Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশের ওপর বোমা হামলা

মন্ত্রী-এমপিরা টার্গেট হবে না তা বলা যায় না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সায়েন্স ল্যাবে হামলার ঘটনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম টার্গেট ছিলেন না। পুলিশের আইজি এবং ঢাকার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে।

তারা নিশ্চিত করেছেন, এ হামলায় মন্ত্রী টার্গেট ছিলেন না। এটি টেস্ট কেস হতে পারে। হয়তো বড় ধরনের কোনো হামলার পরিকল্পনা আছে। ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে এক সময় যে মন্ত্রী-এমপি-রাজনীতিবিদরা টার্গেট হবে না, তা বলা যায় না। গতকাল রোববার দুপুরে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, এত বছরে বিএনপিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের শুভ কামনা করি। তারা নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করে ইতিবাচক রাজনীতিকে আলিঙ্গন করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

তিনি মনে করেন, সায়েন্স ল্যাবে হামলা এটা জঙ্গিদের বড় ধরনের হামলার টেস্ট কেস হতে পারে, প্রথমে পুলিশের ওপর হামলা হলেও পরে আক্রান্ত হতে পারেন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরাও। পুলিশের ওপর তিন-চারটি হামলার সিস্টেমকে পরবর্তীতে বড় ধরনের হামলার ঘটনার টেস্ট কেস হিসেবে নিতে পারে। তবে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তৎপরতা বেড়েছে। জঙ্গি তৎপরতা এখনও রয়েছে কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তা তো অবশ্যই আছে, দুর্বল হয়েছে, কিন্তু নিষ্ক্রিয় হয়েছে মনে করার কারণ নেই। এটা এখন পৃথিবীর সব দেশেই ঘটছে এ ঘটনা। তলে তলে প্রস্তুতি নিচ্ছে বড় ধরনের হামলার জন্য, আমার কাছে মনে হয়। পুলিশের ওপর তিন-চারটি হামলা টেস্ট কেস হিসেবে নিতে পারে পরবর্তীতে বড় ধরনের হামলা করার জন্য।

গত শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কে বা কারা হামলা চালিয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় এএসআই শাহাবুদ্দিন এবং ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল (৪০) আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাহাবুদ্দিনের দুই পায়ে স্পিøন্টারের আঘাত লেগেছে। আর আমিনুল হাতে আঘাত পেয়েছেন। হামলার সময় তেজগাঁও থেকে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে মন্ত্রীর গাড়ি এবং তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের গাড়ি যানজটে আটকা পড়ে। যাত্রাপথ পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য মন্ত্রীর নিরাপত্তা দলের সদস্য সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুদ্দিন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখনই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

আইএসের হামলার দায় স্বীকার প্রসঙ্গে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আইএসের নামে অপপ্রচার চলছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। ভারতের আসাম রাজ্যে এনআরসি প্রকাশ করা হয়। এই তালিকায় ১৯ লাখের বেশি মানুষ নাগরিকত্ব থেকে বাদ পড়েছে। আসামে ঘোষিত এই এনআরসি বাংলাদেশের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, আসাম প্রতিবেশী দেশের একটি রাজ্য। আমরা এনআরসির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যতটুকু জানি, এই তালিকায় হিন্দুও আছে, মুসলমানও আছে। হিন্দুরা এই তালিকায় আছে ৬০ ভাগ, মুসলমানেরা ৪০ ভাগ। তবে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এ কারণে যে এটা নিয়ে আপিল করার সুযোগ আছে। এ মুহূর্তে কোনো সুইপিং কমেন্ট করা যাবে না।
সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ মন্ত্রিসভায় কেন পাস হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা ক্যাবিনেটে পাস করার কোনো বিষয় নয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সামারি আকারে যাবে, সেটা রেডি হচ্ছে। যে কোনো দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে পারে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের জাতীয় সম্মেলন অক্টোবরেই হওয়ার কথা। নিয়মানুযায়ী তিন বছরে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। অক্টোবরে এখনও ঠিক আছে। আমরা তো পরিবর্তন করিনি। পরিবর্তন করলে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডেকে তা করার বিষয় আসবে। সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হবে না এ মুহূর্তে বলা যাবে না। আমরা এক মাসের নোটিশ দিয়েও জাতীয় সম্মেলন অতীতে করেছি। তবে আমাদের প্রস্তুতি চলছে।

ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক দলের পুনর্বাসনের কোনো বিষয় নেই। ছাত্রলীগের কমিটিকে বলা হয়েছে রিভিজিট করার জন্য, যদি কেউ রিয়েলি বঞ্চিত হয়ে থাকে। আর ছাত্রলীগের কমিটিতে যদি কাউকে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ থাকে, ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা আছেন, আমাদের নেত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে। যারা পদবঞ্চিত বলে পরিচিত তারা তো রাস্তায় এখন আন্দোলন করছে না, কাজেই নিশ্চয়ই এটার একটা প্রক্রিয়া চলছে, এটা সমাধানের একটা পথ, হয়তো তারাও আশ্বস্ত হয়েছে সমাধানের ব্যাপারে। সে কারণে তারাও কোনো বিক্ষোভ দেখাচ্ছে না।

২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলার আগে কয়েক বছর ধরে বøগার, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর বিক্ষিপ্ত হামলা চলছিল। গুলশান হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গি তৎপরতা কমে এলেও স¤প্রতি পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব রয়েছি কি না এ প্রশ্নে কাদের বলেন, আমাদের মোটরযান আইন বলে কোনো আইন নেই, এ আইনের নামে গুজব রটানো হচ্ছে যে, বিভিন্ন বিষয়ে জরিমানা বাড়ানো হচ্ছে, এটা আসলে সড়ক পরিবহন আইন। আইএসের নামেও অপপ্রচার চলছে কি না, তা নিশ্চিত না হয়ে বলতে পারছি না। জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে ট্র্যাক রেকর্ড ভালো, তবে এ বিষয়টি (সা¤প্রতিক হামলা) তারা আমার মনে হয় উদ্ঘাটন করতে পারেনি। তবে এখন সতর্ক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, এ চক্রটাকে বের করার জন্য অনুসন্ধান চলছে।

এ ধরনের হামলার প্রতিরোধে গোয়েন্দা ব্যর্থতা রয়েছে কি না- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দারা তো এ যাবৎ জঙ্গি দমন ও নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সফলতার পরিচয় দিয়েছে, এ বিষয়ে তারা সফল হবে বলে আশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবায়দুল কাদের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ