পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এনআরসি নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। ভারতের সব রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি তৈরির দাবি জানিয়ে তারা এখন বলছে, আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) ভুলে ভরা নথি ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, হিন্দুস্তানে কোনো হিন্দু কখনো ‘বিদেশি’ হতে পারে না। এদিকে, এনআরসির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল।
নাগরিকপঞ্জি তালিকা পেয়ে আসামের বিজেপি বিস্মিত, ক্ষুব্ধ। কেননা, যে ১৯ লাখ মানুষের নাম তালিকায় ওঠেনি, তাদের অধিকাংশই বাঙালি হিন্দু। আসামের বিজেপির নেতারা তাই বলতে শুরু করেছেন, এনআরসির নামে রাজ্যে যা হলো, তা পর্বতের মূষিক প্রসব। আসাম বিজেপির সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাস বলেছেন, লাখ লাখ ভারতীয়র নাম তালিকায় ওঠেনি। ওই মানুষজন উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা থেকে যুগ যুগ ধরে এই রাজ্যে বাস করছেন। বৈধ নথিও তাদের রয়েছে। বহুবার তারা নাম তোলার আবেদনও জানিয়েছেন। অথচ নাম ওঠেনি। হিন্দুস্তানিদের স্বার্থেই সারা দেশে এনআরসি করা দরকার। কারণ, হিন্দুস্তানে হিন্দুরা কিছুতেই বিদেশি হতে পারেন না।
বিজেপি বিস্মিত নাগরিকপঞ্জিতে লাখ লাখ হিন্দু বাঙালির নাম নেই দেখে। আর ক্ষুব্ধ, লাখ লাখ মুসলমান বাঙালির নাম স্থান পেয়েছে দেখে। আসামের শিলচর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল বলেছেন, ভুলে ভরা এই তালিকা বিজেপি কিছুতেই মেনে নেবে না। ভারতের হিন্দুরা কখনো বহিরাগত হতে পারে না। ১৩০০ কোটি টাকা খরচ করে এই এনআরসি পর্বতের মূষিক প্রসব ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা মেনে নিতে পারছে না অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নও (আসু), যাদের আন্দোলনের ফলেই ১৯৮৫ সালের চুক্তিতে নাগরিকপঞ্জি তৈরির প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছিল। সেই আসুর মুখ্য উপদেষ্টা সমুজ্জল ভট্টাচার্য সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এই তালিকা তাদের হতাশ করেছে। কারণ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন সময়ে রাজ্যে যত বিদেশির উপস্থিতির কথা বলে এসেছে, এই তালিকা তার ধারেকাছেও নেই। প্রতিকার চেয়ে তারা সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হবেন। আসুর সাধারণ সম্পাদক লুরিংজ্যোতি গগৈয়ের অভিযোগ, কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাছাইয়ের অনেক সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তারা নিদারুণ ব্যর্থ।
এদিকে, আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির তালিকা প্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসুচি পালনের সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় বৈঠকে এই ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করার কথা বলেন তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আসামে এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক লাখ গোর্খার নাম এনআরসি থেকে বাদ যাওয়ায় তিনি তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। এ বার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসুচি নিতে চলেছেন তিনি। এই নিয়ে সোমবার তৃণমূলের বৈঠকে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ঠিক হয়, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তালিকা প্রকাশের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে তৃণমূল। ৭ ও ৮ তারিখ সব জেলায় এই কর্মসূচি পালন করা হবে। ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় হবে বড় মিছিল। চিড়িয়া মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত যাবে এই মিছিল।
নাগরিক তালিকায় নাম ওঠেনি এমন বহু চমকপ্রদ উদাহরণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন আসামের সাবেক মন্ত্রী আসাম গণপরিষদ নেতা আবদুল জব্বারের মেয়ে জাহিদা সুলতানার নাম তালিকায় নেই। ৮৮ বছরের এই নেতা বলেন, সরকারি কর্তারা বলেছিলেন, মেয়ের নাম অবশ্যই তোলা হবে। অথচ হলো না। জাহিদা সুলতানা রাজ্যের এক কলেজের অধ্যাপক। একই রকম ভাগ্য বিশিষ্ট গোর্খা স্বাধীনতাসংগ্রামী ছবিলাল উপাধ্যায়ের নাতনি মঞ্জু দেবীরও। অথচ তার স্বামীর নাম রয়েছে।
তালিকায় নাম ওঠেনি আলফা নেতা পরেশ বরুয়া, তার স্ত্রী ও দুই ছেলের। প্রবল দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তিন জওয়ানের পরিবার। দিলবর হুসেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিপাই। তার ভাই মিজানুর আলী কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান। তৃতীয় ভাই শহীদুল ইসলাম সেনাবাহিনীর সুবেদার। তাদের বাবা আবদুল হামিদ ও মা খাদিজা বেগমের নাম ১৯৭০ সালের ভোটার তালিকায় ছিল। অথচ শহীদুল ছাড়া এদের কারও নাম নাগরিকপঞ্জিতে ওঠেনি।
অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গতকালের বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় ওঠেনি তাদের ‘রাষ্ট্রহীন’ বা ‘বিদেশি’ বলা যাবে না। এসব মানুষকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। আসাম সরকার বিনা খরচে আইনি সাহায্য দেওয়ার কথাও জানিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।