারা এসে পৌঁছেছেন তাদেরই উল্লাসে মাতিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ইনিংসের প্রথম বলেই সরাসরি বোল্ড করে এই পেসার ফিরিয়ে দেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঝড়ো শুরু করা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। পরের ওভারে সাকিবকে মারতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ উঠিয়ে ফেরেন বিপদজনক হযরুল্লাহ জাজাই।
তেতে থাকা সাইফুদ্দিন নিজের দ্বিতীয় ওভারে আগ্রাসী নাজিব তারাকাইকেও ফিরিয়ে দেন। আগের দিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তোলপাড় করা নাজিবুল্লাহ জাদরানকেও বাড়তে দেয়নি বাংলাদেশ। সাকিবের বলে ছক্কা মারার নেশায় সৌম্য সরকারের হাতে জমা পড়েন তিনি।
সাইফুদ্দিনের পরের স্পেলে ফিরে গুড লেন্থে বল ফেলে স্টাম্প উড়ান গুলবদিন নাইবেরও। পরে একবার জীবন পেয়ে ৪০ করা আসগর আফগানের উইকেটও নেন তিনি।
তবে থামানো যায়নি মোহাম্মদ নবিকে। আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু। ছক্কার ঝড়ে নবিই দলকে নিয়ে যান চ্যালেঞ্জিং স্কোরে। শেষ ৫ ওভারে ঝড় তুলে ৫৫ আনেন নবি। মোস্তাফিজুর রহমানের করা শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান না এলে স্কোর হতে পারত আরও বড়। ৫৪ বলের ইনিংসে ৩ বাউন্ডারির সঙ্গে সাতটি বিশাল ছক্কা মেরে ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে যান নবি। ফাইনালের পথে দলকে দিয়ে যান আত্মবিশ^াস বাড়ানো এক জয়।
স্কোর কার্ড
ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজ (ম্যাচ নং ৩)
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান, মিরপুর
টস : আফগানিস্তান (ব্যাটিং)
আফগানিস্তান ইনিংস রান বল ৪ ৬
রহমতউল্লাহ ব সাইফউদ্দিন ০ ১ ০ ০
হযরতউল্লাহ ক লিটন ব সাকিব ১ ২ ০ ০
নাজিব ক সাব্বির ব সাইফউদ্দিন ১১ ১৩ ০ ১
আসগর ক সাব্বির ব সাইফউদ্দিন ৪০ ৩৭ ৩ ২
নাজিবুল্লাহ ক সৌম্য ব সাকিব ৫ ৭ ১ ০
নবি অপরাজিত ৮৪ ৫৪ ৩ ৭
গুলবাদিন ব সাইফউদ্দিন ০ ২ ০ ০
করিম অপরাজিত ৫ ৬ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৮, লেবা ২ ও ৬, নো ২) ১৮
মোট (২০ ওভারে ৬ উইকেটে) ১৬৪
উইকেট পতন : ১-০ (রহমতউল্লাহ), ২-১০ (হযরতউল্লাহ), ৩-১৯ (নাজিব), ৪-৪০ (নাজিবুল্লাহ), ৬-১২১ (গুলবাদিন)।
বোলিং : সাইফউদ্দিন ৪-০-৩৩-৪, সাকিব ৪-১-১৮-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২৫-০, তাইজুল ৪-০-৩২-০, সৌম্য ২-০-৩১-০, মোসাদ্দেক ১-০-১২-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৩-০।
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
লিটন ক নাজিব ব মুজিব ০ ২ ০ ০
মুশফিক ব ফরিদ ৫ ৩ ১ ০
সাকিব ক রশিদ ব মুজিব ১৫ ১৩ ২ ০
মাহমুদউল্লাহ ক নাজিব ব গুলবাদিন ৪৪ ৩৯ ৫ ০
সৌম্য এলবিডবিøউ ব মুজিব ০ ১ ০ ০
সাব্বির ক গুলবাদিন ব মুজিব ২৪ ২৭ ১ ০
আফিফ ক নাজিবুল্লাহ ব গুলবাদিন ১৬ ১৪ ২ ০
মোসাদ্দেক ব রশিদ ১২ ১০ ১ ০
সাইফউদ্দিন ক ও ব রশিদ ২ ৩ ০ ০
তাইজুল অপরাজিত ০ ১ ০ ০
মুস্তাফিজ ক বদলি ব ফরিদ ১৫ ৭ ২ ১
অতিরিক্ত (লেবা ৩, ও ২, নো ১) ৬
মোট (১৯.৫ ওভারে অল আউট) ১৩৯
উইকেট পতন : ১-০ (লিটন), ২-১১ (মুশফিক), ৩-৩১ (সাকিব), ৪-৩২ (সৌম্য), ৫-৯০ (মাহমুদউল্লাহ), ৬-৯৫ (সাব্বির), ৭-১১৫ (আফিফ), ৮-১২০ (সাইফউদ্দিন), ৯-১২৪ (মোসাদ্দেক), ১০-১৩৯ (মুস্তাফিজ)।
বোলিং : মুজিব ৪-০-১৪-৪, ফরিদ ২.৫-০-৩৩-২, করিম ৩-০-২৭-০, নবি ২-০-১১-০, রশিদ ৪-০-২৩-২, গুলবাদিন ৪-০-২৭-২।
ফল : আফগানিস্তান ২৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মোহাম্মাদ নবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।