বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত আলোচনায় আমরা ইয়াজুজ মা’জুজ সম্পর্কে দু’টি আয়াত উদ্ধৃতি করেছিলাম। ওই দু’টি আয়াতে কারিমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে স্বভাবতই মনের কোণে প্রশ্নের উদয় হয় যে, ইয়াজুজ মাজুজ কারা? কোথায়ই বা তাদের বসতি ছিল? উত্তরে বলা যায়, আল কোরআনে এ দু’টি জাতির বিস্তারিত পরিচয় দেয়া হয়নি। তবে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে যে, ইয়াজুজ মাজুজ দু’টি জাতির নাক চেপ্টা ও তারা ছোট ছোট চোখ বিশিষ্ট। এশিয়া মহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এ জাতির লোকেরা প্রাচীনকাল হতেই পার্শ্ববর্তী নিরীহ দেশসমূহের ওপর আক্রমণ করে লুটতরাজ চালাত। মাঝে মধ্যে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ উভয় দিকেই প্রবল বন্যার আকারে হামলা ও ধ্বংসের থাবা বিস্তার করত।
বাইবেলের আদি পুস্তকের (ওল্ড টেস্টাম্যেন্ট) দশম অধ্যায়ে তাদেরকে হযরত নূহ আ.-এর পুত্র ইয়াকেলের বংশধর বলা হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিকগণও এ কথাই মনে করেন যে, রাশিয়া ও উত্তর চীনে এদের অবস্থান ছিল। সে অঞ্চলে অনুরূপ চরিত্রের কিছু দুর্ধর্ষ উপজাতি রয়েছে যারা তাতারী, মোঙ্গল, হুন ও সেখিন নামে পরিচিত।
তাছাড়া এ কথাও জানা যায় যে, তাদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ককেম্পসের দক্ষিণাঞ্চলে দরবন্দ ও দারিয়্যাল পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। ইসরাইলি ঐতিহাসিক ইউসিফুল তাদের সেখিন জাতি বলে মনে করেন এবং তার ধারণা তাদের এলাকা ছিল কৃষ্ণ সাগরের উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক জিরোম-এর বর্ণনা মতে জানা যায়, মাজুজ জাতির বসতি ছিল ককেসিয়ার উত্তরে কম্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে। সুতরাং এ কথা স্পষ্টতই বলা যায়, চেপ্টা নাক ও ছোট চোখওয়ালা সেসব সম্প্রদায় বর্তমানে ঐসব অঞ্চলে বসবাস করছে, তারা ইয়াজুজ মাজুজেরই পরবর্তী বংশধর।
ইয়াজুজ মাজুজের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কথা রাসূলুল্লাহ সা.ও বলেছেন। নবীপত্মী যয়নাব বিনতে জাহাশ রা. বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সা. অকস্মাৎ ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। তখন তার চেহারা রক্তিম দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেন, আরবদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। আজ সদ্দে সিকান্দারের (জুলকারনাইনের প্রাচীরের)-এর পরিমাণ খুলে গেছে।
তিনি তার তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা কড়ার ন্যায় বানিয়ে ছিদ্রের পরিমাণ দেখালেন। আমি বললাম, আমাদের মাঝে বিদ্যমান সৎলোকগুলো থাকা সত্তে¡ও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপাচার অধিক মাত্রায় বেড়ে যাবে। (সহিহ বুখারী : ৪/৩৩৪৬)।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর ওফাতের কয়েক যুগ পর তাতার গোষ্ঠী আরবে ব্যাপকভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, হালাকু খানের হিংস্র সেনাদলের আক্রমণে আব্বাসীয় বংশের সর্বশেষ খলিফা আল মোতাসিমের শাসনাধীন গোটা আরব সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। এটাই রাসূলুল্লাহ সা.-এর স্বপ্নের প্রতিফলন কি না তা আল্লাহপাকই ভালো জানেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।