Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিগন্যালম্যান ছুটিতে অতঃপর...

দুর্ঘটনা ঘটলে টনক নড়ে

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কথায় আছে কুকুরের লেজ নাকি ঘি মাখিয়ে টানলেও কখনও সোজা হয় না। তেমনি আমাদের দেশে অনিয়মকে শত কড়াকড়ি ও কঠোর হলেও নিয়মের মধ্যে বেঁধে রাখা যায় না। তারই উজ্জল দৃষ্টান্ত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও কামারখন্দ উপজেলার রেলক্রসিং এর দু’দুটি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হলেও সমস্যা যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বিভিন্ন রক্ষিত-অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বা ট্রেনে কাটা পড়ে বারবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এরপরও সতর্ক হচ্ছেন না সিগন্যালের দায়িত্বে থাকা রেল বিভাগের কর্মচারীরা। গত ১৫ জুলাই ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথের উল্লাপাড়ার সলপ স্টেশনের অদূরে রেলক্রসিংয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় বর-কনেসহ মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হন। এর আগে ঝাঐল ওভারব্রিজের কাছে শাহবাজপুরে ট্রেনের ধাক্কায় গরুবোঝাই নসিমনে থাকা ৪ গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। এছাড়া বিভিন্ন সময় মুলিবাড়ীতে অনেক পথচারী ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলেও সতর্ক হচ্ছেন না রেলওয়ে বিভাগ।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে মুলিবাড়ী রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে ৩ জন স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন। এরা হলেন-হিরামন দাস, মোজাম্মেল হক ও আশরাফ উদ্দিন। কিন্তু তারা প্রায়ই কর্মস্থলে থাকেন না। নানা অজুহাতে প্রায়ই তারা শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল কাদেরকে মুলিবাড়ী সিগন্যালের দায়িত্বে রেখে ডিউটি ফাঁকি দেন।

গত ১৪ আগস্ট সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী বনলতা ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার আগে মুলিবাড়ী রেলক্রসিং অতিক্রম করছে। ট্রেনটি আসার আগে শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল কাদের হাতে সবুজ পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এর আগে তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে সিগন্যালের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দুটি ব্যারিয়ার নামান। এরপর সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেনটি পার করিয়ে দেন। এ বিষয়ে আবদুল কাদের বলেন, ‹হিরামন দাস অসুস্থ হওয়ায় তার পরিবর্তে আগের মতোই দায়িত্ব পালন করছি। আজ শুধু নয়, কেউ না থাকলে তার পরিবর্তে আমিই দায়িত্ব পালন করি। বিনিময়ে তারা প্রতিদিন আমাকে এক থেকে দেড়শ টাকা দেয়। স্থানীয় কয়েকজন চা ও মুদি দোকানি বলেন, শুধু হিরামন দাস নন, এখানকার সবাই ফাঁকি দেন। আবদুল কাদের না থাকলে কী যে হতো। তারা আরও জানান, ১০০-১৫০ টাকা বকশিশ দিলেই দিন-রাতে যে কোনো সময় আবদুল কাদের দায়িত্ব পালন করেন।

এ ব্যাপারে মুলিবাড়ী রেলক্রসিংয়ের সিগন্যালের দায়িত্বে থাকা হিরামন দাস বলেন, আমি হার্টের রোগী। মাঝে মধ্যে অসুস্থ হলে তখন কাদেরকে দায়িত্ব দেই। আর মাত্র চারবছর চাকরি আছে। তবে শুধু আমি একা নই, অন্য সহকর্মীরাও কাদেরের ওপর নির্ভর করেন।
সিরাজগঞ্জ জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন মজুমদার বলেন, মুলিবাড়ী রেলক্রসিংয়ে প্রায়ই প্রাণহানি ঘটছে। পথচারী ও অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকজন সেখানে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছেন। এ জন্য দায়িত্বরত সিগন্যাল ম্যানদের আরও বেশি তৎপর হওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ পাকশীর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, রেলক্রসিংয়ের সিগন্যালে থাকা কর্মচারীদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপ‚র্ণ। তাদের ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিগন্যালম্যান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ