Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক নারীর একাধিক স্বামী

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নারীর সংখ্যা স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে কমে যাওয়ায় সেদেশের অনেক অঞ্চলে মানুষ ধর্ম সভ্যতা ও স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের সীমা থেকে বহু নিচে নেমে যাচ্ছে।

আদিকালের অসভ্য মানুষকে নানা ধর্ম সংস্কৃতি বিশেষ করে আল্লাহ তায়ালার মনোনীত জীবন ব্যবস্থা ইসলাম বহু শতকে যে উন্নত ও সভ্য মানবিক জীবন উপহার দিয়েছিল, অধর্ম ও অপসংস্কৃতি সেসবকে তিলে তিলে গ্রাস করছে। ভারতবর্ষের কথা বললে বলতে হয়, এ ভূখন্ডটি ইসলামের আগমনের ফলেই উন্নত ও সভ্য জীবনবোধ লাভ করেছে। ভারতবর্ষে ইসলামের অবদান সম্পর্কে এম এন রায়সহ বহু ইউরোপীয় ও ইন্ডিয়ান লেখকের প্রচুর বইপত্র আছে, যা থেকে বোঝা যায়, সভ্য ও উন্নত ভারত ইসলামেরই দান। এতে ইসলামী শাসন-উত্তরকালে সৃষ্ট সব অসুন্দর ও অশান্তির কারণ শুধু ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া। এককথায় ভারতবর্ষের কুসংস্কার ও মানুষের তৈরি নিবর্তনমূলক আইন রীতিনীতি থেকে মানুষকে মুক্ত করেছিলেন ইসলাম প্রচারক সুফী-দরবেশ ও শাসকরা। প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিঁখুত চিত্রের রূপকার মুসলিম বিজ্ঞানী আলেম ও বুজুর্গ আল্লামা আবু রায়হান আল-বিরুনীর লেখা গ্রন্থ ‘কিতাবুল হিন্দ’ ঐতিহাসিক স্থান দখল করে আছে। এরই অনুসৃতি মনে করা হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহর লাল নেহেরুর বই ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’কে।

বিজ্ঞানী আল-বিরুনীর বইয়ে ভারতে স্বামীর চিতায় জীবিত স্ত্রীকে দাহ করার যে চিত্র বর্ণিত আছে তা থেকে আন্দাজ করা যায়, কত কোটি কোটি নারীকে এ প্রথার জন্য জীবন দিতে হয়েছে। যদি ইসলাম না আসত তাহলে জানা নেই আর কত নারীকে এ কুসংস্কারের বলি হতে হতো। লক্ষ লক্ষ মানুষ ইসলাম গ্রহণের প্রধান কারণ ছিল এটি। পাশাপাশি উচ্চ ও ইতর শ্রেণি ভাগ করে কোটি মানুষের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করার নিকৃষ্ট বিধানও এ দেশে ইসলামের দ্রুত ও ব্যাপক প্রসারের একটি কারণ। অস্পৃশ্যদের উচ্চবর্ণের কূপ থেকে পানি খাওয়া নিষেধ ছিল। এ অপরাধে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হতো।

ভারতবর্ষে নানা অঞ্চলে ছিল পারিবারিক জীবনে বিশাল নৈরাজ্য। ব্রাহ্মণরা নানা বিধান তৈরি করে সারা দেশব্যাপী অগণিত বিয়ে করত। দুই-এক দিনের শিশু কন্যা থেকে তরুণী যুবতী পর্যন্ত এসব ধর্মগুরুর কাছে বিয়ে দিতে মানুষ বাধ্য ছিল। এতে দেখা যেত, লাখো নারীর গোটা জীবন ব্যর্থ হয়ে যেত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই নারীর একাধিক স্বামী প্রথা চালু ছিল। কোনো অঞ্চলে দেখা যেত, স্বামীর ভাইয়েরা তাদের বৌদির সাথে স্ত্রীর মতো আচরণ করত। আক্ষরিক অর্থে ‘দেবর’ শব্দটিতে মূলত ঐ প্রথারই একটি ছাপ দেখা যায়। ইসলাম আসার পর এক স্ত্রীর অধিক স্বামী ও দেবর অর্থ উপবর এসব ধারণা পাল্টে যায়। ধীরে ধীরে সতীদাহ প্রথার প্রতি মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করার সাহস পায়। সবশেষে ব্রিটিশ আমলে এ প্রথা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আধুনিক ভারতে আবার কোনো কোনো অঞ্চলে একই স্ত্রীর পাঁচ-সাতজন স্বামী নাম দিয়ে এক ধরনের অসভ্য ও অমানবিক জীবনযাপন পদ্ধতি দেখা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ পুরুষের অনুপাতে নারীর সংখ্যা মারাত্মক রকম কমে যাওয়া। এটি ভারতের জন্য একটি কঠিন ও ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।



 

Show all comments
  • মহররম আলী ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
    ভারতের অনেক অঞ্চল এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও সভ্যতার মুখ দেখেনি।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল কবির ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    ওরা কর্ত বরবর ও অসভ্য হলে এই ধরনের কাজ করতে পারে। ছি, আল্লাহ তায়ালা ওদের হেদায়েত দান করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • মেরিন-500 ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    কন্যা সন্তানের ভ্রণ যারা হত্যা করে তারা কেন বিয়ে করে। তাদের তো বিয়ে করার কোনো অধিকারই নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী মুহাম্মাদ আল-আমীন ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
    ভারত এমন একটা নোংরা রাষ্ট্র যেখানে সবই সম্ভব। আর এখন তো রাষ্ট্রই চালাচ্ছে বরবররা।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    ওদের কি মা বোন নাই!! কি অসভ্য আর বণ্য হলে এটা করতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৫৮ এএম says : 0
    এটি ভারতের জন্য একটি কঠিন ও ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:০৭ এএম says : 0
    এই লেখাটির জন্য লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • মনোয়ারুল ইসলাম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৪৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের বংশধরদের এসব হতে হেফাজত করুণ। আমিন.....
    Total Reply(0) Reply
  • মনোয়ারুল ইসলাম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৪৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের বংশধরদের এসব হতে হেফাজত করুণ। আমিন.....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন