Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় পোশাকে কুমিল্লার ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ

প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার বড় মাপের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালানিতে কম করে হলেও ৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় কাপড়ের স্থানীয় চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রোজা শুরুর অন্তত মাসখানেক আগ থেকে চোরাকারবারিদের হাত হয়ে সীমান্ত পথে আনা ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও শিশুদের পোশাকে সয়লাব হয়ে উঠেছে কুমিল্লার বড় বড় কাপড়ের দোকান ও বিপণী বিতানগুলো। ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস চোরাচালান বাণিজ্যের মুনাফা লুফে নিতে কুমিল্লার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ফলে দেশীয় টেক্সটাইল ও ব্র্যান্ডের শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি ও শিশু পোশাকের ক্রেতা হ্রাসের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কুমিল্লার ৫টি উপজেলার ৭৪ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আশাবাড়ি, নয়নপুর, বুড়িচং উপজেলার চড়ানল, বারেশ্বর, সংকুচাইল, রাজাপুর, আদর্শ সদর উপজেলার শিবের বাজার, গোলাবাড়ি, সাহাপুর, বিবির বাজার, সাহাপাড়া, সদর দক্ষিণ উপজেলার একবালিয়া, তালপট্টি, সুবর্ণপুর, চৌয়ারা, যশপুর, বৌয়ারা, শ্রীপুর, কনেশতলা, দড়িবটগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গোমারবাড়ি, আমানগÐা, ছফুয়া, জগন্নাথদিঘি, গোলপাশা, বসন্তপুর, সাতবাড়িয়া, কাইচ্ছুটি ও পদুয়া সীমান্ত পথে বিজিবি’র টহল ও নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে প্রতিদিন কোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, থানকাপড় কুমিল্লায় প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে কুমিল্লার কাপড় দোকানগুলোর ৭৫ ভাগই ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও শিশু পোশাকের দখলে চলে গেছে।
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ের সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক মার্কেট, সাইবার ট্রেড, ময়নামতি গোল্ডেন টাওয়ার, লাকসাম সড়কের কুমিল্লা টাওয়ার, রেইসকোর্সের ইস্টার্ণ ইয়াকুব প্লাজা, পদুয়ার বাজারে হোয়াইট হাউজ, ক্যান্টনমেন্ট সুপার মার্কেটসহ রাজগঞ্জ, মনোহরপুর ও কান্দিরপাড়ের অধিকাংশ কাপড়ের দোকানগুলো ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস ও অন্যান্য পণ্যে সয়লাব হয়ে উঠেছে। মার্কেটের দোকানগুলোতে মহিলাদের কাপড়ের মধ্যে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা ও টপস চোরাচালানির মাধ্যমে দ্বিগুণ পরিমাণ স্থান পেয়েছে। আর পুরুষদের ভারতীয় শার্ট, জিন্স, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবি, শেরোয়ানি এবং শিশুদের পোশাকের পাশাপাশি থান ও কাটা কাপড়ে দোকানগুলো সয়লাব হয়ে গেছে। রোজা শুরুর এক মাস আগ থেকেই কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পোশাকের বড় বড় চালান চোরাচালানের মাধ্যমে আনা শুরু করে। রোজার প্রায় ১০/১৫টা পর্যন্ত ভারতীয় পোশাকের চোরাচালান অব্যাহত থাকে। রোজার সময়ে বিশেষ করে ইফতারের আগ মুহূর্তে ও তারাবি নামাজ শুরুর পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিএনজি, মিনি পিকআপযোগে বড় মার্কেটগুলোতে এবং রাজগঞ্জ ও মনোহরপুর এলাকার কিছু কাপড় দোকানে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিসের ছোট ছোট চালান কয়েক ধাপে আসতে শুরু করে। প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পোশাক চোরাচালানে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে থাকে। এবারে কমপক্ষে ৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এখানকার ব্যবসায়ীরা।
কুমিল্লার ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকেই বলেন, ‘ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বিক্রেতারাই সৃষ্টি করছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশীয় পণ্যের ক্রেতা নষ্ট করতেই ঈদ এলেই ভারতীয় পোশাকের জন্য চোরাচালানিতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে থাকে। অথচ এ টাকা দেশে বিনিয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ভারতের চেয়েও উন্নতমানের এবং নজরকাড়া ডিজাইনের শাড়ি, থ্রিপিস, প্যান্ট-শার্ট পিস, পাঞ্জাবিসহ তৈরি পোশাক এখানে রয়েছে। কিন্তু বিক্রেতারা বেশি মুনাফার লোভে দেশীয় পণ্যের বাজার ধ্বংস করছে। সর্বোপরি, বিক্রেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই ভারতীয় কাপড়ের দিক থেকে ক্রেতাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে পারে।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতীয় পোশাকে কুমিল্লার ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ