বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য সরকার জরুরি অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। জনগণের সহযোগিতা ও প্রশংসা যেমন পাচ্ছে, তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন, কৌশলগত দুর্বলতা, মানুষের সন্দেহের শিকার, সমালোচনার শিকার হওয়া ইত্যাদি সবই তাদের সামনে আসছে।
প্রকৃত ধার্মিক লোক কোনো দিন সন্ত্রাসী হয় না, হতে পারে না। শুরু থেকে এ পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা রেখেছে দেশের আলেম সমাজ। ভয়াবহ সব জাতীয় সঙ্কট মোকাবেলায় সবাই ব্যর্থ হলেও যখন তারা মসজিদের আশ্রয় নিয়েছেন, তখন সফল হয়েছেন। জনমত তৈরিতে ইমাম-খতিব ও পীর-মাশায়েখের ভ‚মিকা বাংলাদেশে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আর তাই জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে কেউ যখন সন্ত্রাসের সূচক বা চিহ্ন হিসেবে পবিত্র ইসলামের প্রতীক, নিদর্শন বা মহান সুন্নাহকে প্রকট করে তোলে; তখন ধর্মপ্রাণ ও বিবেকবান নাগরিকদের বুকে আঘাত লাগা স্বাভাবিক। সন্ত্রাস আমরা কেউই চাই না। যারা সন্ত্রাসী তাদের নিদর্শন ও চিহ্ন সরকার তদন্ত করে খুঁজে পাক, গবেষণা করে বের করুক, সেটাই আমরা চাই।
কিন্তু এসব কাজের মধ্য দিয়ে ৯২ ভাগ মানুষের ধর্মীয় বিধানকে খাটো করার, দোষী প্রমাণিত করার কিংবা সন্ত্রাসীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করার কাজটি মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। কেউ বুঝেশুনে করলে তো নয়ই, না বুঝে করলেও নয়। বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে নেই, তবে দু-একটি উদাহরণ ছাড়া লেখাটি সম্পূর্ণ হবে না।
প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, জান্নাতে যাওয়ার কথা বলে সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করা হয়, মানুষ মেরে কোনো দিন জান্নাতে যাওয়া যায় না, শহীদ হলেই তারা সোজা জান্নাতে চলে যাবে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে যথার্থ জায়গায় প্রয়োগ করা হলে এ কথাগুলো কি অবাস্তব? অবৈধ সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে এ কথাগুলো ঠিক নয়। কিন্তু প্রকৃত ন্যায়ের যুদ্ধ, জান-মাল, ঈমান ও দেশ রক্ষার যুদ্ধ কিংবা ইসলামের জিহাদের ক্ষেত্রে জান দেয়া, শত্রুকে হত্যা করা, শহীদ হওয়া, সরাসরি জান্নাতে যাওয়া, পরকালে বেহেশতে যাওয়া- এসব কথা কি চরম সত্য নয়?
এসবের ব্যাপারে ঈমানদারের মনে কি কোনো সন্দেহের অবকাশ আছে? না এসব নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলে ঈমান থাকবে? আমাদের খুব গভীরভাবে এসব নিয়ে ভাবতে হবে। অবৈধ সন্ত্রাসকে কিংবা ইসলামের জিহাদের অপব্যাখ্যাকে অস্বীকার করতে গিয়ে আলেম, ইমাম, ইসলাম প্রচারক, ধর্মীয় নেতা, ধর্মপ্রাণ মানুষ, সরকার, আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ কেউ যেন ইসলামের বিরুদ্ধে কথা না বলেন। ঈমান চলে যায়, এমন কোনো ধারণা বা মন্তব্য না করে বসেন।
প্রচারণায় বলা হচ্ছে, হঠাৎ যদি কারো মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়, বন্ধুবান্ধবকে এড়িয়ে চলে, টাখনুর ওপর প্যান্ট বা পায়জামা পরে, আকস্মিক ধর্মপরায়ণ হয়ে যায় প্রভৃতি কারণে সে সন্ত্রাসী হয়ে যেতে পারে। এমন পরিবর্তন দেখামাত্রই পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। পুলিশ তাদের ধারণা ও আদর্শ পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করবে।
কেউ নামাজ পড়ত না এখন নামাজ ধরল, ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন ছিল এখন সচেতন হয়ে দাড়ি রাখল, টুপি ব্যবহার শুরু করল, প্যান্ট বা পায়জামা টাখনুর ওপর পরতে লাগল, অধার্মিক বন্ধুবান্ধবকে এড়িয়ে চলে, দ্বীনদার পরহেজগার নতুন বন্ধু সার্কেলে প্রবেশ করল, সুস্পষ্ট হারাম কাজকর্ম, যেমন- মাদক, অশ্লীলতা, নাচগান ইত্যাদি পরিহার করে শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংস্কৃতি বেছে নিলো কিংবা নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনকে দ্বীনি শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সচেষ্ট হলো, তাহলে প্রকৃতই কোনো অবৈধ সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে তার কোনো সংযোগ কিংবা অন্তর্ভুক্তি প্রমাণিত না হওয়া সত্তে¡ও তাকে সন্ত্রাসের জন্য সন্দেহ করা, অন্যদের মনে সন্দেহ জাগিয়ে তোলা, পুলিশকে খবর দিতে বলা- এসব কি বাড়াবাড়ি নয়?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।