মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কয়েক বছর আগে ডুগ কেসি আমাকে বলেছিলেন, ‘সাম্রাজ্যগুলো বিপজ্জনক গতিতে প্রাধান্য হারাচ্ছে।’ তার এ কথা থেকে আমার মাথায় তখন একটা সত্য উঁকি দিতে থাকে- বিশ্বে প্রাধান্য হারাচ্ছে : পতনের মুখে যুক্তরাষ্ট্র।
সব সময়ই আপনি একটি মন্তব্য পাবেন যার মধ্যে অস্বাভাবিক অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় মেলে ও স্থায়ী প্রভাব ফেলে যদিও তা দায়সারা ভাবেও করা হতে পারে। আমার জন্য এটা ছিল সে রকম একটি এবং এমন একটি যেটা স্মরণে রাখার জন্য আমি তা আমার ডেস্কে রেখে দিয়েছিলাম।
আমি এসেছি এক ব্রিটিশ পরিবার থেকে। এমন এক পরিবার যারা যারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন শুরু হতে দেশ ত্যাগ করেছিল। তারা নিজেদের ভবিষ্যত নির্মাণের আশায় ‘নিউ ওয়ার্ল্ডে’ দেশত্যাগী হয়েছিল।
আমি আমার জীবনের অধিকাংশ সময় ব্রিটিশ কলোনি কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে কাটিয়েছি। আমার সুযোগ হয়েছিল বহু ব্রিটিশ চুক্তিবদ্ধ পেশাজীবীকে দেখার যারা উন্নতির আশায় যুক্তরাজ্য ছেড়েছিলেন এবং তারা চেয়েছিলেন কেম্যানে তা পেয়েছিলেন। তাদের বেশির ভাগই প্রথম বা দ্বিতীয় চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে ফিরে গিয়েছিলেন এ আশায় যে পতন কাটিয়ে উঠে দেশটি আবার পূর্ব অবস্থায় ফিরে পাবে। তাই তারা সাগরে নিমজ্জিত জাহাজ ভেসে উঠলে আবারো তাতে আরোহণ করতে চেয়েছিলেন।
তবে অবশ্যই তা হয়নি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রতাপশালী সাম্রাজ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের স্থান দখল করে। সে সময় আগে ও পরের দশকগুলোতে যুক্তরাজ্য উত্থান ও পতনের দিনগুলো পাড়ি দিলেও তার হারানো গৌরব আর ফিরে পায়নি। আর কখনো তা ফিরবেও না।
আমরা যদি বিশ্বের সাম্রাজ্যগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব যে সহস্রাব্দের এ বিশ্বের ইতিহাসে কারো পতন হওয়ার পর আর পুনরুত্থান হয়নি। আমরা রোমান সাম্রাজ্য, ওসমানীয় সাম্রাজ্য, স্পেনীয় সাম্রাজ্য বা অন্য আরো যে সাম্রাজ্যের কথাই বলি না কেন, সকল ক্ষেত্রেই ইতিহাস কিন্তু এক। কোনো সাম্রাজ্য ধ্বংস হলে বা পতন ঘটলে তার উল্টো আর ঘটেনি, যার একবার শেষ হয়েছে তার আর প্রত্যাবর্তন হয়নি।
কিন্তু আজকের দিনে এ কথার গুরুত্ব কী? যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বের অবিতর্কিত শীর্ষ সাম্রাজ্য। অধিকাংশ আমেরিকানই একমত হবেন যে যদিও একটা খারাপ সময় যাচ্ছে, তবুও যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়াবে এবং অবস্থা আগের চেয়েও ভালো হবে।
কিন্তু আমার আশঙ্কা যে তা হবে না। সব সাম্রাজ্যই একই চক্র অনুসরণ করে। তাদের শুরু হয় শক্তিশালী কর্ম নীতি ও স্বনির্ভর একটি জনগোষ্ঠিকে নিয়ে। এ সব মানুষ উচ্চ উৎপাদনশীলতার ভিত্তিতে একটি মহাশক্তিশালী জাতি গড়ে তোলে।
এটা তাদের সম্প্রসারণের দিকে চালিত করে। সাধারণত বিশ্ব বাণিজ্যের ভিত্তিতে তার শুরু হয়। একটা পর্যায়ে এটা এমন সব নেতৃত্বের জন্ম দেয় যারা আর তখন অন্য দেশগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব ভিত্তিতে কাজ করতে চায় না। তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়। আর এটা তখনি ঘটে যখন একটি মহান দেশ একটি সাম্রাজ্য হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যায়টি শুরু করে উচ্চাকাক্সক্ষী ও আগ্রাসী টেডি রুজভেল্টের নেতৃত্বে।
বিশ্বে বিশ শতক ছিল আমেরিকান শতক আর যুক্তরাষ্ট্র তার ক্ষমতা বিস্তার করে বিজয় থেকে বিজয় লাভ করছিল। কিন্তু ষাটের দশক থেকে তার পতন শুরু হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র বিজয় অসম্ভব যুদ্ধ শুরু করে। নিজের মুদ্রা ধ্বংস শুরু করে এবং তার সরকারকে সর্বক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্প্রসারণ করতে শুরু করে।
এখনো সেই প্রক্রিয়া অনুসৃত হচ্ছে এবং সার্বিক পতন ঘটতে দশকের পর দশক লাগে। তাহলে ‘সাম্রাজ্যগুলো বিপজ্জনক গতিতে প্রাধান্য হারাচ্ছে’- এ কথার মানে কী দাঁড়াচ্ছে? মনে রাখতে হবে, পতনের প্রস্তুতি এক প্রজন্ম বা তার বেশি সময় ধরে চলতে পারে। কিন্তু প্রকৃত পতন অত্যন্ত দ্রুত ঘটে। (পরের সংখ্যায় শেষ হবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।