বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হজের মওসুম শেষ হয়েছে। আল্লাহর বান্দাগণ দেশে ফিরে আসছেন। একটি ভূখন্ডের জন্য এটা খুবই বরকতের বিষয় যে, এখান থেকে আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর ঘরের দিকে যান, এরপর আল্লাহর বিধান পালন করে সেই ভূখন্ডে প্রত্যাবর্তন করেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি জানত তাদের ওপর হজ আদায়কারীদের কী হক, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসে, তাহলে তারা তাদের সওয়ারিগুলোকেও চুমু খেত! এরা তো সকল মানুষের মাঝে আল্লাহর প্রতিনিধিদল।’ -শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৮/৫৩।
হজ আদায়ের সূত্রে আল্লাহর সাথে বান্দার এই যে নিসবত এবং এ নিসবতের এই যে মর্যাদা, তা যেমন অন্যদের উপলব্ধির বিষয়, তেমনি যাদের হজের মতো মর্যাদাবান ইবাদত আদায়ের সৌভাগ্য হয়েছে তাদেরও উপলব্ধির বিষয়। এই মহা নিসবতের মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারলেই তো তা রক্ষা করার ব্যাপারে যত্মবান হওয়া যাবে।
জীবনের কোনো কাজকেই হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। মনুষ্যজীবনের কোনো কিছুই হালকা নয়। কারণ তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এবং সেই মুহূর্তের কাজের বিষয়ে জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ আছে। জীবনের কাজগুলো ভালো হোক বা মন্দ, কিছুতেই গুরুত্বহীন নয়; যে কোনো মানুষের ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি সত্য এবং মানুষমাত্রেরই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
এরপর যাদের আল্লাহ ঈমানের মতো মহা নিয়ামত দান করেছেন, যাদের বুকের ভিতর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ঐশী প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছেন তাদের কাছে তো জীবন ও কর্মের মূল্য একেবারেই স্পষ্ট। জীবনের কোনো কথা ও কাজই যে গুরুত্বহীন নয়, প্রতিটি কথা ও কাজের সাথেই যে রয়েছে শেষ পরিণামের ভালো-মন্দের গভীর সম্পর্ক- এ হাকিকত তো তাদের কাছে মোটেই অস্পষ্ট থাকে না। তাদের বিশ্বাস- যে যাররা পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখবে আর যে যাররা পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সে তা দেখবে। তাহলে জীবনের কাজকর্ম কিভাবে অবহেলাযোগ্য হতে পারে?
মুমিন তো বিশ্বাস করে, প্রত্যেকের জন্য বিশ্বাস ও কর্মের ঐ পথটিই সহজ করে দেয়া হয়, যে পথের শেষ পরিণামের জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজেই সে যখন পুণ্য ও ভালোর পথে চলার তাওফিকপ্রাপ্ত হয় তখন তার মনে উত্তম পরিণামের প্রত্যাশা জন্ম নেয়। তার মন আনন্দে ভরে ওঠে এবং এই পথে অটল থাকার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে।
পক্ষান্তরে যখন পাপ ও মন্দের পথে চলে তখন তার মনে অশুভ পরিণামের আশঙ্কা জাগে এবং দ্রুত সে ওই পথ থেকে ফিরে আসে এবং ভালোর পথে চলা শুরু করে। আশা ও ভয়ের মাঝে আশার পাল্লা ভারী করার চেষ্টা মুমিনের কাজকর্মের নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক হয়ে দাঁড়ায়।
কাজেই কোনো ভালো কাজের তাওফিক হলে সেটার গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করা এবং সেই মর্যাদা ও গুরুত্ব রক্ষা করা অতি প্রয়োজন। ছোট-বড় সকল ভালো কাজের ব্যাপারেই এ কথা। হজ তো বড় কাজগুলোর মধ্যেও ওপরের দিকের বড় কাজ। এটি একটি ফরজ আমল, ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন। কাজেই এই আমলের মর্যাদা রক্ষা করার চেষ্টা অবশ্যকর্তব্য।
হজ এবং অন্যান্য ইবাদত ও নেক আমলের মর্যাদা রক্ষার সাধারণ উপায় হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও ইতায়াতের পথে অবিচল থাকা। নিজের বিশ্বাস ও কর্মের মুহাসাবা করে ত্রুটিগুলো সংশোধনের চেষ্টা করা। বর্তমান দ্বীনদারি রক্ষা করা এবং প্রতিদিন কিছু পরিমাণে হলেও উন্নতির চেষ্টা করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।