পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলাম বলেছেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের বরাদ্দ থেকে শতকরা ৬ ভাগ চাঁদা দাবি করেছেন। তারা ‘ঈদের খরচ’ হিসেবে এ অর্থ দাবি করেন। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ‘শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর এমন অভিযোগকে ‘মিথ্যা গল্প’। গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভিসি ফারজানা ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী যে চিঠি দিয়েছেন, সেই গল্পটা তাদের সাজানো অপপ্রচার। আমি জোরের সঙ্গে বলছি, গল্পটা মিথ্যা। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প সাজিয়েছেন। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি বিষয়টি প্রমাণ করতে। শুধু তাদের নয়, আমি অনুসন্ধান করতে বলছি সাংবাদিকদের। বিষয়টি তদন্ত করতে বলব চ্যান্সেলর এবং ইউজিসিকে, যে তদন্ত করে দেখুন আসল সত্যটা কী।
ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা তার কাছে চাঁদা দাবি করার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভিসি বলেন, গত ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আমার বাসভবনে আলোচনার জন্য আসেন। আলোচনার একপর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে চাঁদা দাবি করেন তারা। আমি তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। এতেই শোভন-রাব্বানী হতাশ হন। সে কারণেই এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন তারা। জাবি ভিসি ফারজানা বলেন, শোভন-রাব্বানী এখন বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আমার কাছে শোভন-রাব্বানী ৪ থেকে ৬ শতাংশের দাবি নিয়ে এসেছিলেন, সেটি তো একবারও বলেননি। তারা বলেছিলেন, অন্য জায়গায় কাজের পার্সেন্টেজ অনেক বেশি পান, আমাদের এখানে শোনা যাচ্ছে কম। এত কমে তো পারা যাবে না। আমি বলেছি, আমি কমানো-বাড়ানোর কেউ না। আমার সঙ্গে টাকা নিয়ে কোনো কথা বলবে না। তোমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসছ, সাক্ষাৎ হয়ে গেলে তোমরা চলে যেতে পার।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময়ও তাকে ছাড় দেয়া হয়নি দাবি করে ভিসি বলেন, আমি যখন হাসপাতালে ছিলাম তখনও শোভন-রাব্বানী আমাকে ছাড় দেননি। রাত ১১টার পর হাসপাতালে গিয়ে আমার সঙ্গে শিডিউল নিয়ে কথা বলেছেন। আমি যখন শুনলাম আমার কক্ষের বাইরে এবং হাসপাতালের নিচে প্রায় ৩০০ ছেলে এসেছে তখন আমি অনিরাপদ বোধ করেছিলাম। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন আরও দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। কারণ আমার ঠিক উল্টো পাশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও ভর্তি ছিলেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। তারা দেখেছে জাহাঙ্গীরনগরে আন্দোলন চলছে, এ সুযোগে তাদের অপকর্ম ঢাকতে। এজন্য আমাকে জড়িয়ে টাকা দেয়ার বিষয়টা ট্যাগ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ফারজানা ইসলাম বলেন, কিছু লোক আছে যারা আমাকে দুর্নীতিগ্রস্ত বানানোর জন্য চেষ্টা করছে। আমি এসবকে ভয় পাই না। আমার মনে হয় এসব নিয়ে ভালো অনুসন্ধান হওয়া দরকার।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক চিঠিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। চিঠিতে রাব্বানী উল্লেখ করেন, ‘জাবি প্রশাসন (বিশ্ববিদ্যালয়) শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে।’
রাব্বানীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ রাব্বানীর এ বক্তব্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে পৃথক বিবৃতি দেয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপরিকল্পনার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। ভিসি প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে দুই কোটি টাকা জাবি শাখা ছাত্রলীগকে দিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন অভিযোগ ওঠে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তিন দফার দুটি মেনে নেয় প্রশাসন। দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাই শেষে আগামী বুধবার আবার বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রকল্পের কাজ থেকে স্বামী ও ছেলের কমিশনের বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘আমার ছেলে-স্বামী কখনই তাদের ফোন করেনি। বরং তারাই ফোন করে দেখা করতে এসেছিল। তারা টাকার জন্য বিভিন্ন সময় প্রতিনিধি পাঠিয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের বিরক্ত করেছে। এখন এসব কথা বলে তারা আমার পরিবারের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।’
ছাত্রলীগ কেন এমন আপনার পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে গণমাধ্যমে বলবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জাবি ভিসি বলেন, ‘আমি দুর্ভাগ্যক্রমে শোভন-রাব্বানীর শেষ তীর ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পটভ‚মিতে যেন ছাত্রলীগের পচন না ধরে, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী তদন্ত শুরু করেছিলেন। ছাত্রলীগ তাদের এসব কার্যকলাপ থেকে দৃষ্টি এড়াতে, নিজেদের বাঁচাতে এসব গল্প বানিয়েছে।’ এছাড়া ক্যাম্পাসের আন্দোলনের সঙ্গে দুর্নীতির বিষয়টি তারা জড়িয়ে দিয়েছে বলেও দাবি করেন ভিসি ।
এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলছেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে কোন টাকা দেয়নি, বরং ভিসি তার ছেলে ও স্বামীকে ব্যবহার করে প্রকল্পের টাকা থেকে বিশাল অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করেন। আর সেই বাণিজ্য ঠিকমত করতেই শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে।’
তবে এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে শাখা ছাত্রলীগ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক এম মাইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকল্প ঘিরে জাবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য ও মিথ্যা।’
এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও শাখা ছাত্রলীগের এমন অবস্থানের মুখে বিপাকে পড়েছে জাবি ভিসি অধ্যাপক ফারাজানা ইসলাম। তিনি দাবি করেছেন, ‘শাখা ছাত্রলীগকে কোন টাকা দেয়া হয়না, বরং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চলমান প্রকল্পের টাকা থেকে ৪-৬ শতাংশ টাকা দাবি করেছেন।’
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘শাখা ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্ববিরোধী বক্তব্য এই অভিযোগকে সত্যের দ্বারপ্রান্তের পৌঁছে দিয়েছে। এখানে একটি পুকুর চুরির ঘটানা ঘটেছে বলে আমরা ধারণা করছি। তাই আমরা মনে করছি সুষ্ঠু, স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসুক।
তিনি আরো বলেন, যদি তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তাকে পদচ্যুতই নয় বরং রাষ্ট্রীয় ফৌজদারী আইনের আওতায় তাকে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
এ বিষয়ে তেল গ্যাস খনিজ বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মাদ বলেন, ‘দুর্নীতির বিষয়টি শুধু ভিসির দাবিই নয়’ আমরা তো অনেক আগে থেকেই এ দাবি করে আসছি। প্রকল্পের কাজের শুরু থেকেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডর ছিনতাই ও চাঁদা দাবির অভিযোগ এসেছে। এটা অনেক বরাদ্দ তাই ঝুঁকিও বেশি। এজন্য আমরা স্বাচ্ছতার কথা বলে আসছি।’
তিনি আরো বলেন, অভিযোগ ওঠার শুরুতেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), ইউজিসি বা চ্যান্সেলর কার্যালয় থেকে তদন্ত করার প্রয়োজন ছিল। আমরা চাই সরকার দায়িত্ব নিয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত কমিটি করে তারা গ্রহণযোগ্য রিপোর্ট প্রকাশ করুক। তবে তদন্ত যেন অপরাধীকে আড়াল করার উদ্দেশে গঠিত না হয়ে সে ব্যাপারেও সতর্কতার কথা বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর গণমাধ্যমে খবর বের হয় ‘প্রক্টল্পের কাজ নির্বিঘেœ করতে’ শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে টাকা দেয়া হয়েছে। এমন খবর প্রকাশ পাওয়ার পর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনে নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। অন্যদিকে কোনো টাকার লেনদেন হয়নি এমন দাবি করে ভিসিপন্থী শিক্ষকরাও মানববন্ধন, মৌনমিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রশাসন। আলোচনা থেকে প্রশাসন দুটি দাবি মেনে নেয়। আর দুর্নীতির তদন্তের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে প্রশাসন তিন কর্মদিবস সময় চেয়েছেন।’
এই বিষয়ে বিশ্বববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘তিনদফা দাবির মধ্যে প্রথম দফা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘিরে তিনটি আবাসিক হল নির্মাণের স্থান পুনর্নিধারণ করা হবে। এর মধ্যে একটি হল নির্ধারিত স্থানের ১০০ ফুট পশ্চিমে সরিয়ে নেয়া হবে। আর দুইটি হল শিগগিরই আলোচনা করে নতুন স্থান নির্ধারণ করা হবে।’
তৃতীয় দফার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পর্যালোচনার ভিত্তিতে মহাপরিকল্পনার প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। বর্তমানে মহাপরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য যে বিশেষজ্ঞ কমিটি রয়েছে তা পুনর্গঠন করা হবে। প্রকল্পের কাজের গুনগত মান নিরীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠন করা হবে। প্রকল্পের কাজের ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষে ব্যয়ের হিসাব কাজের অগ্রগতি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিস থেকে সর্বদলীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে অবহিত করা হবে।’
আর দ্বিতীয় দফা প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে আইনী পরামর্শের জন্য আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় নেয়া হয়েছে। বুধবার আবার সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী বুধবার এ ব্যাপারে ফের আলোচনায় বসবে দুইপক্ষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।