বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রামে তৈরী হচ্ছে ভেজাল মদ। স্পিরিট, রাসায়নিক পদার্থ, রঙ, সুগন্ধী, কোকাকোলা জাতীয় পানীয় ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তৈরি মদ বিক্রি হচ্ছে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে। এসব ভেজাল মদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি নগরীতে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত টানা অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে ভেজাল মদ তৈরি ও বিক্রির সাথে জড়িত চক্রের পাঁচ সদস্যকে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশ জানায়, অনুমোদিত বিভিন্ন বার ও ক্লাব থেকে বিদেশি মদের খালি বোতল সংগ্রহ করে ভেজাল মদ ঢুকিয়ে নতুন লেভেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় প্রতি বোতল ভেজাল মদ তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকায়। এসব ভেজাল মদ শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করছে। গত ১৩ আগস্ট রাতে নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনির মালিপাড়ায় মদপানে তিন জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- বিশ্বজিৎ মল্লিক, শাওন মজুমদার জুয়েল ও মিল্টন গোমেজ। এছাড়া অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন উজ্জ্বল বণিক নামে একজন।
এই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ভেজাল মদ তৈরির সাথে জড়িত চক্রের সন্ধান পায়। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুল ইসলাম জানান, চার জন একসঙ্গে বসে মদপান করেছিল। তাদের মধ্যে তিন জন প্রায় কাছাকাছি সময়ে মারা যায়। অসুস্থ উজ্জ্বলের দেওয়া তথ্যমতে মদের উৎসের সন্ধান শুরু করে পুলিশ। আর তদন্তে এই চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসে।
গ্রেফতার পাঁচ জন হলেন- মো. নাছিম উদ্দিন (২৩), মো. ইকরামুল হক (৩২), স্বপন পাল (৫১), মো. ইমরান ফয়সাল (২১) এবং জাহেদুর রহমান আরজু (৩০)। তাদের কাছ থেকে স্পিরিট, নকল লেভেল, ভেজাল মদ তৈরির বিভিন্ন উপকরণ, বোতলের কর্ক জব্দ করা হয়েছে। আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মালিপাড়ার ওই চার যুবক নাছিম নামে একজনের কাছ থেকে মদ কিনেছিল। নাছিমের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে সে এলাকায় নেই। পাঁচ দিন পর এলাকায় ফিরে সে আবারও মদ সরবরাহ শুরু করে।
তাকে বিদেশি ব্র্যান্ডের লেভেল লাগানো একটি মদের বোতলসহ আটক করি। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বাকি চার জনকে আটক করা হয়। ওসি বলেন, এই চক্রের আরও পাঁচ-ছয় জনের নাম পেয়েছি। তারা স্পিরিট, তিন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, কোকাকোলা, রঙ, মদের ফ্লেভার আর ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মদ তৈরি করে। এই মদ শরীরে মারাত্মক বিষক্রিয়া তৈরি করে।
গ্রেফতার ইকরামুল নগরীর লালদিঘীর পাড়ের পুরাতন গির্জা এলাকায় ইকরা হোমিও ফার্মেসির মালিক। জিজ্ঞাসাবাদে নাছিম জানিয়েছে, সে ও তার এক আত্মীয় মিলে ইকরা থেকে স্পিরিট সংগ্রহ করে। ইকরামুলকে ৪২ লিটার স্পিরিটসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার স্বপন পাল নগরীর হাজারী গলির মুখে বিএস হোমিও সেন্টারের মালিক। তার কাছ থেকেও স্পিরিট কেনে ভেজাল মদ প্রস্তুতকারকরা। গ্রেফতার ইমরান ফয়সাল নগরীর নজির আহমদ চৌধুরী রোডের বন্দর প্রোডাক্টস নামে একটি প্রেসের মালিক। জাহেদুর রহমান আরজু নগরীর পাহাড়তলী এলাকার সাগরিকা প্রেসের মালিক। তারা নকল লেভেল তৈরি করে সরবরাহ করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাছিম জানিয়েছে, সে চার বছর ধরে ভেজাল মদ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। বাসায় বসে ভেজাল মদ তৈরি করে তারা। নাছিম ও তার এক আত্মীয় ক্রেতাদের কাছে অভিজাত ক্লাব-বারের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। ক্রেতারা জানেন, নাছিমকে অর্ডার দিলে তারা বিদেশি মদ ক্লাব-বার থেকে বের করে আনতে পারেন। সেজন্য তারা প্রচুর অর্ডার পায় এবং ক্রেতাদের কাছে ভেজাল মদ সরবরাহ করে। বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ ভেবে কিনে ক্রেতারা প্রতারিত হন। আটক পাঁচ জনকে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।