পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সার ও জ্বালানি তেলের পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষক খুবই দুঃচিন্তায় পড়েছেন। বোরো আবাদের খরচ যোগাতে কৃষকের নাভিশ্বাস অবস্থা। বোরো চাষিরা বলছেন, সার, ডিজেলের পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বাড়বে মণ প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা। সব মিলিয়ে সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ, কীটনাশকসহ আরো অন্যান্য খাতে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে ৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এই ব্যয় বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা কৃষি অর্থনীতিবিদের। তাদের মতে, এ অবস্থায় কৃষক যদি ন্যায্য দাম না পায় তাহলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হবে। হুমকিতে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা।
কৃষি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। দুঃসময়ে দেশের শেষ ভরসা কৃষি। করোনার ছোবলে দেশ যখন থমকে ছিল, তখনও কৃষির চাকা ছিল সচল। নির্ভরতার সেই কৃষি এখন বড় সঙ্কটে। বিশেষ করে চলতি বোরো মৌসুমে আবাদ নিয়ে কৃষকরা খুবই চিন্তিত। বোরো আবাদ প্রায় পুরোটাই সেচ নির্ভর। তাই সার-ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সেচ নিয়ে বড় চিন্তায় কৃষকরা। সার, ডিজেল-কেরোসিনের নজিরবিহীন মূল্য বৃদ্ধির পর আবার বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে ফসলের উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়বে সে তুলনায় দাম পাবেন কিনা সে আশঙ্কা কৃষকের মনে ঘোরপাক খাচ্ছে। নেত্রকোনা সদর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে সেচ ও চাষ দিতে ২০ লিটার ডিজেল প্রয়োজন। ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধিতে ১ বিঘা জমিতে সেচ দিতে চলতি মৌসুমে ডিজেলে ৩০০ টাকা বেশি খরচ হবে। এ ছাড়া জমি ভেদে বিঘা প্রতি ইউরিয়া সার দরকার ৪০ থেকে ৪৫ কেজি। সে হিসাবে সারে বাড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অন্যদিকে ডিজেলচালিত ধান মাড়াই মেশিনের ৬০০ টাকার জায়গায় দিতে হবে ৮০০ টাকা। এছাড়া কীটনাশক, শ্রমিক এবং যানবাহনে পরিবহণ খরচ বাড়বে। সব মিলিয়ে মণ প্রতি ধান উৎপাদনে খরচ হবে ১১ থেকে ১২শ’ টাকা। অথচ বাজারে ধানের দাম ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। অন্যদিকে বিদ্যুতের সেচ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নাই। দিনে চার-পাঁচবার লোডশেডিং হয়। অর্থাৎ দিনে গড়ে চার পাঁচ ঘণ্টার বেশি বিদুৎ থাকে না।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দেশে ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে রোপণ হয়েছে ১২ লাখ ১৪ হাজার হেক্টরে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ বা ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হবে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে। বোরো মৌসুমে সারাদেশে প্রায় ১৬ লাখ টন ডিজেলের ব্যবহার হয়। প্রতি লিটার ডিজেলে ১৫ টাকা করে বাড়ায় কৃষককে বাড়তি খরচ গুনতে হবে ৭৫৬ কোটি ৬১ লাখের বেশি টাকা। বাকি ৩০ শতাংশ জমিতে সেচ দেয়া হবে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে। এবার বিদ্যুতে দাম বাড়ায় এ ক্ষেত্রে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার। এছাড়া কীটনাশক, শ্রমিক এবং যানবাহনে পরিবহণ খরচ বৃদ্ধিতেও অতিরিক্ত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন প্রায় ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন। কৃষক পর্যায়ে যদি এই পরিমাণ সারের ব্যবহার হয়, তাহলে মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে প্রায় ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে ৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন এই ব্যয় বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তথ্যমতে, সারাদেশে বোরো মৌসুমে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৪টি সেচযন্ত্র ব্যবহার হয়। এর মধ্যে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার হয় ১২ লাখ ৬২ হাজার ৫৩৩টি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) জানায়, দেশে প্রায় ১৬ লাখ ডিজেলচালিত ছোট সেচযন্ত্র (শ্যালো মেশিন) রয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে প্রতিটি কৃষি উপকরণের দাম আকাশছোঁয়া। উৎপাদন খরচ বাড়লেও পণ্যের ন্যায্য দাম পান না কৃষক। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির এ দেশে কৃষক না বাঁচলে উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং হুমকিতে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। তবে সরকার বলছে, তারা কৃষকের পাশে আছে। বিনামূল্যে বীজসহ নানা উপকরণ দেয়া হচ্ছে। ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধির প্রভাব কৃষক পর্যায়ে পড়বে না।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকার কৃষককে নানা রকম সহায়তা দিচ্ছে’। বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রায় ১৭০ কোটি টাকার প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। সারা দেশের ২৭ লাখ কৃষক এ প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার পাবেন। এ ছাড়া কৃষি যন্ত্রপাতিতেও বড় ধরনের ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাত থেকে এ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে এসব প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম চলমান।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ সহায়তা খুবই অপ্রতুল। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তথ্যানুযায়ী, দেশের ১ কোটি ২৩ লাখ কৃষক ডিজেলচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ কাজ পরিচালনা করেন। দেশে প্রায় ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডিজেল পাম্প এবং ২ লাখ ৭০ হাজার বৈদ্যুতিক পাম্প রয়েছে। প্রতি বছর গড়ে ১৬ লাখ টন ডিজেল সেচে ব্যবহার করা হয়। এ অবস্থায় মাত্র ২৭ লাখ কৃষককে প্রণোদনা দেয়া খুবই সামান্য। আর এ প্রণোদনার অর্থও সঠিকভাবে বিতরণ হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও গবেষক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ইনকিলাবকে বলেন, বোরো মৌসুমে ব্যাপকভাবে ডিজেল ব্যবহার হয়। খরচ বাড়ার কারণে অনেক কৃষক আবাদ নিয়ে চিন্তিত। তার ওপর বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি গোদের উপড় বিষফোঁড়া। এতে উৎপাদন বিঘিœত হতে পারে। আর বোরো উৎপাদন বিঘিœত হলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কৃষকদের সরাসরি ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। ২০১০ সালের পর থেকে কৃষিতে ডিজেলের ওপর ভর্তুকি বন্ধ আছে। এ মুহ‚র্তে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ডিজেল ব্যবহারকারীদের ভর্তুকি দেয়া জরুরি। এ ছাড়া কৃষিসেচে ব্যবহারে বিদ্যুতের দাম আগের মূল্যে নেওয়া এবং লোডশেডিং কমানো উচিত। অস্থির বৈশ্বিক খাদ্যবাজার পরিস্থিতিতে সেচের বিষয়টি আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য ধানের উৎপাদন ও দেশের খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া উচিত। তা না হলে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের কৃষক উজ্জল বলেন, এবার হাওরের পানি অনেক কমে গেছে। তাই অন্যান্য বছরে চেয়ে এবার জমিতে আগে থেকে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে এবার সেচ খরচে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন টাকা খরচ হচ্ছে। এ বছর বোরো আবাদের খরচ দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামে সার পাওয়া যাচ্ছে না। ১১শ’ টাকা বস্তা সার ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায় কিনতে হয়। আগে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায় বিঘা প্রতি সেচ খরচ হতো, এখন দিতে হচ্ছে ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকা। এর বাইরে রোপণ খরচ হচ্ছে বিঘা প্রতি ২২শ’ থেকে ২৩শ’ টাকা। সার, কীটনাশক, শ্রম খরচ মিটিয়ে শেষ পর্যায়ে খেতের ফসল ঘরে তুলতে বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ধান আবাদ এখন লাভজনক পর্যায়ে রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষক বাজারে ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন। যে কারনে উৎপাদন খরচের সাথে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও সমন্বয় হচ্ছে বলে তারা ধান চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। সরকার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ দিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।