Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণতন্ত্র শেখ হাসিনার জন্য বেশি জরুরি

চট্টগ্রামে সুজন-এর গোলটেবিল বৈঠক

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দেশে শাসন প্রক্রিয়া ভেঙে পড়েছে। গণতন্ত্র নেই, রাজনীতি নেই। কার্যকর কোন রাজনৈতিক দলও নেই। এ অবস্থায় দেশ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তা যদি হয় তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে এক গোলটেবিল আলোচনায় আলোচকগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এমন এক ধরনের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও এর প্রতি দায়বদ্ধতা ফিরিয়ে আনা আওয়ামী লীগের জন্যই জরুরি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য তা আরও বেশি জরুরি। নিশিরাতে ভোটের পর জনগণের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে অভিযোগ করে তারা বলেন, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ভোটের অধিকার এখন ভুলুণ্ঠিত। রাজনৈতিক ভূমিকম্প ছাড়া দেশে কোন পরিবর্তন সম্ভব হবে না উল্লেখ করে তারা বলেন, এ ভূমিকম্প বলে কয়ে আসবে না। মৌলিক অধিকারগুলো ফিরে পেতে জনগণকে সংগঠিত এবং সোচ্চার হওয়ার কোন বিকল্প নেই। ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুজন, চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ গোলটেবিল বৈঠকে সুজন সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে কার্যকর কোন গণতন্ত্র নেই। ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। ভোট ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার কাঠামোও ভেঙে পড়েছে। শাসন প্রক্রিয়াও ভেঙে পড়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ছে। মানুষ সত্য কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন শেখ হাসিনা। তার পরের বছরই বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, দেশটা বাজিকরদের হাতে। তার সে কথায় সতর্কতা ছিল। কিন্তু তা আমলে নেয়নি সরকার। বরং তাকে উল্টো নানাভাবে হেনস্থা হতে হয়েছিল। ২০০৮ সালে নিশিরাতে নির্বাচনের পর গণতন্ত্রের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে গেছে। ‘রাজনীতির চাবি এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে। তার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি কি হবে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে’- ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানের লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, পরিণতি কি হতে পারে তা ভেবে আমরাও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের ইউজিসি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বলেন, গণতন্ত্র বলতে এখন আর কিছুই নেই। উন্নয়নের নামে অর্থের অপচয় হচ্ছে। বিদেশে পুঁজি পাচার হচ্ছে। আয় বৈষম্য বেড়েই চলেছে। দুর্নীতির প্রতি সরকারের জিরো টলারেন্স বাস্তবে কোন প্রভাব ফেলছে না। লুটেরা অর্থনীতির সাথে জড়িতরা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন। এ অবস্থার অবসানে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টেকসই হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও টেকসই হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সুজন-চট্টগ্রামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন। কিন্তু আমরা এখন এসব থেকে যোজন যোজন দূরে। দেশে আইনের শাসনের অভাব, কোথাও কোন জবাবদিহিতা নেই। এ অবস্থায় উন্নয়ন কখনও টেকসই হতে পারে না।

বিশিষ্ট রাজনীতি বিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইয়াহিয়া আকতার বলেন, দেশে রাজনীতি নেই। কার্যকর রাজনৈতিক দলও নেই। গণতন্ত্র এখন আইসিইউতে। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ফ্লাইওভার নির্মাণ কিংবা উন্নয়নের জন্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচন কাক চরিত্রের নির্বাচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকাল আটটার আগে ভোটের বাক্সের ক্ষিধে লাগার কথা নয়। অথচ ওইদিন ভোটের বাক্স সেহেরি খেয়ে নিয়েছে। নির্দলীয় সরকার ছাড়া শেখ হাসিনার পক্ষেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সর্বসম্মতভাবে এ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আর তা বাতিল করা হয়েছে একক সিদ্ধান্তে। নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা না হলে গণতন্ত্র আসবে না। দেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য দরকার রাজনৈতিক ভূমিকম্প। আর তা কখন আসবে কেউ বলতে পারবে না।

প্রফেসর হোসাইন কবির বলেন, সরকার আর রাজনীতি এখন বেদখল হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে এখন আর কিছুই নেই। পুলিশই সবকিছু করে দিচ্ছে। মানুষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। আদালত প্রাঙ্গণে কথা বলার সময় পুলিশ মানুষের মুখ চেপে ধরছে। মারা এবং মরে যাওয়ার মধ্যে এখন আর তফাৎ নেই।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট সালেহ আহমদ সিদ্দিকী বলেন, জনগণের পক্ষে এখন কেউ নেই। সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিরোধী দলকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জনগণ চরম অসহায়। কোন রাজনৈতিক দলে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই।

সুজন-চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ার, প্রফেসর রওশন চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন। গোলটেবিল বৈঠকে চলমান রাজনীতি, ভোটার ব্যবস্থা সংস্কারে ২০ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।



 

Show all comments
  • hhp ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ৫:২৬ এএম says : 0
    Our democracy must be constrained by Islam .............................
    Total Reply(0) Reply
  • আবেদ খান ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪৯ পিএম says : 0
    একদম ঠিক কথা বলেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫৪ পিএম says : 0
    দেশে রাজনীতি নেই। কার্যকর রাজনৈতিক দলও নেই। গণতন্ত্র এখন আইসিইউতে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুজন

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ