পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এককালে দক্ষিণাঞ্চল ছিল নদ-নদী নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। এখন সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে উঠছে। ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ এবং বরিশাল-খুলনা ও বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে দুটি সেতুসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সংযোগ সড়কের মান উন্নয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পায়রা ও বেকুঠিয়া সেতু নির্মাণসহ এসব মহাসড়ক সমূহের উন্নয়ন সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের জাতীয় মহাসড়কে ফেরি নির্ভরতা হ্রাস পাবে।
কুয়েত উন্নয়ন তহবিলে এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সেতুর নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ‘পায়রা সেতু’ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অধীনে চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। পায়রা সেতু নির্মিত হলে পটুয়াখালী এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশীরভাগ এলাকা থেকে কুয়াকাটার সড়ক পথে দূরত্ব কক্সবাজারের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসবে।
অপরদিকে চীনা অনুদানে চট্টগ্রাম-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর-বাগেরহাট-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতু’র নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলেছে। এক হাজার ৪৯৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মিত হলে তা চট্টগ্রাম-লক্ষীপুর এবং ভোলার সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দরের সড়ক যোগাযোগকে সহজতর করবে। চীনা অনুদানে বেকুঠিয়াতে ‘৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’র নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।
অপরদিকে ওই মহাসড়কেরই ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী তেতুলিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়ন করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। দাতা পাওয়া গেলে যত দ্রুত সম্ভব এখানে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে এ সেতু নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছেন। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ওই অঞ্চলের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থল বন্দরের সড়কপথে দূরত্ব অর্ধেকেরও বেশী কমে আসবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-লক্ষীপুর-ভোলা- বরিশাল-মোংলা-খুলনা মহাসড়কটি উন্নয়নের পাশাপাশি ভোলা-লক্ষীপুর ও ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তী ফেরি সার্ভিসের উন্নয়ন সম্ভব হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপ বহুলাংশে কমে আসবে।
বরিশাল মহানগরী থেকে লাহারহাট হয়ে ভোলা এবং লক্ষীপুর পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় মহাসড়কটি ৩০ ফুট প্রশস্ত করে আরো অধিক ভারবহনক্ষম পর্যায়ে উন্নীত করণে ৩১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। গত এপ্রিলে একনেকের অনুমোদন লাভের পরে ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী নভেম্বর থেকে প্রকল্পটির বাস্তব উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
এদিকে, প্রায় ১২১ কোটি টাকার দেশীয় তহবিলে ইতোমধ্যে ফরিদপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল অংশের ৬০ কিলোমিটার মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পটুয়াখালী-বরিশাল-ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কের লেবুখালী থেকে বরিশাল মহানগরী হয়ে ভুরঘাটা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার মহাসড়ক ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট প্রশস্ততায় উন্নীত করেছে। ওই মহাসড়কেরই বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও মেজর জলিল সেতুর ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের বিদ্যমান কার্পেটিংয়ের ওপর ‘ডিবিএসটি’ করে তা আরো টেকসই করা হয়েছে। এছাড়াও দুটি কালভার্টের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।
অপরদিকে ‘আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প’-এর আওতায় বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর-খুলনা মহাসড়কের বিভিন্ন অংশের উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলছে। একই সাথে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে মঠবাড়িয়া হয়ে বরগুনার পাথরঘাটা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটিকে ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুট প্রশস্ত করে বহন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এসব খাতে ব্যয়ে হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বরিশাল মহানগরীর রূপাতলী মিনিবাস টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠী জেলা সীমান্ত পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার অংশের প্রশস্ততা বৃদ্ধিসহ মান উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। বরিশাল সীমান্ত থেকে ঝালকাঠী শহরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্ততা ২৪ ফুটে উন্নীতকরণে ব্যয় হচ্ছে আরো ২৬ কোটি টাকা। ঝালকাঠী জিরো পয়েন্ট থেকে রাজাপুর হয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশ মহাসড়কটির উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে ৫৭ কোটি টাকা।
ভান্ডারিয়া থেকে চরখালী ফেরি ঘাট হয়ে পিরোজপুর শহরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়নেও প্রায় ৬৮ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এসব সড়কগুলোর উন্নয়ন শেষ হলে সাগর পাড়ের পাথরঘাটা থেকে বরিশাল-মাওয়া হয়ে রাজধানী ঢাকা পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। তবে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে এ সময় আরো অন্তত দুই ঘণ্টা কমে আসবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এসব সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে বলে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বাবু সুশীল কুমার সাহা জানিয়েছেন।
এদিকে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা মহাসড়কের আগৈলঝাড়া বাইপাসসহ এর সংযোগ সড়কের প্রশস্তকরণ এবং মান উন্নয়নের কাজও শেষ করেছে বরিশাল সড়ক বিভাগ। এর ফলে বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে কোন ধরনের ফেরি পারাপার ছাড়াই খুলনা বিভাগীয় সদরসহ আশপাশের এলাকার সড়ক যোগাযোগ আরো সহজতর হয়েছে।
তবে ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হলেও মূল প্রকল্প বাস্তবায়ন এখনো কিছুটা অন্ধকারে। প্রকল্পটির জন্য এখনো দাতা জোগাড় হয়নি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকল্পটিতে ঋণ প্রদানের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বরিশাল মহানগরীর ভেতর দিয়ে এ চারলেন মহাসড়ক নির্মাণ পরিকল্পনায় অনেক মূলবান সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভেঙে ফেলতে হবে বিধায় বিষয়টি নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরী হতে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রস্তাবিত বরিশাল বাইপাস নির্মাণের মাধমে এ বিপত্তি এড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর আর কুয়াকাটার সড়ক পরিবহন উন্নয়নে এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নতিকরণের কোন বিকল্প নেই।
সড়ক অধিদফতরের সূত্র জানায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে প্রায় তিন হাজার একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে বাস্তবায়নও চলছে। আগামী জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে মূল প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।
বরিশালের সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহসহ বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ জনস্বার্থে এসব সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এসব উন্নয়ন প্রকল্পই জনস্বার্থ বিঘ্নিত না করে জনকল্যাণে বস্তবায়নেরও তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।