পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নদ-নদী দখলমুক্ত করতে আদালত থেকে নির্দেশ দেয়ার পর সারাদেশেই বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ নদী দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদাভিযান শুরু করলেও কুমিল্লার গোমতীর দখলকৃতদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি।
পুরান গোমতী নদীর দুইপাড় ও পানির অংশের দুইশ’ শতকের বেশি জায়গায় অবৈধভাবে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ছোটবড় স্থাপনা, পরিবহন স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে কয়েক হাজার দখলদার। প্রায় ৩৬ বছর ধরে এসব নদী খেকোরা গিলতে গিলতে পুরান গোমতী নদী সরু খালে পরিণত করেছে।
জানা যায়, গোমতী নদীর পানি প্রবাহের উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায়। এর দৈর্ঘ্য ১৩০ দশমিক ১২২ কিলোমিটার। এটি জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দি হয়ে মেঘনা নদীতে মিলেছে। গোমতীর ডান তীরে ৪১ কিলোমিটার ও বাম তীরে ৩৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার বন্যা ব্যবস্থাপনা বাঁধ রয়েছে। বাঁধের নদী অংশের ভ‚মিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ-বনজ গাছ-গাছালি ছাড়াও নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সংঘবদ্ধ বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট অব্যাহতভাবে কেটে নিচ্ছে মাটি এবং ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন করছে বালু। এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তালিকায় পুরান গোমতীর দুইপাড় ও পানির অংশ দখল করে রেখেছেন এমন ৫২২ জনের নাম রয়েছে। যারা এ নদীটির প্রায় দুই একর (দুইশ’ শতক) জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। দখলদারদের নদীর জায়গা ছেড়ে দিতে প্রশাসন থেকে অন্তত দশবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ এসব স্থাপনায় বৈধভাবে মিলেছে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগও। নদীর উত্তর প্রান্তে শুভপুর এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে চকবাজার হয়ে টিক্কারচর শশ্মানঘাট পর্যন্ত পাড় দখলের সাথে নদীর অংশও দখলে চলে গেছে। নদীর উত্তর প্রান্তে চাঁনপুর ও দক্ষিণ প্রান্তে চকবাজার, গর্জনখোলা অংশেও দখল হয়েছে। নদীর উত্তর প্রান্তে চাঁনপুর ফেরিঘাট অংশে পাড় ও পানির অংশ দখল হয়ে সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে মোগলটুলি, ইসলামপুর, কাপ্তানবাজার এবং উত্তর প্রান্তে পশ্চিম চাঁনপুর ও গয়ামবাগিচা জুড়ে নদীর পাড় ও পানির অংশ দখল করে বাড়িঘর গড়ে উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গোমতী নদীসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা এবং জিডি করেও এসব কর্মকান্ড থামাতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে সংঘবদ্ধ এসব চক্রের দ্বারা প্রাণনাশের হুমকির শিকার হয়ে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জিডি করেছেন। সরেজমিন ঘুরে এবং পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
নদীর চাঁন্দপুর ব্রিজ এলাকা, কাপ্তানবাজার, পালপাড়া, আলেখারচর, বাবুর বাজার, শিমাইলখাড়া, বালিখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথিলাপুর, বাহেরচর, শ্রীপুর, গোবিন্দপুর, শ্যামপুর, মালাপাড়া, মনোহরপুর, হাসনাবাদ, কংশনগর বাজার, রামচন্দ্রপুর, এতবারপুর, কাঁঠালিয়া, রামনগর, কিং-বাজেহুড়া, বাজেহুড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও তিতাসের বিভিন্ন এলাকায় মাটিকাটা চক্র বেশ সক্রিয়।
সূত্র জানায়, এ নদীর ভারতীয় অংশে একাধিক স্থানে বাঁধ দেওয়ার কারণে কৃষকরা ফসলি জমিতে পানি সেচ দিতে পারছেন না। এছাড়া নদীর পাড়সহ ওইসব এলাকার রাস্তাঘাটগুলো বালু, মাটি বোঝাই ট্রাক ও ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দিয়ে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ চলাচলের ক্ষেত্রে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
নদীর দুই পাড়ের কৃষক ও বিভিন্ন পেশার লোকজন জানান, সরকারদলীয় নেতা-কর্মী পরিচয়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অবৈধ বালু ব্যবসার প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস করে না। নির্বিচারে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা চলছে। বালুদস্যরা লুটেপুটে খাচ্ছে এ সম্পদ। সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর জানান, গোমতী নদী রক্ষায় কঠোর অবস্থানে আছে জেলা প্রশাসন। মাটি ও বালু কাটা বন্ধে সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলার নদী সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ বলেন, নদী ব্যবস্থাপনা ও নদী রক্ষার দায়িত্ব এখন নদী কমিশনের। কমিশনের নির্দেশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সহযোগিতা কামনা করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সভাপতি প্রফেসর ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অবৈধ দখলে পুরান গোমতী নদীর ঐতিহ্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পুরান গোমতী নদীর সীমানা চিহ্নিত করার কার্যক্রম আগেই শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাবো দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদাভিযান শুরু করে নদীর স্বাভাবিক অবস্থান ফিরিয়ে আনার কাজটি যেনো দ্রুত শুরু হয়। এবার এটির বাস্তবায়ন দেখতে চায় কুমিল্লাবাসী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।