মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ব্রাজিল সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় অ্যামাজন জঙ্গলে আগুন জ্বলছে- এমন অভিযোগে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন পরিবেশবাদীরা। শুক্রবার প্যারিস, লন্ডন, মাদ্রিদ, বোগোতো ছাড়াও বিভিন্ন শহরের ব্রাজিল দ‚তাবাসের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে আগুন নেভাতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার মুখে শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রণে অ্যামাজনে সেনা মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন বলসোনারো। আমাজন বনাঞ্চলে চলতি বছরের রেকর্ড অগ্নিকান্ডকে ‘আন্তর্জাতিক সংকট’ বলে অভিহিত করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিষয়টি জি-৭ সম্মেলনের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছেন পরিবেশবিদসহ বিশ্লেষকরা। কী কারণে বছর বছর অ্যামাজনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তা খতিয়ে দেখেছেন তারা। তারা বলছেন, আর কিছুই নয় অবৈধ উপায়ে নজিরবিহীনভাবে সোনার খনির খোঁজ করাই অ্যামাজনে আগুন লাগার পেছনে দায়ি। নয় দেশে বিস্তৃত আমাজনের ২৪৫টি এলাকায় ২ হাজার ৩১২টি অবৈধ খনি রয়েছে বলে জানিয়েছে আমাজন সোশিও-এনভায়রনমেন্টাল। এসব খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলনের লোভে ও এর বাণিজ্য বিস্তারে আমাজন ঘিরে বেড়ে উঠেছে বহু সভ্য জনপদ। এভাবেই দিনে দিনে অবৈধ খনি বাণিজ্যের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে আমাজনের গহিন অরণ্য।
রেকর্ড গতিতে প্রতিদিন পুড়ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ খ্যাত অ্যামাজন জঙ্গল। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্স (আইএনপিই) বলছে, এ বছর জুন পর্যন্ত ব্রাজিলে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকান্ড হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি আগুনের ঘটনা অ্যামাজন জঙ্গলে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, অ্যামাজনকে বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করার সরকারি নীতির কারণেই আগুন লাগানোর মহোৎসব শুরু হয়েছে। অ্যামাজনে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সেলিব্রেটিরাও আগুন নিয়ে ব্রাজিল সরকারের সমালোচনা শুরু করেন। শুক্রবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ব্রাজিল দূতাবাসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শত শত পরিবেশবাদী। ইয়োথ ফর ক্লাইমেট নামে একটি গ্রুপ এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। ‘অ্যামাজনের জন্য প্রার্থনা’, ‘অ্যামাজন থাকুক, বলসোনারো সরে যাও’, ‘বন ছাড়া আমরা ধ্বংস হবো’সহ নানা ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। অনেক বিক্ষোভকারী রক্তের আদলে রং মেখে বিক্ষোভে অংশ নেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয় ওই বিক্ষোভ থেকে।
এদিকে, ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গলকে বাঁচাতে বিমান থেকে পানি ঢালার উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া। তিন সপ্তাহ ধরে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ খ্যাত জঙ্গলটিতে জ্বলতে থাকা আগুনে ইতোমধ্যেই পুড়ে গেছে সাত হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। আগুন নিয়ন্ত্রণে তাই সুপারট্যাংকার বোয়িং বিমান ৭৪৭-৪০০ ভাড়া করার ঘোষণা দিয়েছে বলিভিয়া। আগুন নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার থেকেই আকাশপথে ওই সুপারট্যাংকার নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে। বলিভিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট আলভারো গার্সিয়া জানিয়েছেন, দেড় লাখ লিটার পানি বা অগ্নি নির্বাপক নিয়ে উড্ডয়নে সক্ষম এই সুপারট্যাংকার বোয়িং বিমান। এই বিমান থেকে পুড়তে থাকা অ্যামাজনে পানি ঢালা হবে। তার আগে বিমানবাহিনীর বিমান গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে আসবে। এরপরই পানি নিয়ে উড়াল দেবে সুপার ট্যাংকার বোয়িং বিমান। সুপার ট্যাংকারটির সঙ্গে রয়েছে তিনটি অতিরিক্ত হেলিকপ্টার। রয়েছেন ৫০০ অগ্নিনির্বাপণকর্মী। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে অ্যামাজন জঙ্গলে নেমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করবেন তারা। প্রতিবেশী প্যারাগুয়ে ও ব্রাজিলের প্রতিও সীমান্তে আগুন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বলিভিয়া। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎপত্তি অ্যামাজনে। গবেষকদের মতে এই বন প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। সে কারণে একে ডাকা হয়ে থাকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হারকে ধীর করতে অ্যামাজনের ভ‚মিকাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বিশ্বের দীর্ঘতম এ জঙ্গলটির আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তনের প্রায় অর্ধেক। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্স ২০১৩ সাল থেকে অ্যামাজন জঙ্গলে আগুন লাগা নিয়ে গবেষণা করছে।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে রেকর্ড হারে পুড়ছে অ্যামাজন জঙ্গল। এরইমধ্যে ব্রাজিলের রোন্ডানিয়া, অ্যামাজোনাস, পারা, মাতো গ্রোসো অঞ্চলের কিছু অংশে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। অ্যামাজনে আগুন লাগা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, কিন্তু এবারের মতো আগুন আগে কখনও ছড়ায়নি জঙ্গলে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, অ্যামাজনকে বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করার সরকারি নীতির কারণেই আগুন লাগানোর মহোৎসব শুরু হয়েছে। অঞ্চলটিকে ঘিরে করা কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কথিত উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য কৃষির বিস্তৃতি, বৈধ ও অবৈধ খনি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য ঘটছে অরণ্য বিনাশ। গড়ে উঠছে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগত প্রকল্প। গত কয়েক দিনের আগুন কথিত উন্নয়নের জন্য অরণ্য বিনাশের গতিকেই জোরদার করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স, গ্লোবাল রিসার্চ, বিবিসি, আল-জাজিরা, স্পুটনিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।