Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আল কোরআনের সূরা ও আয়াতের তত্ত্বকথা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

কোরআনুল কারীম নির্দিষ্ট সংখ্যক সূরা ও আয়াত দ্বারা বিন্যস্ত। সূরা বলতে আল কোরআনের কতকগুলো আয়াতের সমষ্টিকে বোঝায়। যার নিম্ন সংখ্যা হচ্ছে ৩ আয়াত। এর কম সংখ্যক আয়াত সংবলিত কোনো সূরা নেই। ঊর্ধ্বতম সংখ্যা হচ্ছে ২৮৬। আমরা জানি, ৩ সংখ্যাটি বেজোড়।

অনুরূপভাবে ২৮৬ সংখ্যাটির একক (২+৮+৬) = ১৬, তার একক (১+৬) = ৭। এই ৭ সংখ্যাটি ও বেজোড়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বোজোড়। তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন। কেন করেন, কী জন্য করেন, তার নিগূঢ় রহস্যাবলি আল কোরআনে বিধৃত আছে।

কোরআনুল কারীমের মোট সূরা সংখ্যা ১১৪টি। এই সূরাগুলোকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। উস্তাজুল আসাতেজা সাইয়েদ মুফতি মোহাম্মাদ আমীমুল ইহসান রহ.-এর মতে, শারেয় অর্থাৎ আল্লাহপাক বা সাইয়েদুল মুরসালিন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. কর্তৃক নির্দিষ্টভাবে এই সূরাগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। সূরাগুলোর নামকরণের ব্যাপারে ৩টি বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

প্রথমত, সূরা আলোচ্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন সূরাতুল ফাতিহা, সূরাতুল ইখলাস ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, সূরার মধ্যস্থিত কোনো একটি শব্দ অথবা বিশেষ কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন সূরা বাকারাহ, সূরা হুজরাত ইত্যাদি। তৃতীয়ত, সূরার আলোচ্য বিষয়ের পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন সূরা ফীল, সূরা লাহাব ইত্যাদি

নুজুল বা অবতীর্ণ হওয়ার নিরিখে আল কোরআনের সূরাগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা, মাক্কী সূরা ও মাদানী সূরা। ১. মাক্কী সূরা : রাসূলুল্লাহ সা.-এর মক্কী জীবনে অর্থাৎ মদিনায় হিজরত করার পূর্বে যে সকল আয়াত ও সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলোকে মাক্কী সূরা বলা হয়। মাক্কী সূরার সংখ্যা ৮৬টি। ২. মাদানী সূরা : রাসূলে আকরাম সা. মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করার পর যেসব আয়াত বা সূরা নাজিল হয়েছে সেগুলোকে মাদানী সূরা বলে। মাদানী সূরার সংখ্যা ২৮টি।

মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্যাবলি : ১. মাক্কী সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাত, ঈমান ও হাশরের বর্ণনা ইত্যাদি। ২. মাক্কী সূরাগুলো সাধারণত ছোট ছোট আয়াত ছন্দময় আয়াত সমৃদ্ধ, অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী যা সহজে মুখস্থ করার উপযোগী। ৩. যেসব সূরায় ‘হে মানবজাতি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, তা মাক্কী। ৪. যেসব সূরায় ‘কাল্লা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, তা মাক্কী। ৫. মাক্কী সূরায় রাসূলুল্লাহ সা.-কে বিরাট দায়িত্ব পালনের উপযোগী উপদেশ দেয়া হয়েছে। ৬. যেসব সূরায় হযরত আদম আ. এবং ইবলিশের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, তা মাক্কী। কিন্তু একমাত্র বাকারাহ এই মূলনীতির বাইরে। কেননা, এর কিছু আয়াত মদীনায় নাজিল হয়েছে। ৭. মাক্কী সূরাগুলোতে কসম করা হয়েছে। এই শপথ অপ্রতিরোধ্য ও অবশ্যই বাস্তবায়নের ইঙ্গিতবহ।

মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্যাবলি : ১. যেসব সূরায় ‘হে ঈমানদারগণ’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, তা মাদানী সূরার অন্তর্ভুক্ত। ২. যেসব সূরায় জিহাদের নির্দেশ রয়েছে তা মাদানী। ৩. যেসব সূরা মুনাফিকদের প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে তা মাদানী। ৪. মাদানী সূরাগুলো সাধারণত আকারে বড়, বিস্তারিত ও তথ্যবহুল। ৫. মাদানী সূরায় অর্থনৈতিক বিধি ব্যবস্থা এবং জাকাত, ওশর ও দানখয়রাতের নিয়মকানুন আলোচিত হয়েছে। ৬. মাদানী সূরাগুলোতে আছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের যাবতীয় সমস্যার বিশদ সমাধান। সৃষ্টিজগতের স্থায়িত্ব ও বিলুপ্তির সঙ্কেতরাজি।

তা ছাড়া, এই সূরাগুলোর বিষয়বস্তু হচ্ছে শরীয়তের হুকুম-আহকাম, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আচার ব্যবহারের নির্দেশাবলি, হালাল, হারাম, বিবাহ, তালাক, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, মিরাস, লেনদেন, স্বরাষ্ট্রনীতি ও পররাষ্ট্ররীতি, রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ও বন্দীনীতি ইত্যাদি

আর আরবী ‘আয়াত’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ নিদর্শন। ইসলামী পরিভাষায় আয়াত হচ্ছে আল কোরআনের সূরার একটি অংশ, যা তার পূর্বের অংশ ও পরের অংশ থেকে পৃথক এবং উভয় অংশের মধ্যে অর্থ ও মর্মের সংযোগ রক্ষাকারী হিসেবে সন্নিবেশিত। আল কোরআনের আয়াত ৬২৩৭। কেউ কেউ আল কোরআনের আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬ বলে থাকে। এর কোনো ভিত্তি নেই। আয়াতের প্রকার হলো : ক. শব্দগত দিক থেকে আয়াত দুই প্রকার। যথা, ১. মুহকামাত, যার অর্থ ও মর্ম সহজেই অনুধাবন করা যায়। ২. মুতাশাবিহাত, যার অর্থ ও মর্ম অনুধাবনে চিন্তা, গবেষণার প্রয়োজন হয়। খ. হুকুমের দিক থেকে আয়াত ৩ প্রকার। ১. হালাল, ২. হারাম এবং ৩. আমছাল বা উদাহরণ।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল কোরআনে ৫ প্রকার আয়াত নাজিল হয়েছে। ১. হালাল, ২. হারাম, ৩, মুহকামাত, ৪. মুতাশাবিহাত এবং ৫. পূর্ববর্তী জাতিসমূহের দৃষ্টান্ত। তোমরা হালালকে হালাল জানো, হারাম থেকে দূরে থাকো, আল্লাহর হুকুম মোতাবেক কাজ করো। মুতাশাবিহাত (যার অর্থ অস্পষ্ট) আয়াতের প্রতি ঈমান রাখো এবং পূর্বের জাতির দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো।’ (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)। জমহুর ওলামা ও মুফাসসিরগণের অভিমত হলো আল কোরআনের নাজিলকৃত সর্বপ্রথম আয়াত হচ্ছে সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত।



 

Show all comments
  • Harun Ur Rashid ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
    পবিত্র কোরআন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, “এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর-যাতে তোমরা আল্লাহর করুণা বা রহমতপ্রাপ্ত হও। ”
    Total Reply(0) Reply
  • মাহিন আদনান ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
    শুকরিয়া, আল কোরআন মানুষের সৌভাগ্যের দিশারি পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়সহ সৌভাগ্যময় এবং উন্নত জীবন যাপনের সমস্ত নির্দেশনা রয়েছে এ মহাগ্রন্থে।
    Total Reply(0) Reply
  • মশিউর রহমান ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
    কোরআন ছাড়া অন্য কোনো গ্রন্থ মানুষের জীবনের সব দিকের নির্দেশনা দেয় না। কোরআনের বাণীর বাহ্যিক কাঠামো যেমন সৌন্দর্য্যে অনন্য তেমনি এর বিষয়বস্তুও গভীরতা ও গুরুত্বের দিক থেকে অনন্য। কোরআন যে মানুষের রচিত গ্রন্থ নয়, এটাই তার বড় প্রমাণ এবং এ মহাগ্রন্থের চিরন্তন অলৌকিকতার স্বাক্ষর।
    Total Reply(0) Reply
  • মু. অহিদুল হক ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
    ইমাম ফখরে রাজির মতে, ” ভাষার বিশুদ্ধ রীতি, কাঠামো ও সব ধরনের ত্রুটিহীনতা কোরআনের অলৌকিকতা।” ইবনে আতিয়ার মতে, ” সুশৃঙ্ক্ষল শব্দ ও অর্থের বাস্তবতা কোরআনের অলৌকিকতা”।
    Total Reply(0) Reply
  • হাঃমাওঃ শিব্বির আহমদ হাবিবী ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
    রাসূল (সাঃ) কাগজ, কলম ও কালির সাথে পরিচিত ছিলেন না, কিন্তু কোরআনে কলম ও লেখনির শপথ দেখা যায়। তাঁর ওপর মহান আল্লাহর প্রথম যে বাক্যটি ওহি বা প্রত্যাদেশ হিসেবে নাজেল হয়েছিল তা হল, পড়। তিনি মানুষের জন্য জ্ঞানকে সবচেয়ে বড় সম্পদ বা নেয়ামত বলে মনে করতেন। মদিনায় ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার পর তিনি সবাইকে জ্ঞান অর্জনের জোর আহ্বান জানান।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    আল কোরআনে ঈমান বা এর সমার্ধক শব্দ এসেছে ৮১১ বার এবং জ্ঞান বা এর সমার্থক শব্দ এসেছে ৮১১ বার। আর এ থেকে মানুষের সৌভাগ্যের দুই প্রধান চাবিকাঠি হিসেবে ঈমান ও জ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও গুরুত্ব ফুটে উঠে। মানবীয় মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য ঈমান যতটা জরুরি, মানুষের পূর্ণতার জন্য জ্ঞানও ততটা জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • Wahid Mia ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:২৪ পিএম says : 0
    ২১. সুরা তিন: এটি কোরআন মাজিদের ২৮তম মাক্কি সুরা?
    Total Reply(0) Reply
  • Wahid Mia ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:৩৪ পিএম says : 0
    ২১. সুরা তিন: এটি কোরআন মাজিদের ২৮তম মাক্কি সুরা?
    Total Reply(0) Reply
  • যুবায়ের ৩০ জুলাই, ২০২০, ১১:৩৯ এএম says : 0
    কুরআনে মাক্কী ও মাদানী সুরার আয়াত সংখ্যা কত ??????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন