Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বরিশাল মহানগরীর মড়া খাল ও ড্রেনগুলো মশার নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্র

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকির সৃষ্টি করছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ৬:২৭ পিএম

ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং প্রশাসন সহ নগরবাসীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে বরিশাল মহানগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সহ সার্বিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক অবস্থায়। বর্তমান নগর প্রশাসন নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই টেকসই হচ্ছে না। আবার নগরীর ড্রেন ও মড়া খালগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত পরিষ্কার না করার পাশাপাশি কতিপয় বিবেকহীন নগরবাসী ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করায় প্রবাহ আটকে গিয়ে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থায় মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে বেশীরভাগ ড্রেন ও মড়া খালই ইতোমধ্যে মশার নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ফলে এক সময়ের ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত বরিশাল মহানগরী এখন যথেষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। নগরীর ৪৮টি খালের ১০৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কার সহ উন্নয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প-সারপত্র, ডিপিপি’ দাখিল করা হয়েছে বিগত নগর পরিষদেও সময়ে। বর্তমান পরিষদ এ লক্ষে আরো একটি মেগা প্রকল্প দাখিল করেছে। কিন্তু তা এখনো পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনা লাভ করেনি। কীর্তনখোলা ও সন্ধ্যা নদীর সাথে যুক্ত এ নগরীর খালগুলোর সবই প্রবাহ সংকটে দিন দিন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে নদীগুলোর পানির স্তর নিচে নেমে যাবার পাশাপাশি নগরীর মধ্যে দিয়ে বহমান খালগুলো কতিপয় বিবেকহীন নগরবাসীর অসত কর্মকাণ্ডে ভরাট হয়ে এর তলা উঁচু হয়ে যাচ্ছে। ফলে নিকট অতীতের প্রবহমান এসব খালে এখন আর জোয়ার ভাটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। ফলে নগরীর প্রায় সব খালই মড়া নালায় পরিণত হয়ে তা মশার প্রজনন ক্ষেত্র সহ উৎকট দুর্গন্ধের আধারে পরিণত হয়েছে।

খালগুলোতে প্রবাহ না থাকায় নগরীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও ক্রমশ নিচে নামার পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও নানামুখী বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অথচ দু দশক আগেও এ নগরীর অভ্যন্তরে বটতলা বাজার, নতুন বাজার, সাগরদী বাজার ও বড়বাজার খালে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করত। নগরীর অভ্যন্তরে খালগুলো দিয়ে বটতলা, নতুন বাজার, সাগরদী বাজার ও বড়বাজারে পণ্যবাহী নৌকায় বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়া হত। নিয়মিত জোয়ার ভাটার প্রবাহ অব্যাহত ছিল এসব খালে। এসব বিবেচনায় ব্রিটিশ যুগে ইংরেজ শাসক বর্গ বরিশালকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ নামে অবিহিত করেছিলেন।

কিন্তু সে সুনাম এখন অতীত। নগরীর বেশ কয়েকটি খাল পাকা ড্রেনের রূপ নিয়েছে। বড় বাজার সংলগ্ন জেল খালে ভরা বর্ষয়ও কীর্তনখোলার প্রবাহ চোখে পড়েনা। অথচ বছর দুয়েক আগে জেলা প্রশাসন থেকে এই জেল খাল সংস্কারে কয়েক দফায় ঢাক ঢোল পিটিয়ে নানা অনুষ্ঠান করা হয়েছে। জেল খাল সংস্কারের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা সংগ্রহের অভিযোগও ওঠে তখন। এমনকি জেলা প্রশাসন থেকে জেল খাল সংস্কারে ২৩কোটি টাকার প্রাক্কলনও দাখিল করা হয়। পরে সব কিছুই স্তিমিত হয়ে গেছে।
বর্তমানে নগরীর নবগ্রাম রোড খাল, জেল খাল, সাগরদী খাল সহ সবগুলো খালই প্রায় অস্তিত্বহীন। এসব খালের করুন অবস্থা সব বর্ণনার বাইরে। আর নবগ্রাম রোড সহ বেশ কয়েকটি খাল ময়লা আবর্জনা আর মশক প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে নগরীর মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকি সৃষ্টি করে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের কনজার্ভেন্সী শাখার অধীনে সাড়ে ৯শ দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিক রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪শ ঝাড়–দার বা পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এছাড়া নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৩শ পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে। ঐসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দায়িত্ব বন্টন সহ কাজের তদারকির জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে সুপরাভাইজারও রয়েছে। কিন্তু এরপরেও নগরীর ড্রেন ও খালগুলো নিয়মিত পরিস্কার হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষকরে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন বিভাগের নজরদারী কম বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ময়লা ও বর্জ্য পরিস্কারে কিছুটা শৃখলা ফিরে এলেও ড্রেন ও খাল পরিস্কার রাখার ক্ষেত্রে সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নগরবাশীর মধ্যে। এমনকি সদ্যসমাপ্ত ঈদ উল অজহায় কোরবানিকৃত পশুর বর্র্জ্য পরিস্কারের ক্ষেত্রে নগরীর উন্নত এলাকায় যে তড়িৎ পদক্ষেপ লক্ষ করা গেছে, অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকায় তেমন নজরদারী ছিলনা বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরশনের কনজার্ভেন্সী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাঃ রবিউল আলমের সাথে আলাপ করা হলে তিনি নগরীর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে বলে দাবী করেন। তবে অনেক এলাকার মানুষ ড্রেন ও খালগুলোতে ময়লা আবর্জনা ফেলে প্রবাহ রুদ্ধ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে ‘ঐসব খাল ও ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করলে পরিস্থিতি এতটা অবনতি হতনা’, এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও জানান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ