Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেন্দুয়ায় আটশ’ বছরের প্রাচীন মসজিদ সংস্কারে উদ্যোগ নেই

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ কে এম আব্দুল্লাহ, নেত্রকোনা থেকে

নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফ্ফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামে অবস্থিত ৮ শতাধিক বছর পূর্বে মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে তার জৌলুস হারিয়ে ক্রমশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুততম সময়ে সংস্কার না করতে পারলে হারিয়ে যেতে পারে মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি। সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, মুঘল শাসন আমলে ইখ্তিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন্ বখ্তিয়ার খিল্জীর অত্যন্ত ¯েœহভাজন ও অনুসারী শাইখ মোহাম্মদ ইয়ার নামক এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ১২০০ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটির ঈমাম মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, মসজিদের ভেতরে দেয়ালের গায়ে ফার্সিতে শাইখ মোহাম্মদ ইয়ার-এর নাম এবং ১২শ’ খ্রিস্টাব্দ লিখা থাকায় মনে করা হচ্ছে তিনিই মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা এবং ১২শ খ্রিস্টাব্দে তিনি এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়াও ফার্সিতে আরো লেখা রয়েছে “শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারে বাসিন্দা/ হারুলিয়া বসিটকে/ আইজ দীলে সুধাবানী মসজিদ/ হাজারে দু’সাদ্দেখানা দু’সনমে বুয়াত/ বাহাতুপে আমুদা তারকে সালেশ”। মাত্র সাত শতাংশ ভূমির উপর নির্মিত মসজিদটির চারকোনায় চারটি পিলার রয়েছে যার উপরিভাগ কলসি দ্বারা গম্বুজাকার কারুকার্য ম-িত। চৌকোন বিশিষ্ট মসজিদটির পুরো ছাদ জুড়ে একটি মাত্র বিশালাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে তিনটি লম্বাটে দরগা এবং সামনের অংশে ছোট্ট একটি চৌচালা টিনের ঘর। ধারণা করা হচ্ছে, জায়গা কম থাকায় মুসল্লীদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে এই চৌচালাটি নির্মিত হয়েছে। নির্মাণ শৈলী ও অবকাঠামো দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, পোড়ামাটি, লালি, চুন, চিনি, চিটাগুড়, কষ এবং এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা এই প্রাচীন মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। হারুলিয়া গ্রামের নবীন-প্রবীণ অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। তাদের মধ্যে আব্দুল মন্নাফ, শফিকুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, খাদেরুল ইসলাম, পিন্টু মিয়া জানান, মুঘল আমলে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর শাসনকালে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। উপমহাদেশে তৎকালীন সময় নির্মিতব্য ৮টি মসজিদের মধ্যে এটি একটি। গ্রামবাসী এটিকে হারুলিয়া দক্ষিণপাড়া পুরাতন জামে মসজিদ আবার গাইনের মসজিদ বলেও অবহিত করে থাকেন। গ্রামবাসী ক্ষোভ ও আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, গত ৮/১০ মাস পূর্বে রাতের আঁধারে কে বা কারা মসজিদের ভেতরে ঢুকে ফার্সিতে লেখাযুক্ত একটি বহু মূল্যবান ৬/৭ কেজি ওজনের কষ্টি পাথর চুরি করে নিয়ে যায়। তখনকার ইউএনও মোহাম্মদ রুহুল আমীন খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেই পাথরটি আজও উদ্ধার করা যায়নি। এদিকে অত্র ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি দিদারুল ইসলাম বলেন, এ মসজিদটি রাজা লক্ষণ সেনের শাসন আমলে নির্মিত হয়েছে। এলাকার প্রবীণ ক’জন জানান, মসজিদটি গাইন সম্প্রদারের লোকেরা নির্মাণ করে ছিলেন বলে এটিকে গাইনের মসজিদ বলা হয়। মসজিদটির সামনে রয়েছে বিশালকার জালিয়ার হাওর। তৎকালীন সময় দূর-দূরান্ত থেকে বর্ষাকালে নৌকা নিয়ে গাইন সম্প্রদায়ের লোকজন এ এলাকায় এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করতো। আশে-পাশের কোথাও মসজিদ না থাকায় নামাজ পড়ার সুবিধার্থে তারাই এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। কালের বিবর্তনে তারা চলে গেলেও রয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি। প্রতিষ্ঠাতা নিয়ে যত কথাই থাক না কেন, এলাকাবাসীর দাবি উপমহাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে দ্রুত মসজিদটির সংস্কার করতে হবে। এছাড়াও মসজিদের জায়গা সম্প্রসারণের জন্য সরকার তথা দানশীল ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিবর্গকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। তাহলেই ৮ শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ ধর্মীয় নিদর্শনটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। নইলে কালের আর্বতে হারিয়ে যাবে হারুলিয়া গ্রামের ঐতিহাসিক প্রাচীন এই জামে মসজিদটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেন্দুয়ায় আটশ’ বছরের প্রাচীন মসজিদ সংস্কারে উদ্যোগ নেই
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ