বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের পঞ্চভিত্তির মধ্যে হজ অন্যতম। এ হজ হিজরী নবম বর্ষে ফরজ হয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা:) সে বছর হজ করেননি, বরং পরবর্তী বছর অর্থাৎ দশম হিজরীতে হজ করেন, যা বিদায় হজ নামে খ্যাত। তবে তিনি নবম হিজরীতেই হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) কে ‘আমিরুল হজ’ এবং হযরত আলী (রা:) কে সূরা ‘তওবা’ এর আয়াতগুলো পাঠ করে শুনানোর জন্য প্রেরণ করেন। এ সম্পর্কে পূর্বের একটি লেখায় কিছু কথা বলা হয়েছে।
নবম সালের প্রথম হজটি ‘জিলকদ’ মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ‘জিলকদ’ মাসে নয়, অথচ হজ ‘জিলহজ’ মাসেই হওয়ার কথা, এ ব্যতিক্রমের কারণ কি? এবং হুজুর (সা:) কেন ঐ বছর হজ করলেন না, এ বিলম্বের কারণ খ্ুঁজতে গেলে আমাদেরকে কিছু পূর্বের কথা বলতে হয়।
হজ প্রথা জাহেলী যুগের কাফেরদের প্রবর্তিত হলেও তারা তার মূল, যা হযরত ইব্রাহীম (আ:) কর্তৃক প্রবর্তিত ছিল উহাকে এমনভাবে বিকৃত করেছিল যে, উহা অভদ্রতা ও অশ্লীলতার মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়ে পড়েছিল এবং তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের উৎস হিসেবই তারা হজ উৎসব পালন করত। তাছাড়া কাবাকে তারা মূর্তি পূজা তথা শির্ক-কুসংস্কারের আখড়া বানিয়ে রেখেছিল।
ফলে কাবা রূপান্তরিত হয়ে সাওয়াবের পরিবর্তে আজাবের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল, অথচ কাবা গৃহের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সেখানে এক আল্লাহর এবাদত করা, তাঁকে স্মরণ করা এবং তাঁর প্রতি একাগ্রচিত্তে আনুগত্য প্রকাশ করা- এ সবই ছিল কাবার প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শণ ও তার পবিত্রতা রক্ষার মৌলিক বিষয়। কিন্তু আরব বাসীরা সেগুলোর স্থলে হজ উপলক্ষে সমবেত হয়ে যা যা করত তার নমুনা নিম্নরূপ;
তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের বাপ, দাদা, পূর্ব পুরুষদের গর্ব গৌরব ও কীর্তিমালা একাশ করত, যার জন্য কোরআন এর আয়াত নাজেল হয়; “অতপর যখন তোমরা হজে¦র অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে, তখন আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করবে যেমন তোমরা তোমাদের পিতৃ পুরুষগণকে স্মরণ করতে অথবা তদপেক্ষা অভিনিবেশ সহকারে।” (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২০০)
কাবায় স্থাপিত ৩৬০ টি মূর্তির মধ্যে একটি প্রধান প্রতিমা ছিল ‘মানাত’। মদীনাবাসীদের প্রথা ছিল এ ‘মানাত’ এর ‘তাওয়াফ’ বা প্রদক্ষিণ করা। আর এই জন্য তারা যখন কাবার হজ করত, তখনো ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ এর তাওয়াফ করতো না। অথচ হজে¦র উদ্দেশ্যাবলীর মধ্যে একটি বড় উদ্দেশ্য এটাও ছিল যে, “হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর স্মৃতিগুলো জীবন্ত ও স্মরণীয় করে প্রতিষ্ঠিত রাখা। কেননা ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শণ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং; যে কেউ কাবা গৃহের হজ কিংবা উমরা সম্পন্ন করে এই দুইটর মধ্যে ‘সাঈ’ করলে তার কোন পাপ নেই।” (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৮)
আরো একটি নিকৃষ্ট প্রথা ছিল এই যে, যাদের কাছে সফরের পাথেয় থাকতনা তারা শূন্য হাতেই বের হয়ে পড়ত এবং বলত আমরা ‘তাওয়াক্কুল কারী’, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তাদের অধিকাংশই পথে ভিক্ষা করতে আরম্ভ করত এবং বন্ধু বান্ধবদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করত। এ ভিক্ষুকদের সম্পর্কে আল্লাহ আয়াত নাজেল করেন;
“এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা করো। আত্ম সংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়।” (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৭)
হজে¦র ‘এহরাম’ এ মাথা কামানো অথবা চুল ছাঁটা নিষিদ্ধ, কিন্তু জাহেলী যুগের লোকেরা এ নিয়মকে এতই কঠোর করে যে, কারো কারো মাথায় উকুন ভর্তি হয়ে যায়। ফলে দৃষ্টিশক্তি নষ্টের আশংকা দেখা দেয়। অথচ তারা ন্যাড়া মাথা হতে চাইত না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নির্দেশ দেন;
“তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয়, কিংবা মাথায় কেশ থাকে তবে সিয়াম কিংবা সাদকা অথবা কোরবানির দ্বারা তার ‘ফিদিয়া’ দেবে।” (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৬)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।