মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সাধারণত বন্দুকের নলের মুখে, অভ্যুত্থানে ও বিপ্লবে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটে বলে ভাবা হয়ে থাকে। কিন্তু এখনকার দিনগুলোতে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটে জনগণের নামে শ্বাসরোধ হয়ে।
যেমন হাঙ্গেরি। সেখানে ক্ষমতাসীন দল আইন হাতে নেয়া, ব্যবসায় প্রাধান্য বিস্তার, আদালত নিয়ন্ত্রণ, সংবাদ মাধ্যম কিনে ফেলা এবং নির্বাচনের আইন অপব্যবহারের জন্য তাদের পার্লামেন্টারি সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ব্যবহার করেছে।
আমাদের ব্রিফিংয়ে যেমনটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের আইন ভাঙার দরকার হয়নি, কারণ তিনি এটা পার্লামেন্টে পরিবর্তন করতে পারেন। সেগুলো কোনো সহিংসতা ছাড়াই আকারে একেবারে কমিয়ে আনা যেতে পারে। হাঙ্গেরির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা চলছে যদিও কার্যত তা একদলীয় দেশ। হাঙ্গেরির কর্মীবাহিনী একুশ শতকের অন্য শাসন ব্যবস্থা উদরস্থ করছে। এটা শুধু পোলান্ডের মত তরুণ গণতান্ত্রিক দেশেই ঘটছে না। যেখানে ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি দেশের জাতীয় রক্ষণশীল দল ফিদেজকে পরিহাস করতে শুরু করেছে। যা ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতই একটি পুরনো দল। এই পুরনো প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থা একদল ভিত্তিক রাষ্ট্র হওয়ার জন্য নয়। তবুও সেখানে ক্ষয় ধরার লক্ষণ ইতোমধ্যেই দেখা গেছে। একবার যদি পচন শুরু হয় তাহলে সেটা থামানো কঠিন।
হাঙ্গেরির গণতন্ত্রের পতনের মূলে রয়েছে পরস্পরকে দোষারোপ। দুর্নীতিবাজ হিসেবে দেখা হয় এমন একটি সমাজবাদী সরকারের প্রধান স্বীকার করেন যে তিনি ২০০৬ সালে ভোটদাতাদের কাছে মিথ্যা বলেছিলেন। ভোটদাতারা তাদের রাজনীতিকদের খারাপ দিকটি দেখে। ওরবান নিজে আগ্রহ করে এ প্রবণতার বিস্ফোরণ ঘটান। তিনি তার দেশবাসীর শুভবুদ্ধির কাছে আবেদনের বদলে বিভক্তির পত্তন করেন। অসন্তোষ সৃষ্টিতে ইন্ধন যোগান এবং বিশেষ করে অভিবাসন বিষয়ে তাদের কুসংস্কারকে ব্যবহার করেন। এই রাজনৈতিক মঞ্চ মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিত। তার ক্ষমতার উপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে আইন ও প্রতিষ্ঠানের শৈল্পিক অপব্যবহার।
গত দশকে পরিমাণে কিছুটা কম হলেও সর্বত্র একই ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আর্থিক সঙ্কট নিয়ে ভোটারদের বোঝানো হয় যে তারা জনবিচ্ছিন্ন, অযোগ্য ও আত্মস্বার্থ পরায়ণ এলিটদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের চাকরি, বাড়িঘর এবং তাদের ছেলে-মেয়েদের ইরাক ও আফগান যুদ্ধে হারালেও ওয়াল স্ট্রিট ও সিটি অব লন্ডন পার পেয়ে যায়। ব্রিটেনে এক এমপির ব্যয় বিষয়ে স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকায় রাজনীতিতে কর্পোরেটের নগদ টাকা সরবরাহ করা নিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হয়।
গত বছর এক জরিপে দেখা যায়, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা ৮টি দেশের অর্ধেকেরও বেশি ভোটার পিউ রিসার্চ সেন্টারকে বলেছেন যে গণতন্ত্র যে ভাবে কাজ করছে তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। আমেরিকা ও ফ্রান্সের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ বলেন তাদের রাজনীতিকরা দুর্নীতিগ্রস্ত।
রাজনীতিকরা জনগণের এই অসন্তোষের সম্মুখীন। তারা এলিটদের টিটকারি দেন, যদিও তারা নিজেরাও ধনী ও ক্ষমতাশালী। তারা তাদের কাজ করেন এবং ক্রোধ ও বিভক্তিকে লালন করেন। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৪ জন প্রগতিশীল নারী কংগ্রেস সদস্যকে ফিরে যেতে বলেন সেখানে যে ভাঙাচোরা ও অপরাধ সঙ্ঘটনের স্থান থেকে তারা এসেছেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগকে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের বিরুদ্ধে মহল বিশেষের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেন। ব্রিটেনে বরিস জনসন নো ডিল ব্রেক্সিটের পক্ষে এমপিদের সমর্থন হারাচ্ছেন। তিনি পাঁচ সপ্তাহ পার্লামেন্ট স্থগিত করে বিরোধীদের প্রবল ক্ষোভের শিকার হয়েছেন।
জিজ্ঞেস করতে পারেন যে অন্যের ছোটখাট দোষানুসন্ধান করলে ক্ষতি কি? রাজনীতির সব সময়ই একটি নোংরা চেহারা আছে। স্পন্দনশীল গণতন্ত্রে দীর্ঘকাল ধরেই বিরোধীরা তাদের শাসকদের প্রতি অসম্মানবোধ প্রর্দশন করে আসছে, তবে তা সুস্থ পন্থায়। (আগামীকাল শেষ পর্ব)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।