Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাইনবোর্ডের আড়ালে চলছে চিকিৎসা বাণিজ্য দেখার যেন কেউ নেই

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে

দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে এক ডজনের অধিক বেসরকারি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এই সব বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার নামে চলছে বাণিজ্য। জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে আশার প্রদীপ হয়ে মানুষের মনে যে প্রতিষ্ঠানটি অধিষ্টান তার নাম হাসপাতাল। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি অনেক নামিদামী বেসরকারি হাসপাতালও গড়ে উঠেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। এই ব্যয়ভার বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু লোক যাদের অর্থ, বিত্ত ও প্রাচুর্যের কমতি নেই সাধারণত তারাই এই সব হাসপাতালের শরণাপন্ন হয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের অসুখে-বিসুখে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোই একমাত্র ভরসা। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো দুপচাঁচিয়া উপজেলায় সরকারি ভাবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও এক ডজনের অধিক বেসরকারি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এগুলো হলো দুপচাঁচিয়া থানা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হাজেরা ক্লিনিক এন্ড মীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেইল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আরিফ ক্লিনিক এন্ড লাভলী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সবুজ ক্লিনিক, আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মীম ক্লিনিক এন্ড মনিরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, অনুপম হাসপাতাল, প্রাইম ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, খালেদা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, অনন্যা ডায়াগনস্টিক এন্ড জেনারেল হাসপাতাল, চেয়ারম্যান মার্কেটে মডার্ন হাসপাতাল, আক্কেলপুর রোর্ডে আছমা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তিসিগাড়ী এলাকা সংলগ্ন সুপ্রিম ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতাল এবং চৌমুহনী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তালুচ রোর্ড মায়া মমতা ক্লিনিক। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ক্লিনিকগুলোর সামনে বিভিন্ন অভিজ্ঞ ও ডিগ্রিপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাইনবোর্ড লটকানো রয়েছে। একই ডাক্তারের নামে প্রায় সকল ক্লিনিক ও হাসপাতালে সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে গিয়ে কোন এমবিবিএস ডাক্তার এমনকি সহকারী কোন ডাক্তারের দেখা মেলে নি। হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও ব্রাদারদের সাথে কথা বলে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চাইলে কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। অথচ সরকারি নিয়মানুসারে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকা বাধ্যতামূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা ডিজি অফিসে এই সব বেসরকারি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদনের জন্য আবেদনের সময় ডাক্তার রয়েছে বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয় এবং জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে তদন্ত কমিটি সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছে বলেও জানায়। সেই সাথে প্রয়োজনীয় কাঠামো উন্নত যন্ত্রপাতী ও প্রশিক্ষিত নার্স ব্রাদার এর বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়। নাম প্রকাশ না সত্ত্বে ক্লিনিকের দুই একজন ম্যানেজার জানান, উপজেলার প্রায় অধিকাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কোন এমবিবিএস ডাক্তার নেই। ডাক্তারের প্রয়োজন হলে তাদের মোবাইলে কল করলে ঐ সব ডাক্তাররা সরকারি কাজ ফেলে প্রাইভেটকার নিয়ে ক্লিনিকগুলোতে ছুটে আসেন। নির্ধারিত রোগীর চিকিৎসা কিংবা অপারেশন সেরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আবার কারযোগেই জেলা শহর কিংবা কোন উপজেলায় তার কর্মস্থলে ফিরে যান। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সব ক্লিনিক ও হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কর্মরত নার্স ব্রাদারদের অধিকাংশের কোন প্রশিক্ষণও নেই। অথচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিভিন্ন মুমূর্ষু রোগীসহ অপারেশনের রোগীগুলো এমবিবিএস ডাক্তারের অনুপস্থিতেই তারাই একমাত্র ভরসা। আবার উপজেলায় এই সব প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশিরভাগেই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। বছরের পর বছর ধরে ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একাধিকবার নোটিশ দেয়া হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মিলছে না কোন সাড়া। অথচ এই সব প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাইনবোর্ড টানিয়ে চিকিৎসা সেবা ও রোগ নির্নয়ের নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার ডাঃ অর্ধেন্দু দেব এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, উপজেলার হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো অনুমোদন আছে কি না ঠিক জানা নেই। তিনার একার পক্ষে সবকিছু তদারকি করা সম্ভব নয়। তবে বেসরকারি এই সব হাসাপাতাল ও ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করে অনুমোদন আছে কি না-তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এ দিকে উপজেলার অত্যাধুনিক দ্বিতল বাসা ভাড়া নিয়ে এই সব হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক মালিকরা চিকিৎসাসেবা দেয়ার নামে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন বাণিজ্য। বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বাজেটেও সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ রাখছেন। ঠিক তেমনি মুহূর্তে উপজেলায় চিকিৎসার নামে সদরে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা এই সব বেসরকারি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সেবার নামে চলছে বাণিজ্য। তা যেন দেখার কেউ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাইনবোর্ডের আড়ালে চলছে চিকিৎসা বাণিজ্য দেখার যেন কেউ নেই
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ