Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চুক্তিহীন ব্রেক্সিটে অনড় বিরোধীরা একাট্টা

বরিস জনসনের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে প্রয়োজনে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় ব্রিটেনের সংসদে কোণঠাসা হতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যে কোনো ম‚ল্যে ৩১ অক্টোবর ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা দ‚র করতে ব্রিটেনের সংসদ সাময়িক স্থগিত করেন তিনি। এরপরই সংসদের বিরোধী দলগুলো তার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়, এমনকি দলীয় কয়েক সদস্যও তার বিরুদ্ধে গেছেন। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে জনতার বিক্ষোভও চলছে। এর মাঝেই অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে স্কটল্যান্ডের আদালতে করা এক আবেদন শুক্রবার খারিজ হয়েছে। এ অবস্থায় বরিস জনসন জানিয়েছেন, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ব্রেক্সিটের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেপ্টেম্বরে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন করে দু’পক্ষের আলোচনা হবে বলে জানান তিনি। গত বুধবার ব্রাসেলসে বরিসের ব্রেক্সিটবিষয়ক মধ্যস্থতাকারী ডেভিড ফ্রস্ট ও ইইউ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফান বøক। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সংসদের অধিবেশনে কাটছাঁট করে ব্রেক্সিটের আগে বিরোধীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করলেও তারা হাল ছাড়তে প্রস্তুত নন। ৩১ অক্টোবরের আগেই তারা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা দ‚র করতে বদ্ধপরিকর। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রীর বেপরোয়া উদ্যোগ থামানোর চেষ্টা করা হবে। লেবারসহ পাঁচটি বিরোধী দল এক যৌথ ঘোষণাপত্রে সংসদ মুলতবির পদক্ষেপ নিয়ে ভোটাভুটির উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছে। অপরদিকে বরিসের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ, আসছে অনাস্থা প্রস্তাব। চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে সংসদ স্থগিত করে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জনগণ, বিরোধী দল, সংসদ সদস্য, সংসদের স্পিকার থেকে শুরু করে নিজ দলের সদস্যদেরও সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন মুলতবি করে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া সিদ্ধান্ত গত বুধবারই রানীর অনুমোদনের পর ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করে হাজার মানুষ। এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন না হলে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব আনার হুমকি দিয়েছে বিরোধীরা। রয়টার্স ও ডয়চে ভেলে বলছে, আগামী ৩১ অক্টোবর যে কোনো ম‚ল্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রেক্সিট কার্যকর করার পথে কোনোরকম বাধা বরদাস্ত করতে রাজি নন বরিস জনসন। ব্রিটেনের সংসদে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট প্রতিরোধ করতে আইন অনুমোদনের প্রচেষ্টার একদিন পরই তাই এমন পদক্ষেপ নিলেন, যাতে ব্রেক্সিটের সময় পর্যন্ত সংসদের ক্ষমতা খুবই সীমিত হয়ে পড়ে। অধিবেশনের সময় সংকুচিত করে তিনি সংসদ সদস্যদের পাল্টা পদক্ষেপের পথ কার্যত বন্ধ করে দিলেন। বরিস জনসনের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে লন্ডন, ম্যানচেস্টার, এডিনবরা ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। লন্ডন শহরে সংসদের সামনে মানুষ ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান বন্ধ করো’ লেখা পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। অনেকের হাতে ছিল ইইউর পতাকা। বিক্ষোভ ডাউনিং স্ট্রিটের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আরও বিক্ষোভ হবে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন। সরকারি ওয়েবসাইটে সংসদ মুলতবি না করার জন্য দাখিল করা একটি ই-পিটিশনে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি স্বাক্ষর জমা পড়েছে। বিবিসি বলছে, আগামী সপ্তাহে অধিবেশন শুরু হওয়ার পর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদ মুলতবি রাখা হবে। ১৪ অক্টোবর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাষণের মাধ্যমে আবার অধিবেশন শুরু হবে। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে গণতন্ত্রবিরোধী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ও উদারপন্থী দলের নেতা জো সুইনসন রানীকে চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতার কথা জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহেই সংসদে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব দেয়ার কথাও জানান করবিন। ইংল্যান্ডের সাবেক অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তার মতে, জাতীয় সংকটের এই সময়ে সরকারের কার্যকলাপের ওপর সংসদ নজর রাখতে না পারলে, তা সংবিধানের অবমাননা হবে। হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাউ এই সিদ্ধান্তকে ‘সাংবিধানিক জুলুম’ বলে বর্ণনা করেছেন। ৭০ জনেরও বেশি সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণার আবেদন নিয়ে স্কটল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ইংল্যান্ডের আদালতেও একাধিক আবেদন জমা পড়ছে। ব্রেক্সিটবিরোধী আন্দোলনকারী জিনা মিলার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে জুডিশিয়াল রিভিউয়ের আবেদন জানিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন বরিসের ‘স্বৈরাচারী’ আচরণের কড়া সমালোচনা করে মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতির অবমাননার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা ঠেকাতে আগামী সপ্তাহে এমপিদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্কটল্যান্ডে বরিসের কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান রুথ ডেভিডসন দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। বরিসের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দেন তিনি। বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ