নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
উইকেটে তাঁর সঙ্গে হেঁটে গিয়েছে বছর দেড়েক আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে আউট হয়ে যাওয়ার স্মৃতি। ভেতরে সেই নার্ভাসনেস না থেকে পারেই না! তবে গতপরশু হোম অব ক্রিকেটে আফিফ হোসেনকে দেখে তা বোঝার ছিল না। উল্টো সেই ব্যর্থতাকে ‘ব্যতিক্রম’ বলে প্রমাণের প্রতিজ্ঞাই যেন ফুটে বেরোল তাঁর শরীরী ভাষা থেকে। আসলে তো ‘ব্যতিক্রম’ই ছিল। ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে প্রথম বলটিকেই বোলারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে দেওয়া আর ম্যাচের দোদুল্যমান অবস্থায় কাইল জার্ভিসের বলে থার্ডম্যান আর ফাইন লেগ দিয়ে টিপিক্যাল টি-টোয়েন্টি শটে মারা বাউন্ডারিতে যেটির সুন্দরতম বহিঃপ্রকাশ।
যখন উইকেটে এলেন, জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৪৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের রান তখন ছয় উইকেটে ৬০। জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫১ বলে ৮৫। সেখান থেকে দলের হাল ধরলেন। উইকেটের চারিপাশে শট খেলে করলেন পাল্টা আক্রমণ। তাতে এলোমেলো জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতল অনায়েস। আফিফের ২৬ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে তিন উইকেটে হারাল বাংলাদেশ।
চারে মেরে খুলেছিলেন রানের খাতা। এরপর শেন উইলিয়ামসনের এক ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে তুলেন। ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখেন এ বাঁহাতি। মোসাদ্দেক লেগ স্পিনার বার্লকে এগিয়ে এসে পরপর দুই ছক্কা মেরে চাপ কমান। ধাপে ধাপে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান কমতে থাকে। দ্যুতি ছড়িয়ে ২৫ বলে আফিফ তুলে নেন ফিফটি।
জয়ের থেকে ৩ রান দূরে থাকতে আফিফ যখন সাজঘরে ফিরলেন তখন পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে। ড্রেসিং রুমের বাইরে টিম ম্যানেজম্যান্ট দাঁড়িয়ে স্বাগত জানালেন নতুন টাইগারকে। ড্রেসিংরুমের ভেতরে মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ আগলে ধরলেন অনুজকে। এমন দিনের জন্যই তো অপেক্ষা করেছিলেন আফিফ। ম্যাচ শেষে আফিফ জানিয়েছেন তিনি নিজের মতো করে খেলেছেন। আর এভাবে খেলতেই তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। এক্ষেত্রে তাকে কেউ বাধাও দেয়নি। তবে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি বলে কিছুটা আক্ষেপেও পুড়ছেন তিনি, ‘আমার চিন্তা ছিল আমি আমার মতো করে খেলব। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করার চেষ্টা করব। আমি সব সময় আমার মতো করে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমাকে কেউ বাধা দেয়নি কখনোই। নিজের ব্যাটিং নিয়ে অবশ্যই আমি সন্তুষ্ট। ম্যাচ জেতানোর মতো ইনিংস খেলতে পেরেছি। শেষ করে আসতে পারলে আরও ভালো লাগত নিজের কাছে।’ তবে এই বয়সেও টেকনিক বুঝে খেলার দক্ষতা বিস্ময় জাগানিয়া তো বটেই। ম্যাচের মোমেন্টাম নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মোমেন্টাম প্রথম বলে পরিবর্তন করেছিল অবশ্যই। ওরা চারটা ফিল্ডার বাইরে পেত। কিন্তু তিনটা বাইরে রেখে অ্যাটাক করার চেষ্টা করেছিল। ওটা পিক করতে পেরেছি। পাশাপাশি বল পিক করতে পেরেছি বলে প্রথম বল থেকে মারতে পেরেছি।’
শ্রীলঙ্কা সফরে বাজে অভিষেকের পর থেকেই ফেরার লড়াইটা চালিয়ে গেছেন নিজের সঙ্গে। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। দারুণ প্রতিভাবান ও ভবিষ্যতের একজন বলেই হাই পারফরম্যান্স দল, ইমার্জিং দল, ‘এ’ দলে সুযোগ মিলেছে নিয়মিত। তিনি পারফর্ম করে গেছেন। সবশেষ কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে তার সবশেষ তিন ইনিংস ছিল অপরাজিত ৬৮, ৫৪ ও অপরাজিত ১০০ রানে। আফিফ জানালেন, বাদ পড়ার পর যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, চেষ্টা করেছেন পারফর্ম করতে, ‘বাদ পড়ছিলাম, ওটা আমার কাছে দেখার বিষয় ছিল না। আমরা ভাবনা ছিল, যেখানেই খেলা হবে, আমার সেরা পারফর্ম করে আবার ফেরার চেষ্টা করব। এইচপি, ‘এ’ দলে যতগুলো ম্যাচ ছিল, সেগুলোতে ভালো করার চেষ্টা করেছি।’
পারফরম্যান্স দেখিয়ে জায়গা পেয়েছেন ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে। জায়গা টিকিয়ে রাখতেও প্রয়োজন ছিল পারফরম্যান্স। সেটিও করে দেখালেন প্রথম সুযোগে। আফিফের বিশ্বাস এইচপি, ‘এ’ দলের পারফরম্যান্স তাকে আরও পোক্ত করে তুলেছে। আর জাতীয় দলে ফেরার ম্যাচের পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে করে তুলবে আরও আত্মবিশ্বাসী, ‘এইচপি এবং ‘এ’ দলের হয়ে ভালো ভালো দলের বিপক্ষে খেলতে পেরে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এগুলো সামনে ইনশাআল্লাহ কাজে লাগাতে পারব। (এই পারফরম্যান্সের পর) সামনে যদি আরও সুযোগ পাই, সেখানে আমি আরও আত্মবিশ্বাস পাব। আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলতে পারব।’
২০১৬ সালে বিপিএলে অভিষেকেই তাঁর ৫ উইকেট। পাঁচ শিকারের মধ্যে ছিলেন ক্রিস গেইল নামে জ্যামাইকান ব্যাটিং দানবও। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়ার সেই কীর্তি এখনো অম্লান। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছেন, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম মৌসুমেই করেছেন হ্যাটট্রিক।
এই ম্যাচে আট নম্বরে নামলেও আদতে ওপেনার। বাঁহাতি বলে ‘ভবিষ্যতের তামিম ইকবাল’ তকমাও লেগেছে গায়ে। তবে বিকেএসপি ব্যাকগ্রাউন্ড, স্পিনিং অলরাউন্ডার এবং আবেগের ন্যূনতম প্রকাশ মিলিয়ে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বরং আফিফের বেশি মিল খুঁজে পাওয়া যায়। একদিন সত্যি সত্যি ‘সাকিব’ হতে পারবেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের হাতে তোলা।
তবে এদিন যেভাবে হলো তার প্রত্যাবর্তন তাতে উত্তরটা পেতে খুব বেশি অপেক্ষা হয়তো করতে হবে না দেশের ক্রিকেটকে। ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। অভিজ্ঞতার বিচারে না হলেও শক্তির বিচারে অবশ্যই এগিয়ে রশিদ খানের দল। টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংও দিচ্ছে তার প্রমাণ। আজও কি নায়ক হতে পারবেন আফিফ, নাকি দেখা মিলবে অন্য কোন নায়কের!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।