বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সন্ত্রাস নির্মূলের নামে যত প্রয়াস সবই জনগণের নিরাপত্তার জন্য। বর্তমান যুগে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ও বোমা আধুনিকতারই সৃষ্টি। আগে মানুষ এত ব্যাপকভাবে মানুষের ক্ষতি করতে পারত না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষকে ধ্বংস করার ব্যবস্থাও ব্যাপক ও গতিশীল হয়েছে। সন্ত্রাসীরা দোষী-নির্দোষ নির্বিশেষে কোনোরূপ যুদ্ধাবস্থা ছাড়াই যেভাবে মানুষ মারে তা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। এরপরও দুনিয়াব্যাপী বড় বড় যুদ্ধ ও মারাত্মক সন্ত্রাস যারা পরিচালনা করছে তারা যুদ্ধবাজ, জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত নয়। দুনিয়ার কতিপয় পরাশক্তি মিলে গত পঁচিশ বছরে অন্তত তিন কোটি মুসলমানকে হত্যা করেছে। এরপর মুসলমানদেরই নাম দেয়া হয়েছে জঙ্গি, সন্ত্রাসী ইত্যাদি। বিশ্বরাজনীতির এ অসততা সভ্যতার জন্য খুবই লজ্জাজনক। মনুষ্যত্বের ইতিহাসে এ সময়টি একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে।
ইসলাম সন্ত্রাস পছন্দ করে না। নিজে তার অনুসারীদের সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে বলে। আর সারা মানবজাতিকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে ইসলামই সবচেয়ে বেশি সচেতন। পরিস্থিতির ফলে আমাদের বাংলাদেশ সন্ত্রাসের সম্ভাবনার মধ্যে আছে। ইসলাম সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না বলেই বাংলাদেশে সন্ত্রাস ব্যাপক রূপ নেয় না। যখনই অনৈতিক সন্ত্রাস ও অমানবিক নির্যাতন মাথা চাড়া দেয় তখন আলেম-ওলামা ও ইসলাম প্রচারকগণ একযোগে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ করেন। জনগণকে সচেতন করেন। এরপরও খুন, গুম, নির্যাতন দিন দিন কেবল বাড়ছেই।
রাজনৈতিক লোকজন বিরোধী পক্ষ কিংবা প্রভাব বিস্তারে নিজ প্রতিপক্ষকে সন্ত্রাসের দ্বারাই মোকাবিলা করে। বেআইনি অস্ত্র রাখে। দাঙ্গা-হাঙ্গামায় দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। এমন কোনো সপ্তাহ বা মাস যায় না যখন দেশের নানা স্থানে সন্ত্রাস ও মারামারি না হয়। এমন কোনো দিন যায় না যখন ছিনতাই, মাস্তানী, চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতন না হয়। কিন্তু সমাজের এসব জুলুম-নির্যাতনকে সন্ত্রাস না বলে যেকোনো কারণে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে শুধু ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করে কিছু কাজকেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলে উল্লেখ করা হয়।
এক সময় বিনা কারণেই দায়িত্বশীল কিছু লোক কওমী মাদরাসাকে সন্ত্রাসের প্রজননকেন্দ্র আখ্যায়িত করে। এরপর অসংখ্য ঘটনায় দেখা যায় কওমী মাদরাসা বা প্রকৃত ইসলাম অনুসারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কথিত সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত নয়। গত ১০-১৫ বছর যাবৎ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রকৃত দীনদার মানুষ বা কওমী ঘরানার সাথে সন্ত্রাসের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়টি সরকারপ্রধান থেকে নিয়ে বহু নেতা, মন্ত্রী, নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলের মুখে জনগণ বার বার শুনতে পেয়েছে। বাস্তবতাও তা-ই, যা বাংলাদেশের জনগণ যুগ যুগ ধরেই জানে।
বড় বড় কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জড়িত প্রমাণিত হওয়ার পর তাদের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার যেসব কারণ তদন্তকারীরা খুঁজে বের করেছেন সেসব নিয়ে তারা গবেষণা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একশ্রেণির ইসলামবিদ্বেষী বুদ্ধিজীবী ও নাস্তিক-মুরতাদ ঘরানার লোক যে ভাষায় কথা বলে, আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের কারো কারো বক্তব্যেও সেই ভাষার ছাপ দেখা যায়, যা খুবই দুঃখজনক ও আশঙ্কাপূর্ণ বিষয়। সন্ত্রাসের সাথে এ দেশের ৯২ ভাগ মানুষের চেতনা, বিশ্বাস ও জীবনধারাকে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে ফেলার এই প্রয়াস জেনে-বুঝে চলছে, নাকি না বুঝে-শুনেই একটি পক্ষ চালিয়ে যাচ্ছে তা তাদেরই ভাবতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।