পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সমাজে, সংবাদ মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়ে না। সুতরাং এতেই বোঝা যায় এতসব গুমের হোতা কারা। গুমের সাথে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের মদদদানকারীরাও বিচারের আওতার বাইরে থাকবে না। প্রতিটি গুমের তদন্ত ও বিচার একদিন হবেই। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের ঘটনার সূত্রপাত ঘটে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর অসংখ্য কর্মী-সদস্য, সরকারী কর্মকর্তা এবং অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অসংখ্য সদস্যকে গুমের শিকার হতে হয় জাতীয় রক্ষী বাহিনীর হাতে। যা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এলিট প্যারামিলিটারী ফোর্স ছিল।’ [সুত্রঃ ম্যাসক্যারেনহাস, এ্যানথনি (১৯৮৬), বাংলাদেশ এ লিগেসি অব ব্লাড, ইউনাইটেড কিংডম ]
তিনি বলেন, ৭২-৭৫'র ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ১২০৯ জন। যার ভিতর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুমের সংখ্যা ৭৮১ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন-জনপ্রতিনিধি সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, লাকসাম বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, সুমন, ছাত্রনেতা জাকির, নিজামুদ্দিন মুন্না, তারিকুল ইসলাম ঝন্টু, আদনান চৌধুরী, মোঃ সোহেল, খালিদ হোসেন সোহেল, সম্রাট মোল্লা, মাহবুব হাসান সুজনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দুই মাস গুম করে রাখার পর অন্য দেশে ফেলে দিয়ে এসেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা এখনও পথ চেয়ে বসে আছেন, ছোট শিশুরা অপেক্ষা করছে বাবা ফিরে আসবে সেই আশায়, সন্তানের দু:শ্চিন্তায় অনেকের বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। নিখোঁজ সুমনের মা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অন্ধ হয়ে গেছেন। গুমের শিকার প্রতিটি পরিবারের কান্না-আহাজারী আর প্রতীক্ষার দিবানিশি শেষ হচ্ছে না।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বিএনপির লোকজন দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, গত ২২ জুন একটি পত্রিকার সূত্র ধরে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয় যে, গত কয়েক বছরে যে সব মানুষ নিখোঁজ হয়েছে তার বেশীর ভাগই বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি‘র সদস্য। এদের ভিতর আরো আছেন মানবাধিকার কর্মী, যারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনায় সোচ্চার ছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ সালের শুরু থেকে ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫০৭টি জোরপূর্বক গুম প্রামান্য দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছে নাগরিক সমাজ বিষয়ক গ্রুপগুলো। গুম হয়ে যাওয়া মানুষের ভিতর ২৮৬ জন জীবিত ফিরেছেন ঘরে। ৬২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত অবস্থায়। বাকী ১৫৯ জন মানুষ আজও নিখোঁজ। গতকাল আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে ২০১৪ থেকে ২০১৯ (জুলাই) পর্যন্ত ৩৪৪ জন গুমের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৬০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৩৫ জন ফেরত এসেছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে, বিশেষ বাহিনী-র্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেওয়া হচ্ছে।বেশীর ভাগ গুমের জন্য সন্দেহ করা হয়-পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র্যাবকে।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালে। গণতন্ত্রের অকাল প্রয়াণ ঘটানোর জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। গণতন্ত্র হত্যায় রাষ্ট্রের এই নিষ্ঠুর চেহারা দেখে জনগণ শোক জানাতেও ভয় পাচ্ছে। গুম একটি ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধ। গুমকে ব্যবহার করা হচ্ছে সুদুরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে, বিরোধী দল ও মতকে নির্মূল করে রাষ্ট্র-সমাজে একমাত্রিকতা, কর্তৃত্ববাদী ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য। মানুষের কঙ্কাল দিয়েই নিষ্ঠুর একদলীয় শাসন কায়েম হয়। এই কারণেই ভিন্ন মত, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসনসহ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশকে সর্বশক্তি দিয়ে রুদ্ধ করা হয়েছে। চিরদিনের জন্য নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে মানুষ বিদ্যমান দু:শাসনের বিরুদ্ধে যাতে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য বর্তমান সরকার গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গুম আদিম বন্য ব্যবস্থা। এই নিষ্ঠুর কাজের সাথে যারা জড়িত তারা হিংস্র প্রাণীর সাথেই তুলনীয়।
মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার (এএলআরসি) এর একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অন্ততঃ ৪৩৫ জনকে গুম করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লোকজনকে তুলে নেয়া ও গুমের সাথে জড়িত হিসেবে ডিবি, গোয়েন্দা বিভাগ, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ) ও র্যাবের নাম উঠে এসেছে। একই প্রতিবেদনে নাগরিকদের তুলে নেয়া ও গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে আসছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।
বিশ্বব্যাপি যারাই গুমের সাথে জড়িত ছিলো তাদের কেউ রেহায় পায়নি মন্তব্য করে রিজভী বলেন, কোন অপরাধই চিরদিনই শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে না, কোন না কোন দিন এর বিচার হয়। বিচার হয় এজন্যই যে, রাষ্ট্র নির্দেশিত গুম-ক্রসফায়ার কোন সমাজেরই কল্যাণ সাধন করতে পারে না। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার না হলে সেই রাষ্ট্র ক্রমে দানব থেকে মহাদানবে পরিণত হয়ে একসময় সার্বিক ধ্বংস অনিবার্য করে তুলে ক্ষতি করে দেশ ও জনগোষ্ঠীর। যেমন-হিসেন হেব্রে প্রায় ৮ বছর আফ্রিকার চাদ এর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ৮ বছরে হত্যা, নির্যাতন, গুমসহ অসংখ্য অপকর্ম করেছিল, তারও যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছিল। আর্জেন্টিনার ক্ষমতাবাদ জেনারেল রেনাল বিগনান যিনি অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন তাকেও বিচারের মুখোমুখি হয়ে শাস্তি পেতে হয়েছে। গুয়েতেমালার হত্যা-গুমের হোতা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারাও বিচারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
এসময় তিনি জানান, গতকাল মৌলভীবাজার কলেজের শহীদ জিয়া অডিটোরিয়ামের নামফলক ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডার’রা। তিনি এধরণের ঘৃন্য আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে নামফলক প্রতিস্থাপনসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।