পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফোমের ঘোষণায় আনা দুটি চালানে আসে নিষিদ্ধ সিগারেট। তাতে সরকারের রাজস্বহানি ১৩ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয় অন্তত দুই কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, চোরাচালান এবং শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়েছে।
মিথ্যা ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা এমন চালান আটক হচ্ছে প্রতিদিন। গত দুই মাসে মিথ্যা ঘোষণাসহ নানা অনিয়মে ১৫২টি চালান আটক হয়েছে। তাতে রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টা হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। অসাধু চক্র আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে শুল্ক-কর ফাঁকি দিচ্ছে। এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনার প্রবণতায় চাপে পড়েছে রাজস্ব আহরণ। এ অবস্থায় শুল্ক ফাঁকিরোধে কঠোর অবস্থানে রাজস্ব বিভাগ। এটা টের পেয়ে তারা কৌশল পাল্টাচ্ছে। নানা ফাঁক-ফোঁকরে শুল্ক-কর ফাঁকির অপচেষ্টা চলছে।
দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। প্রধান সমুদ্র বন্দরভিত্তিক সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চলতি অর্থবছরে ৬৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার সাথে সাথে রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন। তার এই নির্দেশনা মেনেই রাজস্ব আহরণ গতিশীল করতে নানা উদ্যোগ নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনায় শুল্ক-কর ফাঁকিরোধে কঠোর অবস্থানে রাজস্ব বিভাগ।
মিথ্যা ঘোষণায় ও জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানির পেছনে তৎপর কতিপয় বন্দর-কাস্টমস-সিঅ্যান্ডএফ, আমদানিকারক-ব্যবসায়ীর অসৎ সিন্ডিকেট। রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আগে সৎ কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেয়ার সাহস পেতেন না। তবে দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের একের পর এক সৎ, সাহসী পদক্ষেপে উজ্জীবিত সৎ ও পেশাদার কর্মকর্তারা। তারা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সরকারের রাজস্বহানি রোধে অনেক বেশি সাহসি ভ‚মিকা রাখছেন। এতে করে একের পর এক উদঘাটন হচ্ছে শুল্ক ফাঁকির চাঞ্চল্যকর সব ঘটনা।
মিথ্যা ঘোষণার পাশাপাশি শুল্ককর পরিশোধ না করে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্যের চালান খালাস করে নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। কাস্টম হাউসের সার্ভার হ্যাক করেও পণ্য পাচার করে নেওয়া হয়েছে অতীতে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্কমুক্ত আমদানি পণ্য বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে একটি চক্র। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের তথ্যমতে, গেল অর্থবছরে এ ধরনের ৩২টি ঘটনায় ২৬ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়েছে। গত কয়েক বছরে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় এ ধরনের প্রবণতা রোধেও মাঠে নেমেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আকবর হোসেন বলেন, সৎ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের পক্ষে আছে কাস্টম হাউস। তারা যাতে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে আমদানি রফতানি করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে যারা বন্দর ব্যবহার করে চোরাচালান করবেন তাদের কোন ছাড় নেই। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনায় কাস্টম হাউস এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শুল্ক কর, রাজস্ব ফাঁকি, মানি লন্ডারিং এবং চোরাচালানের জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকলে অসাধু চক্র সোজা পথে হাঁটতে বাধ্য হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাস্টমসের সতর্ক নজরদারিতে প্রতিদিনই ধরা পড়ছে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি চালান। গেল সপ্তাহে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ক্যাসিংয়ের (কভার) নামে আনা হয় উচ্চ শুল্ক-কর আরোপযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য। ক্যাসিংয়ের শুল্ক হার মাত্র এক শতাংশ। অথচ তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক-কর ১৫৬ শতাংশ। পাঁচ কন্টেইনার ভর্তি পণ্যের ক্যাসিং হিসেবেই সংশ্লিষ্ট কাস্টমস-শাখা থেকে শুল্কায়ন সম্পন্ন হয়। তবে খালাসের আগেভাগে কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার তথ্যের ভিত্তিতে পুরো চালানটি আটকে দেয়া হয়।
তার আগে একটি চালানে সিলিং বোর্ডের ঘোষণায় আনা হয়েছে পাঁচ কন্টেইনার দামি পলিশড টাইলস। অন্য একটি চালানে ১২ হাজার ২৪৮ বর্গমিটার আনফিনিশড ঘোষণায় আনা হয় ২৬ হাজার বর্গমিটার তৈরি মূল্যবান জায়নামাজ। মিথ্যা ঘোষণায় আনা এ দুটি চালানের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছিল। প্লাস্টিক দানার বদলে মূল্যবান সিমেন্ট আমদানি করায় প্রাণ গ্রুপের ৩০ কন্টেইনার পণ্য আটক করা হয়। এ চালানে প্রায় তিন কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতির আড়ালে মদসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আটকের ঘটনাও ঘটেছে।
কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার যুগ্ম কমিশনার সাধন কুমার কুন্ড দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কাস্টম হাউসের নজরদারির ফলে ছোট বড় একাধিক চালান আটক হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের গেল জুলাই-আগস্টে ১৫২টি চালানে অনিয়ম শনাক্ত হয়। কঠোর অবস্থানের কারণে তারাও কৌশল পাল্টাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো অন্যান্য বন্দর দিয়ে আসা পণ্যের চালানে শুল্ক ফাঁকি রোধে অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হলে এ চক্র পিছু হটবে বলে জানান তিনি।
শুল্ক পরিশোধ ছাড়া জাল কাগজে পণ্য পাচারের ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি এমন সাত কন্টেইনার পণ্য জব্দ করা হয়েছে। ৬০ শতাংশ শুল্কের জিপসাম ঘোষণা দিয়ে ১৫০ শতাংশ শুল্কের টাইলস নিয়ে আসা হয়। এ চালানে সোয়া কোটি টাকা শুল্কফাঁকির চেষ্টা করা হয়। মিথ্যা ঘোষণায় পাশাপাশি একটি চক্র মানি লন্ডারিং করছে। গেল সপ্তাহে ‘গ্রামবাংলা ফুড করপোরেশন লিমিটেড’ এবং ‘মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ’ নামে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার নূর উদ্দিন মিলন বলেন, মামলায় দুই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, চোরাচালান এবং শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা মিথ্যা ঘোষণায় ১৩ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। একই সাথে কয়েক কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
এদিকে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির ফলে কিছুটা চাপে পড়েছে কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়। অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে ঘাটতি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১০ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার বিপরীতে সাত হাজার ২২ কোটি টাকা আহরণ হয়েছে। যা গেল বছরের এ সময়ের তুলনায় মাত্র ৭৪ কোটি টাকা বেশি। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্ক ফাঁকির বেশ কয়েকটি বড় চালান আটক হওয়ায় এসব পণ্যের শুল্কায়ন আটকে গেছে। এ কারণে রাজস্ব আদায় কিছুটা কম হয়েছে। সহসা রাজস্ব আহরণে গতি বাড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।