মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যা ঘটে তার সাথে স্কুলে নিরীহ ছেলেদের সঙ্গে মাস্তান ছেলের গুন্ডামির মিল রয়েছে। এই গুন্ডা ছেলের ভয়ে সাধারণ ছেলেরা কাঁপে। গুন্ডা ছেলেকে কেউ কিছু ভয়ে বলে না। তাকে সবাই ঘৃণা করে। তবে মুখে কিছু না বললেও সবাই গোপনে চায় যে লজ্জাজনক ভাবে সে পরাজিত হোক। একদিন গুন্ডা ছেলেটি সবারই ঘৃণার পাত্র হয়ে পড়ে। এরপর এক পর্যায়ে অন্য একটি ছেলে যার গায়ে জোর আছে ও মনোবল দৃঢ়। সে গুন্ডা ছেলেটির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ও বিজয়ী হয়। গুন্ডা ছেলেটির পতনের পর মজার ব্যাপার ঘটে। তার তোষামোদকারীরা হঠাৎই উপলব্ধি করে যে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তারা নতুন শক্তিকে তোয়াজ করতে শুরু করে। অন্যদিকে গুন্ডা ছেলেটির পতনের পর তার সহপাঠি ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের তার প্রতি এতদিনের জমে থাকা রাগ, ভয় ও ঘৃণার প্রকাশ ঘটে। তার পরাজয় তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দজনক হয়ে ওঠে। সাম্রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাপার ঘটে।
প্রকৃত প্রয়োজনের সময় বিপন্ন দেশকে উদ্ধারে যে এগিয়ে আসে সে সম্মানপ্রাপ্ত হয় (যেমন দুই মহাযুদ্ধ)। কিন্তু সে দেশটি যখন একটি মস্তান শক্তিতে পরিণত হয় এবং যে কোনো ছুতোয় অন্যদেশে আগ্রাসন চালায় যেমন আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইরাক ও সিরিয়া, তখন তার মিত্ররা তার কাছে নতজানু থাকে ঠিকই। তবে গোপনে তাকে ভয় করে ও তার সঙ্কট কামনা করে।
সাম্রাজ্যটি যখন উৎপীড়নের জন্য চারপাশে অন্য দেশ খুঁজতে থাকে, যেমন ইরান ও ভেনিজুয়েলা, তখন তার মিত্ররা কিছু বলে না। কিন্তু যখন দেখে যে জন বোল্টন ও মাইক পম্পেও যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন ও লাগামহীন কথার তুবড়ি ছোটাচ্ছেন তখন ভীত হয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রতি প্রধান গুরুত্ব আরোপ করেছে। কিন্তু তা যদি বিশ্বকে তার প্রাধান্যের কাছে নতি স্বীকার করাতে ব্যর্থ হয়, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসনের ব্যাপারে বারবার হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, কোনো পথই বন্ধ রাখা হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যখন এক বেপরোয়া মস্তান ছিল তখন সে ক্ল্যাসিক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এর ফলে সে সময় তার মিত্রদের সমর্থন কাঠামো দ্বিগুণ আকার লাভ করেছিল। একই সময়ে তার মিত্ররা সরে যেতে শুরু করে ও তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে অন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
ইতিহাস অসংখ্যবার এটা ঘটতে দেখেছে। ‘মেধা পাচার’ সঙ্ঘটিত হয় যাতে সেরা ও অত্যন্ত সৃজনশীল মানুষেরা অন্য কোথায়ও তাদের ভবিষ্যত সন্ধান করতে থাকেন। যেমন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ইউরোপীয়দের যুক্তরাষ্ট্রের মত নতুন উপনিবেশের দিকে ছুটতে দেখা গিয়েছিল, তাদের বর্তমান উত্তরসূরিরা যেমন এখন ছোটে উপসাগর অঞ্চলে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন এক উদ্দীপনা স্থগিত পর্যায়ে আছে। সে এখনো প্রধান শক্তি, কিন্তু তার প্রতিরোধ প্রাচীরগুলো নীরবে অদৃশ্য হচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতের কোনো এক পর্যায়ে এমন হতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এমন এক শত্রুর বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে বসতে ও আগ্রাসন চালাতে পারে যে শক্তিশালী কিংবা তার এমন জোট আছে যা তাকে শক্তিশালী করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এমন সময়ে যুদ্ধে প্রবেশ করবে যখন সে ভেঙ্গে গেছে এবং তা হয়ত আকস্মিক ও নাটকীয় ভাবে ঘটবে। চ‚ড়ান্ত পতন ঘটবে বিপজ্জনক গতিতে। যখন তা ঘটবে তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানই ঘটনার বিপরীত কিছু ঘটার ব্যর্থ আশা করবে। তারা সম্মিলিত ভাবে এ রকমটা আশা করবে যে ওফ! আমরা ভুল করেছি। বিশ্ব ক্ষমাশীল হবে, আমাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে দেবে।
তবে ঐতিহাসিক ভাবে এটা কখনো ঘটবে না। সাম্রাজ্যগুলো বিপজ্জনক দ্রুততায় ভেঙ্গে পড়ে। কারণ তাদের সমর্থন ব্যবস্থা তাদের পরিত্যাগ করে নতুন ভাবে অন্যত্র নিজেদের অবস্থান তৈরি করে। দিগন্তে সাম্রাজ্য পতনের যখন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তখন তার জন্য শোক না করে তার পরিবর্তে আমাদের দৃষ্টিকে বিশে^র সে সব অংশের দিকে নিবদ্ধ করতে হবে যা কিনা অনিবার্য পরিস্থিতিতেও লাভজনক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক ধারণা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মুঠি ভরে বিলাতে অর্থ মুদ্রণ করছে। এসব ঘটছে তখন যখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশ্বব্যপী নিজের সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। আর সব মিলিয়ে বিশ্বশ্রেণির এক বিপর্যয় ঘনীভূত হচ্ছে যা আগে আমরা দেখিনি। (শেষ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।