Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সম্প্রতি প্রকাশিত এনআরসি বা নাগরিক পঞ্জির কারণে ভারতে যে মানবিক সঙ্কট দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে মঙ্গলবার পাকিস্তান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য ডন’ একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। সম্পাদকীয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হল,
শনিবার ভারত সরকার প্রকাশিত আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধের চ‚ড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ মানুষ। এদের বেশিরভাগ বাংলাভাষী মুসলমান - যারা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে ভারতে বাস করছিল বা প্রবেশ করেছিল তা প্রমাণ করতে অক্ষম হয়। এ কারণে তারা ‘বিদেশী’ বলে বিবেচিত হবে। এদের অনেকে কয়েক দশক ধরে আসামে বসবাস করছেন, যারা ভারত ছাড়া অন্য কোনো বাড়ির কথা জানেন না।
আসামে এনআরসি আপডেট করার প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। নরেন্দ্র মোদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ভারত জুড়ে এনআরসি বাস্তবায়িত হবে, তাদেরকে নির্মূল করতে, যাদেরকে তিনি ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং ‘উইপোকার’ সাথে তুলনা করেছেন।

বৈষম্য ও অমানবিক আচরণ থেকেই অনেক সময় গণহত্যা শুরু হয়। এ কারণে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি এসব বিষয় খুবই আশঙ্কাজনক বলে মনে করে। আসামের তথাকথিত বিদেশী আটক কেন্দ্রগুলিতে ইতিমধ্যে ১,১০০ জনের বেশি মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে যে, গণহারে সবাইকে অন্তরীণ করে রাখা হতে পারে। বা আরো খারাপ, যেমন জোরপূর্বক বাস্তুচ‚্যতকরণ, এমনকি গণহত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
যদি ২০১৭ সালে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের শুরুতে যখন কয়েক হাজার মানুষের বার্মিজ নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল, সেটি একটি বিশাল মানবিক বিপর্যয় বলে মনে হয়, আসামে যা ঘটছে, তা আরো বড়, অকল্পনীয় বিপর্যয়কর হতে পারে।

মানুষকে রাষ্ট্রহীন করা একটি অমানবিক আচরণ। যদি কোনো ব্যক্তি আইনগতভাবে কোনো দেশের নাগরিক না হন, তাহলে কোনো দেশই তাদের অধিকার, বেঁচে থাকা বা এমনকি অস্তিত্ব নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ নয়। রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের অবস্থা সম্পর্কিত ১৯৫৪ সালের জাতিসংঘের কনভেনশন সবার মৌলিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কারো জাতীয় পরিচয় অস্বীকার করার মানে তাদের সব অধিকার অস্বীকার করা এবং রাষ্ট্রগুলি নাগরিকত্ব প্রত্যাহারকে বিরোধী এবং সমালোচকদের শাস্তি দেয়ার জন্য রাজনৈতিক উপায় হিসাবে ব্যবহার করে। এ কারণেই এমনকি পশ্চিমা বংশোদ্ভ‚ত আইএস-এর যোদ্ধা এবং সহযোগীদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও বেশ বিতর্কিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসামের বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, এখানে সম্পূর্ণ নিরীহ অগণিত বেসামরিক মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রহীন করে দেয়া এবং বন্দি শিবির কিংবা শরণার্থী শিবিরে রেখে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া, একটি অগণনীয় মানবিক সঙ্কট তৈরির পথ সৃষ্টি করে।

আসামে ভারতের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করবে - যারা এই ‘অবাঞ্ছিত’ মানুষকে গ্রহণ করবে এমন কোনও ইঙ্গিত দেখায়নি। তবে উভয় দেশই যুক্তিসঙ্গত ও মানবিকভাবে এই উদ্বেগ ও সঙ্কট নিষ্পত্তির জন্য আলোচনায় দায়বদ্ধ। বাংলাদেশকে অবশ্যই ভারতের সাথে একরকম চুক্তিতে আসতে হবে এবং শিগগিরই তার সীমানায় আশ্রয় প্রার্থনা করা রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গার অবস্থান সম্পর্কিত নীতিগুলি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ