Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমেরিকার টিভি বিনোদন দিলেও মানবিক অনুভূতিকে স্পর্শ করে না

‘সোপ অপেরা নয়, ডিজি’-২

ফাতিমা ভুট্টো, দ্য গার্ডিয়ান | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

এ ধরনের ডিজির আন্তর্জাতিক সাফল্য হচ্ছে একটি লক্ষণ যে কোন পথে প্রাচ্য থেকে গণসংস্কৃতির নতুন রূপটি-বলিউড থেকে কে-পপ বা একুশ শতকে আমেরিকান পপ কালচারের প্রাধান্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। এরজেন্স উপলব্ধি করেন যে ডিজির দ্রুত সাফল্যের আংশিক কারণ হচ্ছে আমেরিকান টিভি বিনোদন দিচ্ছে, কিন্তু চলমান নয়। ইস্তান্বুলে তার সাথে আমার সাক্ষাতের সময় তিনি আমাকে বলেন, যেসব অনুভূতি আমাদের মানবিক করেছে সেগুলো তারা স্পর্শ করে না। এক সময় তুরস্কের দৃষ্টি আগ্রহভরে পাশ্চাত্যের দিকে ঘুরে গিয়েছিল। একটি আধুনিক, দ্রুতগতিশীল বিশ্বে কিভাবে আচরণ করতে হবে তার সূত্র সন্ধানের জন্য তাদের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন বিষয়ে গবেষণা করেছিল। কিন্তু আজ আমেরিকান শো’গুলো তাদের সামান্যই দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

এরজেন্স বলেন, আমি একটি আমেরিকান টিভি সিরিজের কথা ভাবছিলাম, তার নাম দরকার নেই আমাদের। এ সিরিজের দর্শন ছিল একাকীত্ব-তিনি একটি ভদ্রোচিত শব্দ সন্ধান করছিলেন। একই সাথে বহুসঙ্গী এবং সুখের সন্ধান। যেসব মানুষ এ সিরিজ দেখছিলেন তারা সবাই এ ব্যাপারে উত্তেজিত ছিলেন। আমি অনুমান করছিলাম যে এরজেন্স সেস অ্যান্ড সিটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এরজেন্স তা বললেন না। তিনি বললেন, এটা একটি বিরক্তিকর বিষয়, নয় কি? একা হয়ে পড়লে সঙ্গীদের দ্রুত বদল ও সুখের সন্ধান করা এবং প্রতিবার আপনার এই সন্ধান, এটা এক ব্যর্থতা। কিন্তু এটা একটি অত্যন্ত সৌখিন জগতে। তাই লোক এ ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী। তারা শুধু ব্যয় করছে আর ব্যয় করছে- তাদের সময় ব্যয় করছে, তাদের ভালোবাসা ব্যয় করছে, সব কিছুই ব্যয় করছে।

বিশ্বব্যাপী আগ্রহের সৃষ্টি করেছে এমন ডিজিতে রয়েছে কাহিনীর সেই শক্তি যা আধুনিক বিশে^র আবেগ ও আত্মিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ ও নীতিকে ধারণ করে। ‘ফাতমাগুল উন সুসু না’ (ফাতমাগুলের ভুল কি)-এর কাহিনী গড়ে উঠেছে ফাতমাগুল নামের এক তরুণীর ধর্ষণ ও তার ন্যায় বিচার পাওয়ার লড়াইকে ঘিরে। আর্জেন্টিনায় তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং স্পেনে এর প্রাইমটাইম সøট প্রতি এপিসোডে প্রায় ১০ লাখের মত দর্শককে টানছে। ফাতমাগুল খুব শিগগিরই স্পেনে টেলিনভেলা হিসেবে পুনর্নির্মিত হচ্ছে। প্রতিদিন আধঘণ্টার বৈকালিক ফর্মাটে তা সম্প্রচারিত হবে।

এই শো অসংখ্য সমস্যা থেকে শুরু করে জোরপূর্বক বিয়ে। উত্তেজনাপূর্ণ পারিবারিক সম্পর্ক থেকে ধনীর শ্বাসরুদ্ধকারী শক্তির পাশাপাশি সমাজে একজন নারীর অবস্থানকে তুলে ধরেছে। তবে ফাতমাগুল হার না মানতে দৃঢ়সঙ্কল্প। সে নিজেকে শিক্ষিত করে, তার লড়াইয়ে প্রতিটি প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে এবং সকল ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার লাভ করে যা দেশের আদালতের মাধ্যমে নাগরিক বিচার, ধর্ষকদের শাস্তির মধ্য দিয়ে ঐশ^রিক বিচার এবং অবশ্যই প্রকৃত ভালোবাসার বিচার।

ডিজিগুলোতে কম- বেশি নির্যাতন, ধর্ষণ ও অনার কিলিং রয়েছে, তাছাড়া তুর্কি যুবকদের রোমিওর চেয়েও বেশি রোমান্টিক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। ইস্তান্বুলের এক ফ্যাশন সম্পাদক পিনার সেলিকেল আমাকে বলেন, তারা জনগণকে তাই দেখায় যা তারা দেখতে চায়। এটা বাস্তব নয়। এসেত যুক্তি দেখান যে ফাতমাগুল মহিলাদের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদনের দিক দিয়ে অসাধারণ। আগে পরিবর্তন আনয়ণকারী ও ডিজি কাহিনীর নায়কেরা সবাই সর্বদা পুরুষ হত। কিন্তু ফাতমাগুল নারীদেরকে দাসীর স্থানে অধিষ্ঠিত করাকে মেনে নেয়নি।

এটা নমনীয় শক্তির জন্য এমনই এক প্ররোচনামূলক বাহন যে ২০১২ সালে একজন রিপাবলিকান আমেরিকান থিংকট্যাংক এসেতকে মধ্যপ্রাচ্যে একজন ভালো আমেরিকান নারীর গল্প বলার জন্য একটি ডিজি লেখার উদ্দেশ্যে নিয়োগ করেন। তার ইচ্ছা ছিল, এ নারী হবে এমন এক নারী যে আমেরিকার ইমেজকে নমনীয় করে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এই থিংকট্যাংকের পরিচয় জানাতে এসেত রাজি হননি। শুধু এটুকু আভাস দেন যে সাবেক বুশ প্রশাসনের এক আন্ডার সেক্রেটারি এই ইনস্টিটিউটের সাথে জড়িত ছিলেন। এসেত বলেন, আমি সেটা লিখেছিলাম, কিন্তু তারা তা বিক্রি করতে সক্ষম হয়নি।

আমি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ইস্তান্বুলের এশিয়া অংশে একটি নিরানন্দ পার্কিং লটে একটি সাদা ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ফেরহাত নামের এক ব্যক্তি আমার হাতে একটি গøক ১৯ পিস্তল তুলে দেন। ভ্যানের দরজা খুলতে খুলতে তিনি বলেন, এটি সেই একই মডেলের পিস্তল যা তুর্কি সৈন্যরা ব্যবহার করে। ভ্যানের ভেতরে মেঝেতে একটি রকেট লাঞ্চার রাখা, আর র‌্যাকে ঝুলছে আরো ৬০টি নানা ধরনের অস্ত্র। সাবেক সৈন্য ফেরহাত একটি একে-৪৭ রাইফেল ও একটি স্নাইপার রাইফেল হাতে তুলে নিলেন। সামরিক উর্দি পরা লোকজন পার্কিং লটে ঘুরছিল। আমাদের চারপাশে আরবিতে লেখা স্ট্রিট সাইন ও সস্তা স্যুট পরিহিতা নারীদের বিজ্ঞাপনী ছবি শোভা পাচ্ছিল।

আমরা ‘ম্যাগনিফিশান্ট সেঞ্চুরি’র নির্মাতা কোম্পানি টিমস প্রোডাকশন্সের নতুন নির্মাণ ‘সোজ’ (শপথ)-এর সেটে ছিলাম। ৩৮ নম্বর এপিসোডের চিত্রায়ন চলছিল। একজন বিস্ফোরণ বিশেষজ্ঞ সৈনিকদের বাদুরে টুপি পরা এক ব্যক্তির সাথে হেলেদুলে হাঁটছিলেন, অন্যদিকে একজন অভিনেতা দুই হাতে দুটি রাইফেল ধরে একটি দৃশ্যের রিহার্সাল দিচ্ছিলেন। ‘সোজ’ একটি সামরিক ডিজি। এ এক নতুন উপ-ঘরানার যা জাতিকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছে। এর বিশ^ব্যাপী প্রভাব কতটা পড়বে তা ধারণা করা আগাম বিষয় হয়ে গেলেও ইতোমধ্যেই মেক্সিকোসহ বহু দূরদেশের বাজার থেকেই এটা পুননির্মাণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। টিমস বরাবরই আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে বলে আমাকে বলা হল। তারা ‘ম্যাগনিফিশান্ট সেঞ্চুরি’র জন্য হলিউড তারকাদের কাস্ট করার চেষ্টা করেছিল। এক ইউরোপীয় রাজকুমারীর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ডেমি মুরের সাথে চুক্তি স্বক্ষরের খুবই কাছে পৌঁছলেও স্বামী অ্যাশটন কুচারের সাথে ছাড়াছাড়ি সংক্রান্ত জটিলতায় তা আর সম্ভব হয়নি। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ