পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের লাগোয়া পতেঙ্গায় দেশের প্রধান জ্বালানি তেলের স্থাপনাসমূহের অবস্থান। সেখান থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদীপথেই ৯০ শতাংশ জ্বালানিতেল পরিবাহিত হয়। হরেক রকম গলদ এ ব্যবস্থায়। ছোট ছোট ট্যাংকার-জাহাজযোগে পরিবহনের সময় রিভার লস, শিপিং লসের সঙ্গে হচ্ছে চুরি-দুর্নীতি। সময় ও অর্থের অপচয় বেশুমার।
উত্তাল নৌপথে দুর্ঘটনা, ঝড়-বন্যাসহ আছে বৈরী আবহাওয়ার যত বাধা। সড়কপথে যানজট। রেল ওয়াগনের রয়েছে সঙ্কট। রেলপথে পরিবহনেও দীর্ঘ সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে করে শত শত কোটি টাকা রাষ্ট্রের গচ্ছা যাচ্ছে। তেলদূষণে সর্বনাশ ঘটছে নদ-নদী, সাগর উপকূল, পরিবেশ-প্রকৃতি, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের।
পুরনো আমলের সেই পরিবহন সিস্টেমে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে এবার নবযুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত। পতেঙ্গা গুপ্তখাল টার্মিনাল থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ হবে সরাসরি এবং নিরবচ্ছিন্ন। এরজন্য চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ হলে চুরি-দুর্নীতি-অপচয়, সমুদ্র উপকূল, নদ-নদী দূষণ রোধ হবে। যানজট সমস্যাও এড়ানো যাবে।
মাত্র এক বছর আগে বিগত ১৮ আগস্ট’১৮ইং কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী দ্বীপে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাইপ লাইনে আনোয়ারা, সীতাকুন্ড গ্রিড স্টেশন হয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা জাতীয় গ্রিড লাইনে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। গ্যাস সঞ্চালনে সাফল্যের পিঠে এবার পাইপ লাইনে তেল সরবরাহে নবযুগের ক্ষণ গণনা শুরু। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত আমদানি জ্বালানি জেলবাহী বড় বড় জাহাজ মাদার ট্যাংকার থেকে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং সিস্টেমে (এসপিএম) সরাসরি পতেঙ্গায় টার্মিনালে খালাসের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সরবরাহ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোারেশনের (বিপিসি) এই মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। বিপিসি সূত্র জানায়, ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্বল্প সময়ে, ব্যয় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে জ্বালানি তেল সরবরাহের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি জোরদার হবে।
মেগাপ্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এটি ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন হয়। প্রকল্পের আওতায় ৪৩৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অনুক‚লে এক হাজার ৫৫ কোটি ৬৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে বিপিসি। ২০২০ সালের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করার টার্গেট বিপিসির। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প।
দেশের উন্নয়ন, নগরায়ন, শিল্পায়ন, পরিবহন ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের প্রয়োজনে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল, অকটেন, বিমানের জ্বালানি এভিয়েশন ফুয়েলসহ তেলের চাহিদা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মান্ধাতা যুগের জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন অপরিহার্য। কৃষি-খামার, বিনিয়োগ-শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে ধাপে ধাপে দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের তাগিদ দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞগণ।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে সারাবিশে^ই পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়। বাংলাদেশেও পাইপ লাইনে সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হলে জ্বালানি অনিশ্চয়তা দূর হবে। এতে সময় ও ব্যয় কমবে। বর্তমানে কোস্টার ট্যাংকারে করে নৌপথে তেল পরিবহনে ১৭ শতাংশ লস হচ্ছে। যার আর্থিক পরিমাণ বছরে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা। তাছাড়া বিভিন্ন অঘটন, তেল চুরি, অপচয়ের কোন সুযোগ আর থাকবে না।
এটি সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা মাথায় রেখেই পাইপ লাইনে সরাসরি জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৫৮ লাখ মেট্রিক টন। বছরে ৩ শতাংশ হারে এ চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৫ বছর পর চাহিদা আরও বাড়বে। পাইপ লাইনে মূলত ডিজেল সরবরাহ করা হবে। প্রতিঘণ্টায় যাবে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন। যা ছোট ছোট ট্যাংকারযোগে প্রতি ট্রিপে যেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা ছাড়াও কাঞ্চন ব্রিজ থেকে কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইনের মাধ্যমে জেট ফুয়েল সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলে কৃষিখাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ ও দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুঁড়ি হয়ে বার্ষিক ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আনা হবে। এরজন্য দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পাইপলাইন বসাবে। এভাবে সমগ্র দেশে পাইপ লাইনে সহজে জ্বালানি তেল সরবরাহের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা যুগোপযোগী ও উন্নত দিক। এরফলে সিস্টেম লসের নামে অপচয় দূর হবে। নৌপথ সড়কপথে কালক্ষেপণ ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। উন্নত বিশে^র মতো পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল পরিবাহিত হলে তা ব্যয় সাশ্রয়ী হবে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট সুফল বয়ে আনবে। জ্বালানি খাতে পারফরমেন্স বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সরকারের এটি দূরদর্শী এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার মূল জ্বালানি টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত ২৩৭ দশমিক ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ (১৬ ইঞ্চি ব্যাসের) পাইপ লাইন, গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ (১০ ইঞ্চি ব্যাস) পাইপ লাইন এবং কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ (৬ ইঞ্চি ব্যাস) পাইপ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এভাবে ঢাকার আশপাশ এলাকাসহ মোট ৩০৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কারিগরি জরিপ, রুট ম্যাপ, ডিটেইল ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলেই পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলবে পুরোদমে।
প্রকল্পের কারিগরি কাজে কুমিল্লায় একটি পাম্প হাউস থাকছে। পাইপ লাইনের কোনো অংশে সংস্কার বা মেরামতের প্রয়োজন দেখা দিলে জ্বালানি তেলের অপচয়রোধক ব্লক বাল্ব স্টেশন তা সারানোর কাজ করবে। মাটির ৫ থেকে ৬ ফুট গভীরে পাইপ লাইনে বসানো থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর সেন্সর সিস্টেম। কোথাও যদি পাইপ লাইনের ওপর খননকাজ কিংবা কোনো ধরনের আঘাত করা হয় সঙ্গে সঙ্গে সঙ্কেত চলে যাবে কন্ট্রোল রুমে। সম্ভাব্য কোন বাধা বা সমস্যার ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে।
রাজধানী ঢাকা মহানগর এবং আশপাশের এলাকায় জ্বালানি তেলের চাহিদা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। ঢাকায় অবস্থিত গোদনাইল ও কাছে ফতুল্লা ডিপোগুলোর মাধ্যমে তেল সরবরাহ করা হয়। চাঁদপুরে অবস্থিত তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর (পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা) তিনটি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা ১ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। পতেঙ্গা প্রধান স্থাপনার টার্মিনাল থেকে কোস্টাল ট্যাংকার যোগে গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হচ্ছে। যা পাইপ লাইনে সরাসরি সরবরাহ করা যাবে।
তাছাড়া ঢাকায় অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলোর গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপো থেকে শ্যালো ড্রাফট ট্যাংকার যোগে উত্তরবঙ্গে অবস্থিত বাঘাবাড়ি, চিলমারী ও সাচনা বাজার ডিপোতে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হচ্ছে। এই ডিপোগুলোর বর্তমান বার্ষিক চাহিদা ৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর নিয়োজিত ২শ’ কোস্টাল ট্যাংকারযোগে নৌপথে সেকেলে পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হচ্ছে।
এসব গন্তব্যে প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল চট্টগ্রামের পতেঙ্গা টার্মিনাল থেকে এভাবে পরিবহন করতে গিয়ে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয়, লোডিং আনলোডিংয়ে সিস্টেম লসের নামে অপচয় ও ঘাটতি মিলিয়ে সরকার বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির জের টানছে। সেই সঙ্গে ৯০ ভাগ জ্বালানি তেল নদীপথে ট্যাংকারযোগে পরিবহনকালে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনায় এবং তেলের দূষণের পরিণতিতে পরিবেশ-প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সার-সংক্ষেপে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পাইপ লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ সহজতর, নির্বিঘ্ন, সময় সাশ্রয়ী, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিবেশবান্ধব হবে। এরফলে সাশ্রয়ী মূল্যে ও স্বল্প সময়ে জ্বালানি তেল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধিত হবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানি পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টন। গ্যাসের ঘাটতির ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাবে। ২০২১ সালের পর দেশের পুরাতন গ্যাস ফিল্ডগুলোতে গ্যাস উত্তোলন কমতে থাকবে। নতুন আর কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে জ্বালানি তেলের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং তা অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।