পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান একটি এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী ভবন কখনো কখনো ওই সব এলাকার মানুষের জন্য অভিশাপও বয়ে আনে। সবসময় রোগী থেকে শুরু করে চিকিৎসক-নার্স আতঙ্কে থাকেন কখন দেয়াল ধসে পড়ে। সরকারি পর্যায়ে সারদেশে ১৫ থেকে ১৬ হাজার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ভবন রয়েছে। এসব ভবনের মধ্যে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বেশকিছু ভবন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী। দ্রæত সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ না করলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম হয়তো বন্ধ করে দিতে হবে। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়েনর সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি আগস্টের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের তথ্য পাঠানোর কথা। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রীর কাছে প্রদান করার কথা রয়েছে। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।
জানা গেছে, গত ১২ জুন সকালে নোয়াখালী সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তার খসে আট শিশুসহ ১০ জন আহত হন। এর আগেও ২০১৮ সালের ১২ জুলাই হাসপাতালটির পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ওয়ার্ডের ছাদ ধসে দুই নার্স আহত হন। অথচ ২০১৫ সালে নোয়াখালীর গণপূর্ত বিভাগ নোয়াখালী সদর হাসপাতালের তিনটি ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কিন্তু থেমে থাকেনি চিকিৎসা কার্যক্রম। এখনো সেই পরিত্যক্ত ভবনেই পরিচালিত হচ্ছিল শিশু ওয়ার্ডসহ আরো কয়েকটি ওয়ার্ড। ২০০৮ সালে থেকে এই শিশু ওয়ার্ডের ছাদ খসে পড়া শুরু হয়। তবুও ঝুঁকি নিয়ে এখানেই কাজ করছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। নিয়মিত সেবা নিতে আসেন রোগীরাও। এই দুর্ঘটনার পরই মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যদিও শুধু হাসপাতালই নয়; এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী ভবন দেশের বিভিন্নাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। গত ৬ এপ্রিল বরগুনার তালতলীতে পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ছাদের ভিম ধসে পড়ে মানসুরা নামে তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রী নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হন আরও ৯ জন। বরিশালের উজিরপুর থানার পঁশ্চিম শোলক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন গণপূর্ত বিভাগ ২০১৪ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এখনো শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই আতঙ্কে থাকেন কখন ভবন ধসে পড়ে। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ধসে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই প্রক্রিয়ায় শুধু ঝুকিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ভবনই নয়, একইসঙ্গে ঝুঁকি নেই তবে সম্প্রাসরণযোগ্য (উপরের দিকে) সে সব ভবনের তালিকা, মেরামতযোগ্য ভবনের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্মান হয়েছে কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে না তার কারণ অনুসন্ধান, এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় জনবল, সরঞ্জামাদি ইত্যাদি নিরূপণ করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ নির্দেশনা দিয়েছেন। এই তালিকার প্রণয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বড় একটি প্রকল্প গ্রহণ করবে। যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্য সেক্টরকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, গত ৩০ জুন ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি হাসপাতালের তালিকা তৈরির জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি) মোহাম্মদ শাহাদত হোসেনকে আহŸায়ক এবং সহকারি সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে (সিবিএমই) সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেনÑ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. আবু রায়হান মিঞা, গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী (পিপিসি) মো. মাহফুজুল আলম এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাইয়ুম খান। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে তালিকাসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সহকারী সচিব মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি) মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন বলেন, এখনো সম্পূর্ণ তালিকা হাতে আসেনি। একটি আংশিক তালিকা আমরা পেয়েছি। পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন না হলে এ সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না।
চিঠিতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতরের সহযোগিতায় সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ ও মেরামতযোগ্য ভবনে নির্ভরযোগ্য বাস্তবভিত্তিক একটি তালিকা প্রস্তুতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে এবং বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে বিভাগীয় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সংযুক্ত ছক অনুযায়ী অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা প্রণয়নে তথ্য সংগ্রহের অনুরোধ করা হয়।
নির্দেশনায় তথ্য সংগ্রহে সেবা প্রতিষ্ঠানের হাসপাতালে ঝুঁকিপূর্ণ মেরামতযোগ্য ও উলম্বভাবে সম্প্র্রসারণযোগ্য ভবন সরেজমিন পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে। পরিদর্শনের পর অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন, ভবন ও প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রত্যয়নপত্র তালিকার সঙ্গে দাখিল ও ইতোমধ্যে নির্মিত কিন্তু হস্তান্তরের অপেক্ষায় থাকা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালসমূহ চালুর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রস্তাব পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে বিভাগীয় পরিচালক বিভাগীয় শহরের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের হাসপাতালে অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা প্রেরণ নিশ্চিত করবেন বলে নির্দেশে বলা হয়। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে আসতে শুরু করেছে।
গণপূর্ত অধিফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী (পিপিসি) মো. মাহফুজুল আলম বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান /হাসপাতালের মধ্যে ১০০ শয্যা বা তার ওপরের অবকাঠামো ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহের নির্মাণ/মেরামত/অকেজো ঘোষণা এসব কার্যক্রম গণপূর্ত বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত। আমরা এ ধরণের প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। মাঠ পর্যায়ের সব তথ্য আসার পরেই আমাদের কাজ শুরু হবে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাইয়ুম খান বলেছেন, ৫০ শয্যা, ২০ শয্যা, ১০ শয্যা এবং ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ/মেরামত/অকেজো ঘোষণা এসব কার্যক্রম স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর করছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. আবু রায়হান মিঞা বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তালিকার সঠিক তথ্য অনেকটা মাঠপর্যায়ের উপর নির্ভর করে। তাই মাঠ পর্যায়ে কাজগুলো নিখুঁতভাবে তদারকি করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।