Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিন্দি দিবসেই এর বিরুদ্ধে ভাষা যুদ্ধের হুমকি

রাজ্যে রাজ্যে প্রতিবাদ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ আগে থেকেই চলছিল। কিন্তু গতকাল হিন্দি দিবসে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বার্তার পর সেই প্রতিবাদ আরও জোরালো রূপ নিয়েছে। তামিলনাড়ুর রাজনীতিবিদ এমকে স্ট্যালিন বলেছেন, তিনি (অমিত শাহ) ভারতীয় অখন্ডতাকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছেন, যেটা বেদনাদায়ক ও নিন্দনীয়। এদিন রাজ্যটির দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাঘাম (ডিএমকে) দলের এই নেতা বলেন, হিন্দির প্রাধান্যের কারণে অধিকার হারাতে বসা রাজ্যগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি দ্বিধা করবেন না। এটা ইন্ডিয়া, হিন্দিয়া না।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি অমিত শাহের বক্তব্যের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দেন, তবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আরেকটি ভাষার লড়াইয়ের হুমকি দেন তিনি।

এর আগে হিন্দি দিবসের বার্তায় অমিত শাহ বলেন, একটি ভাষাই বিশ্বজুড়ে ভারতের পরিচয় নির্ধারণ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, হিন্দি হচ্ছে ব্যাপক ব্যবহৃত ও সহজবোধ্য ভাষা। কেবল এই একটি ভাষাই দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। প্রতিবছর ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতে হিন্দি ভাষা দিবস পালন করা হয়। ভাষাটি চর্চা ও প্রচারই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য।
অমিত শাহের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে টুইটারে দেয়া এক বার্তায় এমকে স্ট্যালিন বলেন, হিন্দিকে চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে আমরা অব্যাহত প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। অমিত শাহের এ দিনের মন্তব্য আমাদের একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে।

‘এতে দেশের ঐক্যে নষ্ট হবে। কাজেই তার দেয়া বিবৃতি ফিরিয়ে নিতে তাকে অনুরোধ করছি।’
ভারতের চলতি বছরের জাতীয় শিক্ষা নীতির একটি খসড়া সংস্করণে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দি ভাষা শেখার কথা বলা হয়েছে। এরপর জুনে এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তামিলনাড়ুর দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল এআইএডিএমকে ও ডিএমকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলছে, দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে হিন্দিকে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সে সময় ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারকে হুশিয়ার করে এমকে স্ট্যালিন বলেন, হিন্দিকে চাপিয়ে দিলে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। এমডিএমকে নেতা ভাইকো কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভাষা যুদ্ধের’ হুমকি দিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে যেসব রাজ্যের লোকজন হিন্দি ভাষায় কথা বলেন না, তাদের ওপর এটি চাপিয়ে দেয়ার বিরোধিতা করে আসছে তামিলনাড়ু। রাজ্যটিতে এই ইস্যুটি খুবই স্পর্শকাতর। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪০ ও ১৯৬৫ সালে এ নিয়ে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে।

জুনের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী। তিনি বলেন, কোনো অজুহাতেই কারের ওপর কোনো ভাষা চাপিয়ে দেয়া উচিত হবে না। টুইটারে কুমারস্বামী প্রশ্ন রাখেন, হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে আগামী পহেলা নভেম্বর কন্নড় ভাষা দিবস পালন করা হবে কিনা।
কর্নাটক রাজ্যের সরকারি ভাষা কন্নড়। রাজ্যটির সাড়ে তিন কোটি লোক এই ভাষায় কথা বলেন। তবে মাতৃভাষী ও দ্বিতীয় ভাষাভাষী হিসেবে সবমিলিয়ে কন্নড় ভাষীর সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি হবে। আর এটি ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার একটি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও কেরালার কংগ্রেস এমপি শশী থারুরও হিন্দিকে চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে হুশিয়ার করেছেন। থারুর বলেন, দক্ষিণে আমাদের অধিকাংশই হিন্দিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিখি। কিন্তু উত্তরের কেউ-ই মালয়ালাম কিংবা তামিল শেখে না। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়ায় পরিবর্তন করেছে। হিন্দির শেখার বাধ্যবাধকতা সরিয়ে নেয়া হলেও তা তামিলনাড়ুর নেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকে বলছে, তার দেশ দ্বি-ভাষার নীতিই অনুসরণ করবে। তারা তামিল ও ইংরেজি শিক্ষার নীতিকেই মেনে চলবে।
এএমএমকে নেতা টিটিভি দ্বিনাকরণ বলেন, অহিন্দি ভাষীদের ওপর হিন্দি চাপিয়ে দিলে বহুত্ববাদ ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে যারা হিন্দি ভাষায় কথা বলেন না, তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়ে যাবেন।
কারো ওপরই কোনো একটি ভাষা চাপিয়ে দেয়া উচিত না বলে মনে করেন অভিনেতা কমল হাসান। যদিও তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সূত্র : এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ