Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশুলিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ

সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৫:৩৪ পিএম

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বখাটে ও সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে। এরা মহাসড়কে চলাচলরত গণপরিবহনে চাঁদা আদায় থেকে শুরু করে, জমি দখল, পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসা দখল, ডিস ব্যবসা দখল, সরকারী খালের জমি দখল করে বিক্রি করে দেওয়া ও চাঁদাবাজীসহ সব ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সাভার উপজেলার ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের রয়েছে ৩০/৩৫ জনের একদল সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের মধ্যে আবার সিনিয়র/জুনিয়র রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিমাসে তাদের বেতন দেন তিনি।

চেয়ারম্যানের নিজস্ব এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে তাকেও প্রাণ নাশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। বেতন ভুক্ত ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে চেয়ারম্যান তার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের ক্যাডার বাহিনীর মধ্যে রয়েছে- মাহবুব, রিয়াজ, রিয়াদ মোল্লা, গাউছ, দাউদ, সুলতান, পান্নু, তমাল, ফরহাদ, সবুজ, ওয়াসিম গাজী, রতন, কামরুল, ফাহিম, মিলন, রোমেল, আজাদ, কালাম, ছোট মাহবুব, সেকেন্দার, নজরুল, সোহেল, সুমন, জাকির, আব্দুল আল কাদির, রানা, কুদ্দুস, নজরুল ও সাফি। এছাড়াও বেতন ছাড়া চেয়ারম্যানের বিভিন্ন অবৈধ কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে সুবিধা পাওয়ার মধ্যে ওয়েলকাম মিন্টু, চান মিয়া, সজিব, সুমন, তুষার, আল-আমিন সরকারসহ আরো প্রায় ১০/১৫ জন সদস্য রয়েছে।

চেয়ারম্যানের এই ক্যাডার বাহিনীর দল নেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাহবুবকে। আর প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে সন্ধ্যার দিকে পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার লাবনী রেষ্টুরেন্টে বসে চেয়ারম্যান তার এই ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের মাসিক বেতন প্রদান করে থাকে। এদের মধ্যে রিয়াজ, সবুজ, গাউছ, সুলতান, পান্নু, ফরহাদের বেতন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে থাকেন বলে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়াও তার বাহিনীর মধ্যে সবুজ ও ফাহিম পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার চিহ্নত মাদক ব্যবসায়ী। এর আগে ইয়াবাসহ ঢাকা জেলা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তারা গ্রেপ্তার হয়েছিল।

আমিন মডেল টাউন এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, তার ভাই সাবেক সেনা সদস্য আরিফ বিল্লাহ (সার্জেন্ট) ক্যান্টমেন্ট এলাকার পাশের আমিন মডেল টাউন এলাকায় নিজেদের একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের লোক সুমন, সজিব, মনা, আলামিন, সোহেলসহ আরো বেশ কয়েকজন মিলে তার ভাইয়ের কছে চাঁদা দাবী করে। ঁচাদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসীরা তার ভাইকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে এসে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক এস আই মনিরুজ্জামান বলেন, সন্ত্রাসীরা এলাকার চিহ্নিত ব্যক্তি। তারা প্রথমে ওই সেনা সদস্যের নির্মাণাধীন ভবনে ইট, বালু, সিমেন্ট দেওয়ার কথা বলে ঠিকাদারী কাজ নেয়। এর পর থেকেই নি¤œমাণের ও কম মালামাল সরবরাহ করে পুরো টাকা দাবী করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সেনা সদস্য এর প্রতিবাদ করে তাদের ঠিকাদারী বাতিল করে দিলে তার কাছে নগদ কয়েক লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দেওয়ার কারনেই ওই সেনা সদস্যকে মুঠোফোনে বাড়ি থেকে ডেকে এনে হত্যা করা হয়।

সেনা সদস্যের ভাই অভিযোগ করে আরো বলেন, পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় কেউ নতুন বাড়ী নির্মাণ করলেই চেয়ারম্যানের লোকজনদের চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে তার বাড়ির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আশুলিয়ার শ্রিপুর এলাকায় গেদুরাজের ছেলে কাউছার বলেন, তার ভাই শাহিন স্থানীয়ভাবে প্রভাশালী হয়ে উঠছিল। তাকে দমানো ও তার ডিস ব্যবসা দখলের জন্য চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য রিয়াজ, পান্নু, সুমন ও নাদিমসহ আরো বেশ কয়েকজন তার ভাইকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরে এ ঘটনায় তারা চেয়ারম্যানের ক্যাডার সদস্যদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পর থেকে তার পুরো পরিবার চেয়ারম্যানের লোকজনের আতঙ্গে রয়েছে। গত কয়েকমাস যাবৎ তার বাবা ও তিনি চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।

পরিবহন শ্রমিক লীগের আশুলিয়া থানা শাখার এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনী বাইপাইল এলাকায় তার কাউন্টার থেকে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দেওয়ায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জনের একদল সদস্য অস্ত্র নিয়ে তার উপর হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে ক্যাডার সদস্যদের নামে মামলা দায়ের করেছেন।

আশুলিয়ায় বাপাইল ও নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিভিন্ন গাড়ীর চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নবীনগর-চন্দ্রা ও আব্দুল্লাপুর-বাইপাইল মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত যাবনাহন থেকে চাদা আদায় করে চেয়ারম্যানের লোকজন। এর মধ্যে ওয়েলকাম ও মৌমিতা পরিবহনের প্রায় ১৫০টি বাস থেকে ৩০ টাকা, আশুলিয়া ক্লাসিকের প্রায় ১১০ টি বাস থেকে ২৪০ টাকা ও প্রায় ৫০টি মিনিবাস থেকে ১২০ টাকা করে চাদা নেওয়া হয়। এমনকি তাদের হাত থেকে বাদ যায়নি স্থানীয় সড়ক দিয়ে চলাচলরত অটোরিক্সা। পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার আমিন মডেল টাউন স্কুলের সড়ক দিয়ে প্রায় ২৫টি অটোরিক্সা চলাচল করে। প্রতিদিন এসব অটোরিক্স থেকে মাহবুবের লোকজন ৭০ টাকা করে আদায় করে। এছাড়াও ওয়েলকাম ও মৌমিতা পরিবহন থেকে চাদা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েলকাম মিন্টু তার সহযোগী চান মিয়া।

অন্যদিকে আশুলিয়ার বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নুরুল আমিন নামের এক ব্যবসায়ীর নির্মাণাধীন প্রায় ২৫ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর ম্যানেজার রতন বলেন, জমির মালিক আমিন গত ঈদে হজের জন্য সৌদি আরব চলে যায়। আর ইউপি চেয়ারম্যান এরই সুযোগে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে পুরো জমি দখল করে নেয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এবিষয়ে জানতে ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের মুঠফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ